খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা গোলাম রাব্বানী টিপুকে কক্সবাজারে হত্যা নিয়ে পুলিশ যে প্রতিশোধমূলক খুনের দাবি করেছে, তা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে টিপুর পরিবারের সদস্যরা। তাদের দাবি, হত্যাটি কোনো প্রতিশোধমূলক কারণ থেকে হয়নি।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ ১৫ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই ঘটনা ২০১৫ সালে খুলনার চরমপন্থী গোষ্ঠী পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা হুজি শহিদুলের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত। টিপু ওই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিল।
পুলিশ সুপার বলেন, শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু (২৭) শহিদুলের ভাতিজা। তার চাচার হত্যার প্রতিশোধ নিতেই টিপুকে হত্যা করা হয়।
তবে স্থানীয় আধিপত্য ও প্রভাবের বিষয়ও হত্যাকাণ্ডে ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছিলেন পুলিশ সুপার।
নিহত টিপুর বড় ভাই গোলাম রসুল বাদশা বলেন, ২০১৫ সালে হত্যার শিকার হওয়া পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা হুজি শহিদুলের সাথে পাপ্পুর রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই। শহিদুলকে পাপ্পু “কাকা” বলে ডাকত, কারণ তারা একই এলাকায় থাকতো।
গোলাম রসুল বলেন, “আমার ভাই হত্যার পেছনে অন্য কিছু কারণ রয়েছে। তার প্রতিপক্ষরা, যারা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়ী হতে পারেনি বা টিপুর কারণে এলাকায় অবৈধ কার্যকলাপ চালানোর ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি, তারাই তাকে হত্যা করেছে।”
“পাপ্পু এবং অন্যরা, যারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল, তাদেরকে টাকার বিনিময়ে ফাঁদ পাতা হয়, হত্যার মিশন সম্পন্ন করা হয়।”
গোলাম রসুল আরো বলেন, “পুলিশকে তদন্ত করতে হবে, কে পরিকল্পনা করেছিল এবং হত্যাকাণ্ডের জন্য কে অর্থায়ন করেছিল”
“যদি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যায়, তাহলে প্রকৃত অপরাধীরা সামনে আসবে।”
এই বিষয়ে পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। কারণ তিনি ঢাকায় একটি আবাসিক প্রশিক্ষণে আছেন।
তবে পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহর বক্তব্যের বিষয়ে কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলিয়াস খান জানান, পাপ্পু নিজেই শহিদুলের ভাতিজা বলে দাবি করেছে।
ইলিয়াস খান বলেন, “আমরা তার দাবির সত্যতা যাচাই করিনি। তবে তদন্ত চলছে এবং আমরা প্রতিটি দাবি যাচাই করব। হত্যার উদ্দেশ্য এবং যতোক্ষণ পর্যন্ত তদন্ত সম্পন্ন না হয় এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে না।”
খুলনার স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী ও নিহত টিপুর প্রতিবেশীরা (যারা নাম প্রকাশ করতে চাননি) জানান, কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর গোলাম রব্বানী টিপু এলাকায় একটি বড় প্রভাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং এলাকার নিয়ন্ত্রণ ছিলো তার হাতে।
তারা জানান, কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি সবসময় সশস্ত্র সঙ্গীদের সঙ্গে রাখতেন। যার কারনে তাকে হত্যা করা কঠিন ছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট তিনি গা ঢাকা দেন।
২৬ সেপ্টেম্বর দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনের অন্যান্য কাউন্সিলরদের মতো টিপুও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বরখাস্ত হন।
টিপুকে ৯ জানুয়ারি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন সুগন্ধা পয়েন্টের কাছে হোটেল সী-গালের বিপরীতে গুলি করে হত্যা করা হয়।
পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, ১৩ জানুয়ারি পাপ্পু, ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করা টিপুর সঙ্গে থাকা রিতু এবং হত্যায় সহায়তাকারী গোলাম রাসুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনজনই খুলনার একই এলাকার।