ঢাকা ০৫:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
দশদিন পর আবারো ঘুমধুম সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ, কি হচ্ছে ওপারে? টেকনাফে এসে অপহরণের শিকার সেন্টমার্টিনের যুবক: ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি স্বাধীনতাবিরোধী ও সরকারসৃষ্ট দল দুটি পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়: হাফিজ উদ্দিন বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ জলসীমানায় মাসব্যাপী জরিপ করবে নরওয়ে জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপর প্রাধান্য দিলে ‘খারাপ নজির’ সৃষ্টি হবে: সালাহউদ্দিন আহমেদ দেশের মানুষ এখন সেনাসদস্যদের দিকে তাকিয়ে আছে: সেনাপ্রধান যুবকের জরিমানাসহ ৭ বছরের কারাদণ্ড বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশি অংশে জরিপে নামছে নরওয়ের গবেষণা জাহাজ আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন করতে ৪ মিলিয়ন ইউরো দেবে ইইউ বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হলেন ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন, এরপর আমরা বিদায় নেব : আসিফ নজরুল তিস্তা প্রকল্পে চীনা ঋণ নিতে চায় সরকার, চেয়েছে ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ছাত্ররাজনীতিতে পরিবর্তন চান শিক্ষার্থীরা ১৮ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধন ইনানীতে আত্মপ্রকাশ করলো শফির বিল জেলে কল্যাণ সমিতি

বনের ভেতর বনবিভাগের সহায়তায় দালান-কোঠা, বিপর্যস্ত পরিবেশ

বনের রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় অবর্তীণ হয়েছে হিমছড়ি বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। অভিযোগ পাওয়া গেছে এই কাজের সঙ্গে জড়িত ফরেস্টার থেকে নিরাপত্তা রক্ষীরাও। আর এতে করে হিমছড়ি ও পেঁচার দ্বীপ এলাকাটি পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, বন টহল ফাঁড়ির ফরেস্টার মো. কামরুজ্জামান শোভন ও মো. তানভীর আলম, এফজি নাজমুল হাছান ও বাগান মালি মো. সোহেল আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে হিমছড়ি উদ্যানের গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত।

জানা গেছে, তারা নিজেরাই লোক পাঠিয়ে রাতের অন্ধকারে কেটে নিচ্ছে বনের গাছ। সামান্য টাকায় বিক্রি করে দিচ্ছে এই অমূল্য সম্পদ। সেইসঙ্গে গাছ কেটে জমি ফাঁকা করে অর্থের বিনিময়ে সেই জমিতে অবৈধভাবে মানুষের বসতি গড়ে তোলার অনুমতি দিচ্ছে। বনের জমির ভেতর পাকা দালানের অনুমতি না থাকলেও বনবিভাগের সহযোগিতায় নির্মাণ করা হচ্ছে ঘর-বাড়ি ও পাকা দালান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জঙ্গল গোয়ালিয়া পালং বিএস ২ নং খতিয়ানের বিএস ১৯ নং দাগের শ্রেণী পাহাড় রির্জাভ ফরেস্টের জমিতে দক্ষিণ পেঁচারদ্বীপ গ্ৰামের হেডম্যান হিসেবে কর্মরত সাগর আলি বিল্ডিং তৈরি করেছেন। সেই বিল্ডিং-এ তিনি বাসা ভাড়া দিয়েছেন। অন্যদিকে জঙ্গল ধোয়া পালং মৌজায় বিএস ২ নং খতিয়ানের বিএস, ২১ নং দাগে শ্রেনী পাহাড়ে মোঃ হাসেমের ছেলে মোহাম্মদ ইসমাইল বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন। হারুন গং দুই তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং তৈরি করেছেন। হুমায়ন নামে একজনের মালিকানা ৫ তলা একটি রিসোর্ট রয়েছে। এই রিসোর্ট থেকে আয় হচ্ছে লাখো কোটি টাকা। মেরিন ড্রাইভ রোডের পূর্ব পাশে জঙ্গল খুনিয়া পালং মোজার বিএস ২ নং খতিয়ানের শ্রেণী পাহাড় রির্জাভ ফরেস্টের বিএস ৪৩ নং দাগে বিল্ডিং নির্মাণ করে ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের বন রক্ষকরাই বনের গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। তবে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এভাবে গাছ কাটা অব্যাহত থাকলে ওই এালাকর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ইকো সিস্টেম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় জানান, রাতের আঁধারে গাছগুলো কেটে নিয়ে যায়। এফজি নাজমুল হাছান ও বাগান মালি মো. সোহেল আহমেদ সরাসরি জড়িত এই কাজে। তারা কাজ করেন ফরেস্টার মো. কামরুজ্জামান শোভন ও মো. তানভীর আলমের নির্দেশনাক্রমে কাজ করে। আমরাও যেহেতু খাস জমিতে বসবাস করি আমাদের নাম জানলে অনেক হয়রানি করবে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ফরেস্টার মো. কামরুজ্জামান শোভন বলেন, আমি হিমছড়ি বিটের দায়িত্বে আছি। এগুলো আমার এলাকায় পড়েনি। এটা খুনিয়াপালং বিটে পড়েছে। আর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা।

খুনিয়াপালং বিটের ফরেস্টার মো. তানভীর আলমের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়গুলো নিয়ে জানতে চাইলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও সাড়া দেননি।

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানকে রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারকে এই মূহূর্তেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম বলেন, বন বিভাগের কর্মকর্তারা বন রক্ষা না করে ভক্ষণ করার কাজে ব্যস্ত। বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব কুকর্মের সাথে জড়িত। বন বিভাগের গাফেলতির কারণে কক্সবাজারের বনভূমি দিনদিন কমে যাচ্ছে। তারা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে সচেতন না। তারা কিভাবে বনের জমি এবং গাছ বিক্রি করে নগদ টাকা কামানো যায় এগুলো নিয়ে ব্যস্ত। এদের উপর রাষ্ট্র, এডমিনিস্ট্রেশন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

দশদিন পর আবারো ঘুমধুম সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ, কি হচ্ছে ওপারে?

This will close in 6 seconds

বনের ভেতর বনবিভাগের সহায়তায় দালান-কোঠা, বিপর্যস্ত পরিবেশ

আপডেট সময় : ১০:৩৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

বনের রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় অবর্তীণ হয়েছে হিমছড়ি বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। অভিযোগ পাওয়া গেছে এই কাজের সঙ্গে জড়িত ফরেস্টার থেকে নিরাপত্তা রক্ষীরাও। আর এতে করে হিমছড়ি ও পেঁচার দ্বীপ এলাকাটি পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, বন টহল ফাঁড়ির ফরেস্টার মো. কামরুজ্জামান শোভন ও মো. তানভীর আলম, এফজি নাজমুল হাছান ও বাগান মালি মো. সোহেল আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে হিমছড়ি উদ্যানের গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত।

জানা গেছে, তারা নিজেরাই লোক পাঠিয়ে রাতের অন্ধকারে কেটে নিচ্ছে বনের গাছ। সামান্য টাকায় বিক্রি করে দিচ্ছে এই অমূল্য সম্পদ। সেইসঙ্গে গাছ কেটে জমি ফাঁকা করে অর্থের বিনিময়ে সেই জমিতে অবৈধভাবে মানুষের বসতি গড়ে তোলার অনুমতি দিচ্ছে। বনের জমির ভেতর পাকা দালানের অনুমতি না থাকলেও বনবিভাগের সহযোগিতায় নির্মাণ করা হচ্ছে ঘর-বাড়ি ও পাকা দালান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জঙ্গল গোয়ালিয়া পালং বিএস ২ নং খতিয়ানের বিএস ১৯ নং দাগের শ্রেণী পাহাড় রির্জাভ ফরেস্টের জমিতে দক্ষিণ পেঁচারদ্বীপ গ্ৰামের হেডম্যান হিসেবে কর্মরত সাগর আলি বিল্ডিং তৈরি করেছেন। সেই বিল্ডিং-এ তিনি বাসা ভাড়া দিয়েছেন। অন্যদিকে জঙ্গল ধোয়া পালং মৌজায় বিএস ২ নং খতিয়ানের বিএস, ২১ নং দাগে শ্রেনী পাহাড়ে মোঃ হাসেমের ছেলে মোহাম্মদ ইসমাইল বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন। হারুন গং দুই তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং তৈরি করেছেন। হুমায়ন নামে একজনের মালিকানা ৫ তলা একটি রিসোর্ট রয়েছে। এই রিসোর্ট থেকে আয় হচ্ছে লাখো কোটি টাকা। মেরিন ড্রাইভ রোডের পূর্ব পাশে জঙ্গল খুনিয়া পালং মোজার বিএস ২ নং খতিয়ানের শ্রেণী পাহাড় রির্জাভ ফরেস্টের বিএস ৪৩ নং দাগে বিল্ডিং নির্মাণ করে ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের বন রক্ষকরাই বনের গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। তবে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এভাবে গাছ কাটা অব্যাহত থাকলে ওই এালাকর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ইকো সিস্টেম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় জানান, রাতের আঁধারে গাছগুলো কেটে নিয়ে যায়। এফজি নাজমুল হাছান ও বাগান মালি মো. সোহেল আহমেদ সরাসরি জড়িত এই কাজে। তারা কাজ করেন ফরেস্টার মো. কামরুজ্জামান শোভন ও মো. তানভীর আলমের নির্দেশনাক্রমে কাজ করে। আমরাও যেহেতু খাস জমিতে বসবাস করি আমাদের নাম জানলে অনেক হয়রানি করবে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ফরেস্টার মো. কামরুজ্জামান শোভন বলেন, আমি হিমছড়ি বিটের দায়িত্বে আছি। এগুলো আমার এলাকায় পড়েনি। এটা খুনিয়াপালং বিটে পড়েছে। আর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা।

খুনিয়াপালং বিটের ফরেস্টার মো. তানভীর আলমের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়গুলো নিয়ে জানতে চাইলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও সাড়া দেননি।

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানকে রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারকে এই মূহূর্তেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম বলেন, বন বিভাগের কর্মকর্তারা বন রক্ষা না করে ভক্ষণ করার কাজে ব্যস্ত। বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব কুকর্মের সাথে জড়িত। বন বিভাগের গাফেলতির কারণে কক্সবাজারের বনভূমি দিনদিন কমে যাচ্ছে। তারা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে সচেতন না। তারা কিভাবে বনের জমি এবং গাছ বিক্রি করে নগদ টাকা কামানো যায় এগুলো নিয়ে ব্যস্ত। এদের উপর রাষ্ট্র, এডমিনিস্ট্রেশন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।