কক্সবাজার বিমানবাহিনীর ঘাঁটির কাছে স্থানীয়দের সঙ্গে বিমান বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ইলিয়াস খান এখনো পর্যন্ত মামলা না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে নিহত নাহিদের পরিবারের পক্ষ থেকে আগামীকাল বুধবার মামলা করা হবে বলে জানান তার বাবা নাসির উদ্দীন।
নাসির উদ্দীন বলেন, “আজ সকালে ছেলের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে আগামীকাল থানায় যাবো।”
এদিকে ঘটনার পরদিন কক্সবাজারের ১ নম্বর ওয়ার্ডে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে জনাকীর্ণ সমিতিপাড়া বাজারে লোকসমাগম ছিল অনেক কম।
দুপুরের দিকে এলাকাবাসীদের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন বৈঠক করেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সাথে। সেখান থেকে বেরিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা দিদারুল ইসলাম রুবেল বলেন, সোমবারের ঘটনার পর মামলা হওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয়রা উদ্বেগে রয়েছেন। আমরা ডিসি স্যারকে বলেছি আমাদের যেনো আর হয়রানি করা না হয়।
দিদারুল ইসলাম বলেন, আইএসপিআর ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। ডিসি আমাদের বলেছে তিনি ঢাকায় যাচ্ছেন সেখান থেকে এসে বিমান বাহিনীসহ একসাথে বসে শান্তিপূর্ণ সমাধান করা হবে।
যুবক নিহত হওয়ার ঘটনার বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে বৈঠকে অংশ নেয়া আইনজীবী সেজান এহসান বলেন, আমরা ডিসিকে বলেছি এর নিরপেক্ষ একটা তদন্ত হোক৷ বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছি। এলাকাবাসীদের যেনো তুলে নিয়ে যাওয়া না হয়, থ্রেট করা না হয় এ বিষয়ে নিশ্চয়তা চেয়েছি।
সেজান এহসান বলেন, নাহিদ হত্যার বিচার অবশ্যই করতে হবে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন যেনো প্রভাবিত না হয় কোনোভাবে সেটাও বলা হয়েছে।
এক নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আক্তার কামাল বলেন, আমাদের সাথে বিমান বাহিনীর কোনো বিরোধ নাই। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের জায়গায় বসবাস করতে চাই। আমরাও থাকবো, ওরাও থাকবে। একটা সার্ভে করে কতোটুকু জায়গা এভিয়েশনের লাগবে কতো জায়গা বিমান বাহিনীর লাগবে তা নিয়ে আলোচনা করে কিভাবে স্থানীয়রাসহ সুষ্ঠু ভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে কথা বলেছি ডিসির সাথে।
এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কিছুই বলতে চাননি জেলা প্রশাসক সালাউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, “ওরা এসছিলো। ওদের কথা শুনেছি।”
বৈঠকে এসেছিলেন এ ঘটনায় আহত শাহাদাত হোসেন। তিনি স্থানীয় একটি গণমাধ্যমের কর্মী। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। ফের হাসপাতালে যাওয়ার পথে তিনি বলেন, আমি হাসপাতালে যাচ্ছিলাম এক প্রতিবেশীকে রক্ত দেয়ার জন্য। বিমান বাহিনীর সদস্যদের অনুরোধ করেছিলাম যেনো পথ ছেড়ে দেয়। কিন্তু তারা দেয়নি। আমি এলাকাবাসীকেও সরে যেতে বলছিলাম এবং বিমান বাহিনীর সদস্যদেরও অনুরোধ করছিলাম, ঠিক তখন গুলি চালানো হয়। আমার মাথা ঘেঁষে গুলি যাওয়ায় আমি আহত হই।
আমাদের হাতে এসেছে নিহত শিহাব কবির নাহিদের সুরতহাল প্রতিবেদন। যেখানে মাথায় আঘাতের একটি বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, “মাথার খুলি গভীর গর্ত যুক্ত, মগজ সম্পূর্ণ বাহির হওয়া অবস্থায়। যাহার আঘাতের পরিমাণ প্রস্থে অনুমান ৬ ইঞ্চি, লম্বায় অনুমান ৭ ইঞ্চি।”
তবে এখন পর্যন্ত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আসিফ আহমেদ হাওলাদার জানান, তার কাছে এখনো আসেনি। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিংঞো এর সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুবক্তাগিন মাহমুদ শহিল এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।
এদিকে যাকে আটক করা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিলো সেই শিক্ষানবিশ আইনজীবী জাহেদুল ইসলামকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার বাবা সাবের আহমেদ জানান, জাহেদের শারিরীক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সোমবার বিমান বাহিনী ঘাঁটির কাছে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে এক যুবক নিহত ও কয়েকজন আহত হন। নিহত শিহাব কবির নাহিদ (৩০) কক্সবাজারের সমিতিপাড়ার বাসিন্দা। সেখানে মূলত ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বাস্তুচ্যুত হওয়া প্রায় পঞ্চাশ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু বসবাস করেন। বিমান বাহিনী ঘাঁটি নির্মাণের কারণে উচ্ছেদের মুখে পড়া স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে ভূমি রক্ষা আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।