জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কক্সবাজার সফর একটি ঐতিহাসিক ও বহুমাত্রিক তাৎপর্য বহন করে। এই সফরে তাঁরা রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করবেন । তাঁদের এই সফর কক্সবাজারের টেকসই উন্নয়ন, মানবিক সংকট ব্যবস্থাপনা এবং সামগ্রিক জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অগ্রগতির নতুন দিগন্ত উন্মোচনে সহায়ক হবে বলে মনে করে কক্সবাজার কমিউনিটি অ্যালায়েন্স।
প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি তাঁর প্রথম কক্সবাজার সফর, যা জাতিসংঘ মহাসচিবের উপস্থিতিতে বহুমাত্রিক গুরুত্ব বহন করছে। এই সফর আন্তর্জাতিক পরিসরে কক্সবাজার ও বাংলাদেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো তুলে ধরার গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করবে।
কক্সবাজার কমিউনিটি অ্যালায়েন্স তাঁদের এই ঐতিহাসিক আগমনকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানায় এবং কক্সবাজারের টেকসই উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ কল্যাণে তাঁদের দৃঢ় ও কার্যকর ভূমিকার প্রত্যাশা করে। এ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সদয় বিবেচনার জন্য ৬ দফা দাবী উপস্থাপন করেছে। যা কক্সবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, নাগরিক সেবা বৃদ্ধি এবং মানবিক সংকট মোকাবিলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে সংগঠনটি।
১. রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান:
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। মায়ানমারের ওপর কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুততর করা এবং টেকসই সমাধানের জন্য বহুপাক্ষিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।
২. সীমান্ত নিরাপত্তা ও অবৈধ পাচার রোধ:
মায়ানমারের সঙ্গে স্থলবন্দর সংযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি সীমান্তে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করে মাদক, মানব, পশু ও অস্ত্র পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই। এ বিষয়ে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ এবং সহযোগিতা জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে কক্সবাজারসহ পুরো দেশকে এই অপরাধচক্রের ভয়াবহতা থেকে সুরক্ষিত রাখা যায়।
৩. স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন:
কক্সবাজারে আধুনিক চিকিৎসাসুবিধা নিশ্চিত করতে পাঁচ শত শয্যার একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন, নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি এবং পর্যটন শিল্পের টেকসই বিকাশে বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন।
৪. সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও পরিবেশ সংরক্ষণ:
কক্সবাজারের ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সমুদ্রসৈকতের সুরক্ষা, প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ, বন সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
৫. কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন:
কক্সবাজারকে পর্যটন ও নীল অর্থনীতির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে নীতিগত সহায়তা ও বিনিয়োগ আকর্ষণের প্রয়োজন। এ অঞ্চলের সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে টেকসই অবকাঠামো উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব পর্যটন ব্যবস্থাপনা এবং সমুদ্রসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি, স্থানীয় জনগণের দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন, যাতে কক্সবাজারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়।
৬. লবণ চাষীদের ন্যায্য অধিকার ও সুরক্ষা:
কক্সবাজারের প্রান্তিক লবণ চাষীরা নানাবিধ সংকটের মুখোমুখি। তাদের উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে কার্যকর নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় লবণ শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া, আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন এবং সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি। মানুষের ন্যায্য দাবি ও প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।