ঢাকা ০৪:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
রাখাইনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে: ড. খলিলুর রহমান রামু বাইপাসে ‘খালেকুজ্জামান চত্বর’ পূনর্বহালের দাবিতে হাজারো মানুষের মানববন্ধন খালেদা জিয়া নারী শিক্ষায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন: রামুতে কাজল ভারতে থালাপতি বিজয়ের জনসভায় পদদলিত হয়ে নারী-শিশুসহ অন্তত ৩৬ জন নিহত ঐক্যবদ্ধ না হলে গুপ্ত স্বৈরাচারের আবির্ভাব হবে : তারেক রহমান সাংবাদিকদের ৩টি কলিজা লাগে: জামায়াত আমির তারা নাকি জান্নাতের টিকিট দেবে, নাউজুবিল্লাহ: সালাহউদ্দিন আহমদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলেই কি কক্সবাজারে পর্যটনের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে? রোহিঙ্গা ছাড়া জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সম্মেলন: ‘নায়ক ছাড়া নাটক’ মন্তব্য কক্সবাজার সৈকত দখল ও অব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে দুষছে টুরিস্ট পুলিশ টেকনাফে মাটি খুঁড়ে মিললো ১ লাখ ২০ হাজার ইয়াবা প্রত্যাবাসন চাই- জাতিসংঘে সম্মেলনের আগে ক্যাম্পে সমাবেশ করে বিশ্বকে রোহিঙ্গাদের বার্তা অবহেলার বোঝা নামিয়ে টেকসই ভবিষ্যতের ডাক চায় সিসিএডি ‘কংক্রিটের ফাঁদে’ কক্সবাজারের পর্যটন: কেনো আসেনা বিদেশিরা? চিকিৎসাধীন ওয়্যারহাউজ পরিদর্শক জান্নাতুল নাঈমের মৃত্যু

প্রধান উপদেষ্টার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানালেন বিশ্বনেতারা

বিশ্বের ১১টি দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধানরা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং বাংলাদেশের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিশেষজ্ঞ সহায়তা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের আশ্বাস দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ড. ইউনূসের হোটেল স্যুটে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।

লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ভাইরা ভিকে-ফ্রেইবার্গা উচ্চ পর্যায়ের এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। ভিকে-ফ্রেইবার্গা নিজামী গাঞ্জাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের (এনজিআইসি) সহ-সভাপতি, যা ১১ শতকের বিখ্যাত পারস্য কবির নামে প্রতিষ্ঠিত।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বোরুত পাহর, সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বরিস তাদিচ, লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এগিলস লেভিটস, ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল, গ্রিসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপান্দ্রেউ, বুলগেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোসেন প্লেভনেলিয়েভ ও পেতার স্তোয়ানোভ, ক্রোয়েশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো জোসিপোভিচ, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট এমলাদেন ইভানিচ এবং মরিশাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট আমিনা গুরিব-ফাকিম।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন কমনওয়েলথের সাবেক মহাসচিব, জর্জিয়ার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চার সাবেক সভাপতি, কয়েকজন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংকের সাবেক সহ-সভাপতি ও এনজিআইসির সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি, আইএইএ এবং জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিরা।

তারা অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্ব ও দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে তার আজীবন অবদানের উচ্চ প্রশংসা করেন। তারা বলেন, আমরা এখানে এসেছি আপনাকে ও বাংলাদেশের মানুষকে সমর্থন দিতে। আমরা পুরোপুরি আপনার পাশে আছি।

নেতারা উল্লেখ করেন, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতি প্রশংসনীয় হলেও ১৬ বছরের অপশাসন, দুর্নীতি ও শোষণের পর দেশটি এখনও নানা চ্যালেঞ্জের মুখে।

অনেক নেতা অন্তর্বর্তী সরকারকে পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বিশেষজ্ঞ সহায়তার আশ্বাস দেন। উপস্থিত এক নেতা বলেন, আমরা আপনার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। যে কোনো পরামর্শ বা সহায়তা প্রয়োজন হলে আমাদের জানান। অনেক কাজ বাকি রয়েছে।

কেরি কেনেডি, যিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন, দেশের মানবাধিকার অগ্রগতির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, মানবাধিকার বিষয়ে আপনাদের অগ্রগতি অসাধারণ।

জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির নির্বাহী পরিচালক মেল্যান ভারভির জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান শিগগিরই বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবের প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন ঘোষণা করবে। এনজিআইসির সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন বলেন, আপনাদের যখনই প্রয়োজন আমরা আছি।

বিপুল সমর্থন পেয়ে উপস্থিত নেতাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। আপনাদের সবাইকে একসঙ্গে আমাদের প্রতি সমর্থন দিতে দেখে আমি মুগ্ধ ও আবেগাপ্লুত।

ড. ইউনূস তার প্রশাসনের মুখোমুখি হওয়া সমস্যাগুলোকে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, এ দেশ ১৫ বছরব্যাপী একটা ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে গেছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৯।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জনগণ রাতারাতি পরিবর্তনের প্রত্যাশা করে, অথচ সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে।

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে সহায়তার আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনাদের পরামর্শ, সমর্থন ও নৈতিক শক্তি আমাদের প্রয়োজন।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

রাখাইনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে: ড. খলিলুর রহমান

This will close in 6 seconds

প্রধান উপদেষ্টার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানালেন বিশ্বনেতারা

আপডেট সময় : ০১:৩৮:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিশ্বের ১১টি দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধানরা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং বাংলাদেশের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিশেষজ্ঞ সহায়তা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের আশ্বাস দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ড. ইউনূসের হোটেল স্যুটে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।

লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ভাইরা ভিকে-ফ্রেইবার্গা উচ্চ পর্যায়ের এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। ভিকে-ফ্রেইবার্গা নিজামী গাঞ্জাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের (এনজিআইসি) সহ-সভাপতি, যা ১১ শতকের বিখ্যাত পারস্য কবির নামে প্রতিষ্ঠিত।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বোরুত পাহর, সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বরিস তাদিচ, লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এগিলস লেভিটস, ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল, গ্রিসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপান্দ্রেউ, বুলগেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোসেন প্লেভনেলিয়েভ ও পেতার স্তোয়ানোভ, ক্রোয়েশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো জোসিপোভিচ, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট এমলাদেন ইভানিচ এবং মরিশাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট আমিনা গুরিব-ফাকিম।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন কমনওয়েলথের সাবেক মহাসচিব, জর্জিয়ার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চার সাবেক সভাপতি, কয়েকজন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংকের সাবেক সহ-সভাপতি ও এনজিআইসির সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি, আইএইএ এবং জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিরা।

তারা অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্ব ও দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে তার আজীবন অবদানের উচ্চ প্রশংসা করেন। তারা বলেন, আমরা এখানে এসেছি আপনাকে ও বাংলাদেশের মানুষকে সমর্থন দিতে। আমরা পুরোপুরি আপনার পাশে আছি।

নেতারা উল্লেখ করেন, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতি প্রশংসনীয় হলেও ১৬ বছরের অপশাসন, দুর্নীতি ও শোষণের পর দেশটি এখনও নানা চ্যালেঞ্জের মুখে।

অনেক নেতা অন্তর্বর্তী সরকারকে পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বিশেষজ্ঞ সহায়তার আশ্বাস দেন। উপস্থিত এক নেতা বলেন, আমরা আপনার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। যে কোনো পরামর্শ বা সহায়তা প্রয়োজন হলে আমাদের জানান। অনেক কাজ বাকি রয়েছে।

কেরি কেনেডি, যিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন, দেশের মানবাধিকার অগ্রগতির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, মানবাধিকার বিষয়ে আপনাদের অগ্রগতি অসাধারণ।

জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির নির্বাহী পরিচালক মেল্যান ভারভির জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান শিগগিরই বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবের প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন ঘোষণা করবে। এনজিআইসির সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন বলেন, আপনাদের যখনই প্রয়োজন আমরা আছি।

বিপুল সমর্থন পেয়ে উপস্থিত নেতাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। আপনাদের সবাইকে একসঙ্গে আমাদের প্রতি সমর্থন দিতে দেখে আমি মুগ্ধ ও আবেগাপ্লুত।

ড. ইউনূস তার প্রশাসনের মুখোমুখি হওয়া সমস্যাগুলোকে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, এ দেশ ১৫ বছরব্যাপী একটা ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে গেছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৯।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জনগণ রাতারাতি পরিবর্তনের প্রত্যাশা করে, অথচ সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে।

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে সহায়তার আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনাদের পরামর্শ, সমর্থন ও নৈতিক শক্তি আমাদের প্রয়োজন।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।