কক্সবাজার শহরের প্রাণ বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিবৃতি দিয়েছে রাজধানী ঢাকায় বসবাসরত কক্সবাজারের বাসিন্দাদের সংগঠন কক্সবাজার কমিউনিটি অ্যালায়েন্স।
শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলছে-
বাঁকখালী নদী কেবল কক্সবাজারের নয়, এটি পুরো উপকূলীয় অঞ্চলের প্রাণশক্তি। একসময় নদীটি মানুষের জীবিকা, সংস্কৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত ছিল। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে দখল, দূষণ ও অনিয়মিত ব্যবস্থাপনার ফলে আজ এটি তার স্বাভাবিক প্রবাহ হারিয়ে মৃত্যুমুখে। নদীকে বাঁচানো এখন আর বিকল্প নয়; এটি সময়ের এবং দায়িত্বের এক অনিবার্য দাবি।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী নদীর সঠিক সীমারেখা বা ডিমার্কেশন নির্ধারণই প্রথম ধাপ। সীমারেখা স্পষ্ট না হলে উচ্ছেদ কার্যক্রমও অস্পষ্ট থেকে যাবে, যা নতুন জটিলতার সূত্রপাত করবে। নদীকে প্রভাবশালী দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করা ছাড়া পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়।
তবে নদী রক্ষার অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা অপরিহার্য। বিশেষ করে যারা ভূমিহীন এবং জীবিকার তাগিদে নদীর পাড়ে বসবাস করছিলেন—তাদের জন্য পরিপূর্ণ পুনর্বাসন পরিকল্পনা থাকা জরুরি। অন্যথায় এই উদ্যোগ কেবল পরিবেশগত নয়, সামাজিক দ্বন্দ্বও উস্কে দিতে পারে। তাই উচ্ছেদ কার্যক্রমের সঙ্গে সমান্তরালে ন্যায়সঙ্গত ও মানবিক পুনর্বাসন নীতি গ্রহণ করা আবশ্যক।
শুধু উচ্ছেদ করলেই নদী বাঁচবে না। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পরিকল্পনা, যেখানে অন্তর্ভুক্ত থাকবে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ। নদীকে কেবল শারীরিকভাবে মুক্ত করাই নয়, তাকে একটি সুস্থ, জীবন্ত ও পুনর্জীবিত বাস্তুতন্ত্রে রূপান্তরিত করা আমাদের লক্ষ্য হতে হবে।
সম্প্রতি কক্সবাজার কমিউনিটি অ্যালায়েন্স পরিচালিত সমীক্ষা এই ধারণাটিকে আরও নিশ্চিত করেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী শিক্ষিত ও পেশাজীবী ১৭ জনের মধ্যে ১৩ জন (৭৬%) নিঃশর্তভাবে উচ্ছেদ অভিযানের পক্ষে মত দিয়েছেন। বাকিরা (২৪%) শর্তসাপেক্ষ সমর্থন জানিয়ে বলেছেন—উচ্ছেদ জরুরি, তবে পুনর্বাসন পরিকল্পনা অবশ্যই থাকতে হবে। এটি প্রমাণ করে, জনমতের সঙ্গে মানবিক উদ্বেগও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকাস্থ কক্সবাজার কমিউনিটি অ্যালায়েন্স দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে—বাঁকখালী নদী রক্ষা অভিযান শুধু উচ্ছেদ নয়, এটি পরিবেশ, ন্যায়বিচার ও টেকসই উন্নয়নের সমন্বিত উদ্যোগ।