ঢাকা ০৬:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
চকরিয়ায় বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে মাদ্রাসা শিক্ষকের মৃত্যু স্ত্রীকে গলা কেটে হ’ত্যা: ঘা’ত’ক স্বামী আটক ১০ বছরে কক্সবাজার সৈকতে ৬০ জনের প্রাণহানি বাড়ছে বাস্তুচ্যুত, কমছে তহবিল- জাতিসংঘ মা শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে ভারতে জয় ভারতে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত, বহু হতাহতের শঙ্কা টেকনাফে কিশোরের হাতে নারী ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বামী হাতে স্ত্রী খুন তারেক রহমান চাইলে যেকোনো সময় দেশে ফিরতে পারেন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদে‌শের সাবেক ভূমিমন্ত্রীর সম্পদ জব্দ করলো যুক্তরাজ্য প্যারোলে মুক্তি পেলেন সাংবাদিক দম্পতি শাকিল–ফারজানা ‘‌পুকুরের পানি সব ঘোলা করে ফেলেছি’ ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক রাজনীতিতে সুবাতাস বয়ে আনবে: রিজভী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১১ দফা নির্দেশনা কলম্বিয়ার বিপক্ষে দশজনের আর্জেন্টিনার মান বাঁচানো ড্র ভিনিসিয়ুসের গোলে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ব্রাজিলের জয়

কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নই, বিনা শর্তে মাফ চাই: জামায়াত আমির

 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বা তার কোনো নেতাকর্মীর মাধ্যমে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন দলটির আমির শফিকুর রহমান।

তিনি বলেছেন, “যখন যেভাবে হোক, মানুষ আমরা কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে না। দল হিসেবে আমরা দাবি করি না যে- আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে।

“এই সংগঠনের প্রতিটি কর্মী, সহকর্মী কিংবা দলের দ্বারা যে যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন; সবার কাছে কোনো শর্ত নাই, বিনা শর্তে মাফ চাই। আপনারা আমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।”

মঙ্গলবার কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা হলে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আপিল বিভাগ জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে তাকে বেকসুর খালাস দেওয়ার পর এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

সেখানে দলটির আমির আওয়ামী লীগ আমলে যুদ্ধাপরাধ মামলার বিচার কার্যক্রম নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানানোর পাশাপাশি সমসাময়িক বিষয়েও কথা বলেন।

শফিকুর রহমান বলেন, “আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে প্রিয় দেশবাসীর কাছে আমাদের আহ্বান, অনুরোধ- আমাদের বিপদ ঘাড়ে নিয়েও আমরা চেষ্টা করেছি পুরা সময়জুড়ে দেশবাসীর বিপদে পাশে থাকার। এমনকি ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় নেওয়ার পরেও আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের গর্বের শহীদ পরিবার, আহত, পঙ্গু ভাই-বোনদের পাশে থাকার।

“কিন্তু আমরা এটা বিশ্বাস করি, যে আমরা- আমাদের পুরা কর্তব্য আদায় করতে পারিনি, আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে। একসময় আমাদেরকে করতেই দেওয়া হতো না। এখন অনেক সীমাবদ্ধতা আমাদের আছে। আপনারা আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আমাদের কোনো আচরণে, কোনো পারফরমেন্সে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।”

জামায়াত আমির বলেন, “জাতির অনেকগুলা বার্নিং ইস্যু এখনো আনরিজলভড। এখানেও যেন সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো এবং যারা সংশ্লিষ্ট অংশীজন- দেশকে ভালোবাসে, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার জনগণের স্বার্থকে দিয়ে আমরা যেন সবাই ভূমিকা পালন করতে পারি; আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দান করুন।

“আমরা কথা দিচ্ছি, মহান আল্লাহর একান্ত ইচ্ছায়, প্রিয় দেশবাসীর সমর্থন সহযোগিতায় যদি দেশের সেবা করার দায়িত্ব আমাদের উপরে আসে, আমরা ইনশাআল্লাহ প্রতিশোধের রাজনীতির অবসান ঘটাব। বৈষম্যের রাজনীতির অবসান ইনশাল্লাহ ঘটাব।

শফিকুর বলেন, “সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করার জন্য প্রিয় জনগণকে সাথে নিয়ে আমাদের সবটুকু উজাড় করে আমরা চেষ্টা করব।

“পাশাপাশি আমরা চাইব- আমাদের সমাজ দুর্নীতিমুক্ত হোক, দুঃশাসনমুক্ত হোক, অপরাধমুক্ত হোক, বৈষম্যমুক্ত হোক; কল্যাণধর্মী সমাজ হোক, মানবিক সমাজ হোক- সেই সমাজ পরিগঠনে আমরা আপনাদের সাহচর্য, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, সমর্থন, দোয়া- আমরা কামনা করি।”

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টিকে ‘ইচ্ছাকৃত নেতৃত্ব গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেন জামায়াত আমির শফিকুর রহমান।

দলটির নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে তাকে বেকসুর খালাস দেওয়ার পর শফিকুর বলেন, “এই রায়ের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, এটা ছিল ইচ্ছাকৃত নেতৃত্ব গণহত্যা।”

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সর্বোচ্চ আদালতে আপিল ও রিভিউ নিষ্পত্তি শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ শীর্ষ পাঁচ নেতা এবং বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

জামায়াতে ইসলামীর তখনকার সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আপিল বিভাগেও সেই সাজা বহাল ছিল।

জুলাই অভ্যুত্থানে সরকার বদলের পর আজহারের রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে আপিল শোনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার সেই রায়ে আজহারকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।

সেই প্রসঙ্গ ধরে জামায়াত আমির বলেন, “এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, সত্যকে চেপে রাখা যায় না। সত্য মেঘের আড়াল ভেদ করে আলোর ঝলক নিয়ে আসে। সেই সত্যটাই আল্লাহ আজকে আমাদেরকে দেখালেন।”

সুত্র: বিডিনিউজ২৪.কম

ট্যাগ :

This will close in 6 seconds

কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নই, বিনা শর্তে মাফ চাই: জামায়াত আমির

আপডেট সময় : ০৬:০৪:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বা তার কোনো নেতাকর্মীর মাধ্যমে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন দলটির আমির শফিকুর রহমান।

তিনি বলেছেন, “যখন যেভাবে হোক, মানুষ আমরা কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে না। দল হিসেবে আমরা দাবি করি না যে- আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে।

“এই সংগঠনের প্রতিটি কর্মী, সহকর্মী কিংবা দলের দ্বারা যে যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন; সবার কাছে কোনো শর্ত নাই, বিনা শর্তে মাফ চাই। আপনারা আমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।”

মঙ্গলবার কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা হলে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আপিল বিভাগ জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে তাকে বেকসুর খালাস দেওয়ার পর এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

সেখানে দলটির আমির আওয়ামী লীগ আমলে যুদ্ধাপরাধ মামলার বিচার কার্যক্রম নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানানোর পাশাপাশি সমসাময়িক বিষয়েও কথা বলেন।

শফিকুর রহমান বলেন, “আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে প্রিয় দেশবাসীর কাছে আমাদের আহ্বান, অনুরোধ- আমাদের বিপদ ঘাড়ে নিয়েও আমরা চেষ্টা করেছি পুরা সময়জুড়ে দেশবাসীর বিপদে পাশে থাকার। এমনকি ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় নেওয়ার পরেও আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের গর্বের শহীদ পরিবার, আহত, পঙ্গু ভাই-বোনদের পাশে থাকার।

“কিন্তু আমরা এটা বিশ্বাস করি, যে আমরা- আমাদের পুরা কর্তব্য আদায় করতে পারিনি, আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে। একসময় আমাদেরকে করতেই দেওয়া হতো না। এখন অনেক সীমাবদ্ধতা আমাদের আছে। আপনারা আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আমাদের কোনো আচরণে, কোনো পারফরমেন্সে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।”

জামায়াত আমির বলেন, “জাতির অনেকগুলা বার্নিং ইস্যু এখনো আনরিজলভড। এখানেও যেন সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো এবং যারা সংশ্লিষ্ট অংশীজন- দেশকে ভালোবাসে, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার জনগণের স্বার্থকে দিয়ে আমরা যেন সবাই ভূমিকা পালন করতে পারি; আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দান করুন।

“আমরা কথা দিচ্ছি, মহান আল্লাহর একান্ত ইচ্ছায়, প্রিয় দেশবাসীর সমর্থন সহযোগিতায় যদি দেশের সেবা করার দায়িত্ব আমাদের উপরে আসে, আমরা ইনশাআল্লাহ প্রতিশোধের রাজনীতির অবসান ঘটাব। বৈষম্যের রাজনীতির অবসান ইনশাল্লাহ ঘটাব।

শফিকুর বলেন, “সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করার জন্য প্রিয় জনগণকে সাথে নিয়ে আমাদের সবটুকু উজাড় করে আমরা চেষ্টা করব।

“পাশাপাশি আমরা চাইব- আমাদের সমাজ দুর্নীতিমুক্ত হোক, দুঃশাসনমুক্ত হোক, অপরাধমুক্ত হোক, বৈষম্যমুক্ত হোক; কল্যাণধর্মী সমাজ হোক, মানবিক সমাজ হোক- সেই সমাজ পরিগঠনে আমরা আপনাদের সাহচর্য, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, সমর্থন, দোয়া- আমরা কামনা করি।”

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টিকে ‘ইচ্ছাকৃত নেতৃত্ব গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেন জামায়াত আমির শফিকুর রহমান।

দলটির নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে তাকে বেকসুর খালাস দেওয়ার পর শফিকুর বলেন, “এই রায়ের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, এটা ছিল ইচ্ছাকৃত নেতৃত্ব গণহত্যা।”

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সর্বোচ্চ আদালতে আপিল ও রিভিউ নিষ্পত্তি শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ শীর্ষ পাঁচ নেতা এবং বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

জামায়াতে ইসলামীর তখনকার সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আপিল বিভাগেও সেই সাজা বহাল ছিল।

জুলাই অভ্যুত্থানে সরকার বদলের পর আজহারের রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে আপিল শোনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার সেই রায়ে আজহারকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।

সেই প্রসঙ্গ ধরে জামায়াত আমির বলেন, “এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, সত্যকে চেপে রাখা যায় না। সত্য মেঘের আড়াল ভেদ করে আলোর ঝলক নিয়ে আসে। সেই সত্যটাই আল্লাহ আজকে আমাদেরকে দেখালেন।”

সুত্র: বিডিনিউজ২৪.কম