একে অপরের শরীরে মাঙ্গলিক জল ছিটিয়ে বিগত দিনের গ্লানি মুছে নতুন দিনের উচ্ছ্বাসে মেতেছে রাখাইনরা। রাখাইন বর্ষবরন উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও ‘মাহা সাংগ্রেং পোওয়ে’ অর্থাৎ ‘জলকেলি উৎসব’ হলো রাখাইন সম্প্রদায়ের বৃহত্তম সামাজিক উৎসব।
রাখাইন বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সূর্যোদয়ের সাথে শুরু হয় ১৩৮৭ রাখাইন বর্ষ। এ দিন থেকে ৩ দিন পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে রাখাইন সম্প্রদায় মেতে উঠে এ জলের উৎসবে।
নানা প্রজাতির ফুল আর রঙ-বেরঙয়ের কাগজে সাজানো হয় প্রতিটি প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের মাঝখানে থাকে পানি রাখার ড্রামসহ নানা উপকরণ। এতে পানির রাখার এসব উপকরণের এক পাশে অবস্থান করেন তরুণীরা আর অন্য পাশে থাকেন তরুণের দল। তারা নাচে-গানে মেতে উঠে একে অপরের প্রতি ছুড়তে থাকেন মঙ্গল জল।
রাখাইন তরুণ ওয়ান নাই বলেন, “এই মঙ্গলজল ছিটানোর মধ্য দিয়ে মুছে যায় পুরাতন বছরের সব গ্লানি, ব্যথা, বেদনা, অপ্রাপ্তিসহ নানা অসঙ্গতি।”
রাখাইন তরুণী মং চিন জানান, এ উৎসব তাদের ধর্মীয় রীতির ভিত্তিতে নয়। এটি তাদের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব।
মংচিন বলেন, জলে স্নিগ্ধ হওয়ার অন্যরকম প্রয়াস এই জলকেলি উৎসব। নতুন বছর যেনো ভালো কাটে, এজন্য আয়োজন করা হয় নানা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের।
কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক মংছেন হ্লা রাখাইন বলেন, হাজার বছরের পুরাতন উৎসব জলকেলি বা পানি খেলা। কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত শতাধিক প্যান্ডেলে চলছে রাখাইন বর্ষবরণের উৎসব।
মংছেন বলেন, “এছাড়াও জেলার মহেশখালী, টেকনাফ, চকরিয়া, হারবাং, রামু, চৌফলদন্ডীসহ বিভিন্ন স্থানে প্যান্ডেল তৈরি করে চলছে বর্ষবরণ উৎসব।”
কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন রাখাইন পল্লী ঘিরে দেখা গেছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রধান মন্দির অজ্ঞ্য মেদা ক্যাং পরিদর্শনে এসে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন,”কক্সবাজারে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল জাতিগোষ্ঠীর একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ শহর। আবহমান সংস্কৃতি অসাম্প্রদায়িক প্রতিচ্ছবি এটি। রাখাইনদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসবে অংশ নেয়ায় এটি সার্বজনীন হয়ে উঠে।”
নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, “তিন দিনের এ উৎসবকে প্রাণবন্ত করতে নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রশাসনের বিভিন্ন সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।”
উৎসবটি রাখাইনদের হলেও এটি পরিনত হয়েছে সকল সম্প্রদায়ের মিলনমেলায়।