ঢাকা ১১:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
মহেশখালীতে পুলিশের অভিযানে আটক-১ সাংবাদিক হাফিজের বাবার জানাজা সোমবার সকাল ১০ টায় সাংবাদিক হাফিজের বাবার ইন্তেকাল: টিটিএনের শোক “গোলদীঘিতে ধরা পড়া কাতলা মাছটি ১১ কেজি নয়, প্রকৃত ওজন ৬ কেজি” আসছে “মন্থা”, কক্সবাজারে বৃষ্টি গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে: আঘাত হানবে মঙ্গল বা বুধবার প্রথম দিনই ধরা পড়ল আড়াই কেজির ইলিশ, ৯২০০ টাকায় বিক্রি ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা, কোথায়, কখন আঘাত হানতে পারে সবুজ ঘাসে ঢাকা চট্টগ্রামের উইকেট, কেমন হবে রান পাবনায় ট্রাকচাপায় বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীসহ নিহত ৩ কি হতে পারে: নির্বাচন, না নতুন অন্তর্বর্তী সরকার? ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে সড়ক ছাড়লো বাসটার্মিনাল এলাকার বাসিন্দারা টেকনাফ জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক: দলীয় লেজুড়বৃত্তির সাংবাদিকতা থেকে বেরিয়ে আসুন উখিয়ায় পুলিশের পৃথক অভিযানে মিলল ১০ হাজার ইয়াবা ওপার থেকে ছোড়া গুলি পায়ে বিঁধলো নারীর

সাগরে নৌকাডুবি: ৪২৭ রোহিঙ্গা নিহতের খবর দিলো জাতিসংঘ

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘মিয়ানমারের উপকূলে চলতি মাসের শুরুতে দুইটি নৌকাডুবির ঘটনায় আনুমানিক ৪২৭ জন রোহিঙ্গা সমুদ্রে প্রাণ হারিয়েছেন। ‘

শুক্রবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে সংস্থাটি এই তথ্য জানিয়েছে।

গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা বলছে, ‘ নিরাপত্তার খোঁজে যাত্রা করা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য এটি চলতি বছরের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সমুদ্র দুর্ঘটনা।’

বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় অংশ নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু বা নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে ইউএনএইচসিআর এর দাবী, ‘আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগর বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সমুদ্রপথগুলোর একটি হয়ে উঠেছে।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘ প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, দুটি নৌকায় মোট ৫১৪ জন রোহিঙ্গা ছিল। ৯ মে প্রথম নৌকাটি ডুবে যায়, যেখানে ২৬৭ জন যাত্রী ছিল সেখান থেকে মাত্র ৬৬ জন প্রাণে রক্ষা পায়। ‘

পরদিন ১০ মে ২৪৭ রোহিঙ্গাকে বহন করা দ্বিতীয় নৌকাটিও ডুবলে সেখান থেকে মাত্র ২১ জন কে জীবিত পাওয়া যায় জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, যাত্রাকারীরা কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলো এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যতে বাস করা রোহিঙ্গা।

সংস্থাটি এখন বেঁচে যাওয়া মানুষদের পরিচয় ও বিস্তারিত তথ্য যাচাই করছে। এছাড়াও তৃতীয় আরো একটি নৌকার খবর পাওয়া গেছে যেটিতে ১৮৮ জন রোহিঙ্গা ছিল এবং ১৪ মে মিয়ানমারে সেটি আটকিয়ে দেওয়া হয়।

ইউএনএইচসিআরের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক হাই কিয়ং জুন বলেন, “সহায়তা তহবিল কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গাদের মানবিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ফলে অনেকেই নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনের আশায় প্রাণ ঝুঁকি নিয়ে বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন।”

তিনি আরও বলেন, “সাম্প্রতিক এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় বিশেষ করে আশ্রয়প্রদানকারী প্রথম দেশগুলোতে কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিত করা, দায়িত্ব ভাগাভাগি এবং সমুদ্রপথে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানো জীবন রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি।”

বিবৃতি অনুযায়ী, এই মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়ায় বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে। ফলে সাগর উত্তাল, বাতাস ও বৃষ্টিও প্রবল এবং এই সময়ে সমুদ্র পাড়ি দেওয়া আরও বিপজ্জনক। কিন্তু চরম হতাশা থেকে মানুষজন এই কঠিন পথ বেছে নিচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়।

সংস্থাটি মনে করে, সমুদ্রে বিপদগ্রস্তদের জীবন রক্ষা করা আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইনের অধীনে একটি মানবিক বাধ্যবাধকতা ও দীর্ঘদিনের দায়িত্ব।

ইউএনএইচসিআর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে অনুরোধ করেছে, যেন ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

এছাড়াও বিবৃতিতে ইউএনএইচসিআর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন বাংলাদেশ সহ এই অঞ্চলের দেশগুলোর পাশে দাঁড়ায়, যারা এতদিন ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে আসছে।’

যতদিন না মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং নিরাপদ ও স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, ততদিন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনরক্ষাকারী সহায়তা প্রদানে অব্যাহত সহযোগিতা করতে হবে বলে আহবান জানিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী বিষয়ক এই সংস্থা।

২০২৫ সালে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৩৮৩.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হলেও যার মাত্র ৩০ শতাংশ জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সংগৃহিত হয়েছে।

বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডে শরণার্থী ও আশ্রয়দাতা জনগোষ্ঠীর জীবন স্থিতিশীল করতে এই তহবিল ব্যবহার করা হবে বলে জানায় ইউএনএইচসিআর।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

This will close in 6 seconds

সাগরে নৌকাডুবি: ৪২৭ রোহিঙ্গা নিহতের খবর দিলো জাতিসংঘ

আপডেট সময় : ০২:১৫:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘মিয়ানমারের উপকূলে চলতি মাসের শুরুতে দুইটি নৌকাডুবির ঘটনায় আনুমানিক ৪২৭ জন রোহিঙ্গা সমুদ্রে প্রাণ হারিয়েছেন। ‘

শুক্রবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে সংস্থাটি এই তথ্য জানিয়েছে।

গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা বলছে, ‘ নিরাপত্তার খোঁজে যাত্রা করা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য এটি চলতি বছরের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সমুদ্র দুর্ঘটনা।’

বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় অংশ নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু বা নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে ইউএনএইচসিআর এর দাবী, ‘আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগর বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সমুদ্রপথগুলোর একটি হয়ে উঠেছে।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘ প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, দুটি নৌকায় মোট ৫১৪ জন রোহিঙ্গা ছিল। ৯ মে প্রথম নৌকাটি ডুবে যায়, যেখানে ২৬৭ জন যাত্রী ছিল সেখান থেকে মাত্র ৬৬ জন প্রাণে রক্ষা পায়। ‘

পরদিন ১০ মে ২৪৭ রোহিঙ্গাকে বহন করা দ্বিতীয় নৌকাটিও ডুবলে সেখান থেকে মাত্র ২১ জন কে জীবিত পাওয়া যায় জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, যাত্রাকারীরা কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলো এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যতে বাস করা রোহিঙ্গা।

সংস্থাটি এখন বেঁচে যাওয়া মানুষদের পরিচয় ও বিস্তারিত তথ্য যাচাই করছে। এছাড়াও তৃতীয় আরো একটি নৌকার খবর পাওয়া গেছে যেটিতে ১৮৮ জন রোহিঙ্গা ছিল এবং ১৪ মে মিয়ানমারে সেটি আটকিয়ে দেওয়া হয়।

ইউএনএইচসিআরের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক হাই কিয়ং জুন বলেন, “সহায়তা তহবিল কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গাদের মানবিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ফলে অনেকেই নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনের আশায় প্রাণ ঝুঁকি নিয়ে বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন।”

তিনি আরও বলেন, “সাম্প্রতিক এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় বিশেষ করে আশ্রয়প্রদানকারী প্রথম দেশগুলোতে কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিত করা, দায়িত্ব ভাগাভাগি এবং সমুদ্রপথে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানো জীবন রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি।”

বিবৃতি অনুযায়ী, এই মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়ায় বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে। ফলে সাগর উত্তাল, বাতাস ও বৃষ্টিও প্রবল এবং এই সময়ে সমুদ্র পাড়ি দেওয়া আরও বিপজ্জনক। কিন্তু চরম হতাশা থেকে মানুষজন এই কঠিন পথ বেছে নিচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়।

সংস্থাটি মনে করে, সমুদ্রে বিপদগ্রস্তদের জীবন রক্ষা করা আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইনের অধীনে একটি মানবিক বাধ্যবাধকতা ও দীর্ঘদিনের দায়িত্ব।

ইউএনএইচসিআর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে অনুরোধ করেছে, যেন ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

এছাড়াও বিবৃতিতে ইউএনএইচসিআর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন বাংলাদেশ সহ এই অঞ্চলের দেশগুলোর পাশে দাঁড়ায়, যারা এতদিন ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে আসছে।’

যতদিন না মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং নিরাপদ ও স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, ততদিন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনরক্ষাকারী সহায়তা প্রদানে অব্যাহত সহযোগিতা করতে হবে বলে আহবান জানিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী বিষয়ক এই সংস্থা।

২০২৫ সালে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৩৮৩.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হলেও যার মাত্র ৩০ শতাংশ জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সংগৃহিত হয়েছে।

বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডে শরণার্থী ও আশ্রয়দাতা জনগোষ্ঠীর জীবন স্থিতিশীল করতে এই তহবিল ব্যবহার করা হবে বলে জানায় ইউএনএইচসিআর।