Saturday, April 20, 2024

ঘূর্ণিঝড় মোখায় মিয়ানমারে তিনজনের মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন প্রদেশে আছড়ে পড়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মিয়ানমারে এখন পর্যন্ত অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন।

মিয়ানমারের উপকূলে শক্তিশালী এই ঝড়ের তাণ্ডব থেকে বাঁচতে হাজার হাজার মানুষ মঠ, প্যাগোডা এবং স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। মার্কিন বার্তা সংস্থা এসোসিয়েট প্রেস (এপি) বলেছে, রাখাইনে ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে অনেক ভবনের ছাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অন্তত তিনজনের প্রাণহানি ঘটেছে।

দেশটির আবহাওয়া বিভাগ বলেছে, রোববার বিকেলের দিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সিট্যুয়ে শহরের কাছে ঘণ্টায় ২০৯ কিলোমিটারের বেশি বাতাসের গতিবেগে নিয়ে আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগ।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর তথ্য অফিস বলছে, ঝড়ের কারণে সিট্যুয়ে, কিয়াউকপিউ এবং গওয়া শহরে ঘরবাড়ি, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, মোবাইল ফোনের টাওয়ার, নৌকা এবং ল্যাম্পপোস্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোখার তাণ্ডবে দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন থেকে প্রায় ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমের কোকো দ্বীপপুঞ্জের বেশ কিছু ভবনের ছাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সিট্যুয়ে শহরের আশ্রয়কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করা টিন নিন ওও বলেছেন, শহরের ২ লাখ বাসিন্দার মধ্যে চার হাজারের বেশি মানুষকে অন্য শহরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও ২০ হাজারের বেশি মানুষ শহরের উঁচু এলাকায় অবস্থিত মঠ, প্যাগোডা এবং স্কুলের মতো মজবুত ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন

তিনি বলেছেন, স্থানীয় অনেক বাসিন্দা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ মিটারের বেশি উঁচু এলাকায় বসবাস করেন। ঝড়ের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস এসব এলাকায় পৌঁছাবে না বলে সেখানকার অনেক বাসিন্দা মনে করেন।

টিন নিন ওও বলেন, ‘ঝড়ের মূলভাগ এখনও রাখাইনে প্রবেশ করেনি। যে কারণে এখন পর্যন্ত কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আশ্রয়কেন্দ্রে অনেক মানুষ রয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত টয়লেট নেই।’ স্থানীয় একটি দাতব্য ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লিন লিন বলেন, প্রত্যাশার চেয়ে বেশি মানুষ চলে আসায় সিট্যুয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত খাবার নেই।

মিয়ানমারে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) প্রতিনিধি টিটন মিত্র এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘মোখার আঘাত শুরু হয়েছে। প্রায় ২০ লাখ মানুষ ঝুঁকিতে আছেন। অনেক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমরা ঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত সব সম্প্রদায়ের কাছে বাধাহীনভাবে পৌঁছানোর প্রয়োজন হবে।’

মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি বলছে, রোববার সকালের দিকে মিয়ানমারে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শান রাজ্যের একটি উদ্ধারকারী দল তাদের ফেসবুক পেইজে বলেছে, তারা এক দম্পতির মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। দেশটির টাচিলেক শহরে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট ভূমিধসে বাড়িতে চাপা পড়ে মারা গেছেন তারা।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলের মান্দালয় প্রদেশের পাইন ওও লুইন শহরে একটি বটগাছ উপড়ে পড়ে অন্তত একজন মারা গেছেন। সিট্যুয়েতে প্রবল বাতাসের কারণে মোবাইল ফোনের একটি টাওয়ার ধসে পড়েছে এবং কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বাংলাদেশের কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় এই ঝড়ের আঘাত হানার পূর্বাভাষ দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তার মূল গতিপথ পাল্টে মিয়ানমারের রাখাইনের দিকে আগ্রসর হচ্ছে। উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা থেকে এর আগে ১২ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষকে কক্সবাজারের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে আমাদের ঝুঁকির মাত্রা অনেকাংশে কমে গেছে। সন্ধ্যার দিকেও কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপে বৃষ্টির সাথে প্রবল বাতাস অব্যাহত রয়েছে। তবে সেখানে জোয়ারের আশঙ্কা নেই। কারণ ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করছে।

সূত্র: এপি, এএফপি।

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

You cannot copy content of this page