ঢাকা ০২:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
কসউবিতে আন্তঃস্কুল বিতর্ক উৎসব শুরু শনিবার দ্রুত আ.লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত না এলে আবারও ‘ঢাকা মার্চ’: নাহিদ ইসলাম শ্বশুরবাড়িতে মারধরে জামাইয়ের মৃত্যু- উখিয়ায় গ্রেফতার ৩ কক্সবাজারের সুগন্ধার আলোচিত জমি নিয়ে আতাউল্লাহ সিদ্দিকী ও কাবেরীর বিবৃতি সকলকে তারুণ্যের সমাবেশে যোগ দেয়ার আহবান রামুতে ডেবিল হান্ট অভিযানে আটক ৩ আওয়ামীলীগ নেতা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে কক্সবাজারে বিক্ষোভ “ইন্টেরিম তুমি কার, ফ্যাসিবাদের পাহারাদার” আপ বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ উখিয়ায় পিতার বাড়িতে মিললো গৃহবধূর মরদেহ, স্বামী পলাতক ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় পিএসএল স্থানান্তর, আইপিএল অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত সরকার আ.লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে: প্রেস উইং রাতভর নাটকীয়তার পর সকালে গ্রেফতার আইভী, দিলেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বিদ্যুৎহীন কক্সবাজার, ভোগান্তি যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ নয়, নিষিদ্ধ করতে হবে আ.লীগকে: নাহিদ ইসলাম নিষিদ্ধ হচ্ছে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ : আসিফ মাহমুদ
শুষ্ক মৌসুম এলেই বাড়ে অপহরণ

টেকনাফে গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপ

কক্সবাজারের টেকনাফে সংগঠিত অপহরণের ঘটনা গুলোতে শুরুর দিকে স্থানীয়দের যোগসাজশে রোহিঙ্গারা মিলিত হলেও, এখন এসে তৈরি হয়েছে রোহিঙ্গাদের আলাদা গ্রুপ।

মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা ভুক্তভোগীরা বলছেন অপহরণে এখন একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে গহীন পাহাড়কে কেন্দ্র করে। পাহাড় এখন তাদের অভয়ারণ্য।

অপহরণের কবল থেকে ফেরা টেকনাফের বাহারছড়ার বড় ডেইল এলাকার এক কিশোর ( নিরাপত্তার স্বার্থে পরিচয় গোপন রাখার হয়েছে) জানান, তাকে অপহরণ করা দলটিতে ১০ থেকে ১৫ জনের মতো ছিলো। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রান্না করে তাদের জন্য খাবার পাঠানো হয়।

অপহরণকারীদের কথা শুনে ভুক্তভোগী কিশোর স্পষ্ট বুঝতে পারেন তারা সবাই রোহিঙ্গা।

তার পিতা বলেন, “আমি দিনমজুর মানুষ। ১৫ দিন আগে আমার ছেলেকে অপহরণ করা হয়। ছেলেটারে পাহাড়ে নিয়ে নির্যাতন করে। ঘরভিটা বন্ধক রেখে, পাড়ার মানুষ থেকে চাঁদা তুলে ২ লাখ টাকা মুচনি ক্যাম্প বাজারে গিয়ে হাতে হাতে দিয়ে ছেলেকে ফিরিয়ে এনেছি।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন,”এক থানা থেকে আমাকে আরেক থানায় ঘুরানো হয়েছে। পরে র‍্যাবের কাছে গেলাম। র‍্যাব বলেছে ক্যাম্পের ভেতরে যাওয়ার অনুমতি নেই।”

একই এলাকার মুদি দোকানদার জসীম। সম্প্রতি অপহরণের শিকার হন তিনিও। জসীম বলেন, দোকান বন্ধ করতে গিয়েছিলাম রাত ১১টার দিকে। প্রায় ১৮ জনের মতো সন্ত্রাসী আমাকে নিয়ে যায়। এরপর ঘরে কথা বলতে দিয়ে নির্যাতন করা হয়”

৯ দিন নির্যাতনের মুখে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ফেরেন জসীম। ফিরে এসে মামলা করেছেন।

রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপ গুলোর তথ্য খুঁজতে গিয়ে আমাদের হাতে আসে অস্ত্র হাতে এক যুবকের ছবি। বিভিন্ন ক্যাম্পের মাঝিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তার নাম মোহাম্মদ শফি। সে নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি ব্লকের বাসিন্দা।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একাধিক মাঝি (রোহিঙ্গাদের সামাজিক নেতা) নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শফি ছিলো সালমান শাহ গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড। এখন আলাদা হয়ে করেছেন নিজস্ব গ্রুপ। ২০২২ সালের ৫ মে এপিবিএনের হাতে অস্ত্রসহ আটক হয়ে কারাভোগও করেছেন। এখন জামিনে বের হয়ে পাহাড়ে তার নেতৃত্বে চলছে ত্রাস।

সম্প্রতি অপহরণের শিকার হয়ে মুক্তিপনের বিনিময়ে ফিরে আসা একাধিক ভুক্তভোগী জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গড়ে উঠা বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে স্থানীয় চক্র গুলোর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। এরপর টার্গেট করে বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে শিশুদের পর্যন্ত অপহরণ করে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে।

টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য ফরিদুল্লাহ জানান, তার এলাকাটি হলো এখন অপহরণের হটস্পট। এখান থেকেই শতাধিক মানুষ অপহরণের শিকার হয়েছে।

অভিযোগ করে ফরিদুল্লাহ বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নয় বরং সকলে মুক্তিপণ দিয়ে ফেরত এসেছে।

টেকনাফের দায়িত্বে থাকা র‍্যাব-১৫ এর স্কোয়াড্রন লিডার তৌহিদুল মবিন খান জানান, তাদের কাছে তথ্য আছে পাহাড়ে কয়েকটি সশস্ত্র ডাকাত গ্রুপ সক্রিয় থাকার। তাদের আস্তানা গুলো চিন্তিত করার কাজ চলছে।

ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এপিবিএনের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ সিরাজ আমিনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ক্যাম্প ঘিরে অপরাধ সংগঠিত করা গ্রুপ গুলোর কোনো তালিকা রয়েছে কিনা?

সিরাজ আমীন জানান, এধরণের কোনো তালিকা তাদের নেই, তবে বিভিন্ন ঘটনা সংগঠিত হওয়ার পর তারা অভিযুক্তদের ধরতে কাজ করে থাকেন।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন জানান, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় এ সময়ে টেকনাফের পাহাড়ি এলাকা গুলোতে অপহরণের ঘটনা ঘটে বেশি।

অপহরণের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে জসীম উদ্দিন বেশ কয়েকটি কারণ হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মানবপাচার, মাদক ব্যবসার টাকা সংগ্রহ, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় অপহরণ বন্ধে বেগ পেতে হচ্ছে।

ইতোমধ্যে উপর মহল থেকে নির্দেশ এসেছে জানিয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, শীঘ্রই বিশেষ ফোর্স নিয়ে পাহাড়ে অভিযান শুরু হবে।

রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ গুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিহ্নিত কোনো সন্ত্রাসীর তালিকা নেই।

আর টেকনাফের অপহরণের সাথে জড়িত এসব গ্রুপের সাথে রোহিঙ্গাদের কথিত স্বসস্ত্র গোষ্ঠী আরসা ও আরএসও এর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলেও জানান জসীম উদ্দিন।

ট্যাগ :

কসউবিতে আন্তঃস্কুল বিতর্ক উৎসব শুরু শনিবার

This will close in 6 seconds

শুষ্ক মৌসুম এলেই বাড়ে অপহরণ

টেকনাফে গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপ

আপডেট সময় : ১২:৫১:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫

কক্সবাজারের টেকনাফে সংগঠিত অপহরণের ঘটনা গুলোতে শুরুর দিকে স্থানীয়দের যোগসাজশে রোহিঙ্গারা মিলিত হলেও, এখন এসে তৈরি হয়েছে রোহিঙ্গাদের আলাদা গ্রুপ।

মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা ভুক্তভোগীরা বলছেন অপহরণে এখন একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে গহীন পাহাড়কে কেন্দ্র করে। পাহাড় এখন তাদের অভয়ারণ্য।

অপহরণের কবল থেকে ফেরা টেকনাফের বাহারছড়ার বড় ডেইল এলাকার এক কিশোর ( নিরাপত্তার স্বার্থে পরিচয় গোপন রাখার হয়েছে) জানান, তাকে অপহরণ করা দলটিতে ১০ থেকে ১৫ জনের মতো ছিলো। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রান্না করে তাদের জন্য খাবার পাঠানো হয়।

অপহরণকারীদের কথা শুনে ভুক্তভোগী কিশোর স্পষ্ট বুঝতে পারেন তারা সবাই রোহিঙ্গা।

তার পিতা বলেন, “আমি দিনমজুর মানুষ। ১৫ দিন আগে আমার ছেলেকে অপহরণ করা হয়। ছেলেটারে পাহাড়ে নিয়ে নির্যাতন করে। ঘরভিটা বন্ধক রেখে, পাড়ার মানুষ থেকে চাঁদা তুলে ২ লাখ টাকা মুচনি ক্যাম্প বাজারে গিয়ে হাতে হাতে দিয়ে ছেলেকে ফিরিয়ে এনেছি।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন,”এক থানা থেকে আমাকে আরেক থানায় ঘুরানো হয়েছে। পরে র‍্যাবের কাছে গেলাম। র‍্যাব বলেছে ক্যাম্পের ভেতরে যাওয়ার অনুমতি নেই।”

একই এলাকার মুদি দোকানদার জসীম। সম্প্রতি অপহরণের শিকার হন তিনিও। জসীম বলেন, দোকান বন্ধ করতে গিয়েছিলাম রাত ১১টার দিকে। প্রায় ১৮ জনের মতো সন্ত্রাসী আমাকে নিয়ে যায়। এরপর ঘরে কথা বলতে দিয়ে নির্যাতন করা হয়”

৯ দিন নির্যাতনের মুখে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ফেরেন জসীম। ফিরে এসে মামলা করেছেন।

রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপ গুলোর তথ্য খুঁজতে গিয়ে আমাদের হাতে আসে অস্ত্র হাতে এক যুবকের ছবি। বিভিন্ন ক্যাম্পের মাঝিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তার নাম মোহাম্মদ শফি। সে নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি ব্লকের বাসিন্দা।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একাধিক মাঝি (রোহিঙ্গাদের সামাজিক নেতা) নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শফি ছিলো সালমান শাহ গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড। এখন আলাদা হয়ে করেছেন নিজস্ব গ্রুপ। ২০২২ সালের ৫ মে এপিবিএনের হাতে অস্ত্রসহ আটক হয়ে কারাভোগও করেছেন। এখন জামিনে বের হয়ে পাহাড়ে তার নেতৃত্বে চলছে ত্রাস।

সম্প্রতি অপহরণের শিকার হয়ে মুক্তিপনের বিনিময়ে ফিরে আসা একাধিক ভুক্তভোগী জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গড়ে উঠা বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে স্থানীয় চক্র গুলোর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। এরপর টার্গেট করে বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে শিশুদের পর্যন্ত অপহরণ করে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে।

টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য ফরিদুল্লাহ জানান, তার এলাকাটি হলো এখন অপহরণের হটস্পট। এখান থেকেই শতাধিক মানুষ অপহরণের শিকার হয়েছে।

অভিযোগ করে ফরিদুল্লাহ বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নয় বরং সকলে মুক্তিপণ দিয়ে ফেরত এসেছে।

টেকনাফের দায়িত্বে থাকা র‍্যাব-১৫ এর স্কোয়াড্রন লিডার তৌহিদুল মবিন খান জানান, তাদের কাছে তথ্য আছে পাহাড়ে কয়েকটি সশস্ত্র ডাকাত গ্রুপ সক্রিয় থাকার। তাদের আস্তানা গুলো চিন্তিত করার কাজ চলছে।

ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এপিবিএনের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ সিরাজ আমিনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ক্যাম্প ঘিরে অপরাধ সংগঠিত করা গ্রুপ গুলোর কোনো তালিকা রয়েছে কিনা?

সিরাজ আমীন জানান, এধরণের কোনো তালিকা তাদের নেই, তবে বিভিন্ন ঘটনা সংগঠিত হওয়ার পর তারা অভিযুক্তদের ধরতে কাজ করে থাকেন।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন জানান, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় এ সময়ে টেকনাফের পাহাড়ি এলাকা গুলোতে অপহরণের ঘটনা ঘটে বেশি।

অপহরণের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে জসীম উদ্দিন বেশ কয়েকটি কারণ হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মানবপাচার, মাদক ব্যবসার টাকা সংগ্রহ, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় অপহরণ বন্ধে বেগ পেতে হচ্ছে।

ইতোমধ্যে উপর মহল থেকে নির্দেশ এসেছে জানিয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, শীঘ্রই বিশেষ ফোর্স নিয়ে পাহাড়ে অভিযান শুরু হবে।

রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ গুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিহ্নিত কোনো সন্ত্রাসীর তালিকা নেই।

আর টেকনাফের অপহরণের সাথে জড়িত এসব গ্রুপের সাথে রোহিঙ্গাদের কথিত স্বসস্ত্র গোষ্ঠী আরসা ও আরএসও এর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলেও জানান জসীম উদ্দিন।