ভূরাজনীতি শেখার জন্য ঐতিহাসিক জ্ঞান, বর্তমান বিষয়বস্তু সম্পর্কে সচেতনতা এবং বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতার মিশ্রণ প্রয়োজন। একটি কাঠামোগত পদ্ধতি এবং বিশ্লেষণ সক্ষমতায় একজন মানুষকে ভূরাজনীতিতে দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করতে পারে।
কিভাবে একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করতে পারেন?
প্রথমে ইতিহাস দিয়ে শুরু করুন, কারন ভূরাজনীতি-যুদ্ধ, চুক্তি, উপনিবেশবাদ এবং ক্ষমতার সংগ্রামের মতো ঐতিহাসিক ঘটনা দ্বারা গঠিত হয়।
দ্বিতীয়ত বই পড়তে হবে, শুরুতে পিটার ফ্রাঙ্কোপান এর “দ্য সিল্ক রোডস” এবং টিম মার্শাল এর “প্রিজনার্স অফ জিওগ্রাফি” দিয়ে শুরু করুন।
তৃতীয়ত বিশ্বব্যাপী সংঘাত এর উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখুন। পাশাপাশি বিশ্বযুদ্ধ, শীতল যুদ্ধ, আঞ্চলিক বিরোধ নিয়ে পড়াশোনা করুন।
চতুর্থত রাজনৈতিক তত্ত্ব গুলি বুঝুন এবং ভাবুন যেমন বাস্তববাদ, উদারনীতি এবং গঠনবাদের মতো ধারণা গুলি কিভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করে থাকে।
পঞ্চমত বাস্তববাদ সমন্ধে জানতে ও বুঝতে জন মেয়ারশাইমার এর “দ্য ট্র্যাজেডি অফ গ্রেট পাওয়ার পলিটিক্স” পড়ুন।
ষষ্ঠত জাতিসংঘ, ন্যাটো, ব্রিকস এবং আসিয়ানের মতো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে গভীরভাবে জানা।
দৈনন্দিন ইস্যু গুলো জানতে ও অনুসরণ করতে কি করা যায়?
প্রথমত আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক মূলধারার সংবাদপত্রে চোখ রাখতে হবে।
দ্বিতীয়ত থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং গবেষণাপত্র সমূহ এর উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখুন যেমন কার্নেগি এনডাউমেন্ট, RAND কর্পোরেশন, কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস (CFR), এবং ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন।
তৃতীয়ত মানচিত্র এবং ভূগোল বিষয়ে বিশদভাবে জানা। কারন ভূরাজনীতি ভূগোলের সাথে গভীরভাবে জড়িত। জানতে হবে
বাণিজ্য রুট, চোকপয়েন্ট, ও সীমান্ত সংঘাত সমন্ধে যেমন, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ, মালাক্কা স্ট্রেইট, আর্কটিক রুট, হরমুজ স্ট্রেইট, সুয়েজ খাল, তাইওয়ান স্ট্রেইট, ভারত-চীন, রাশিয়া-ইউক্রেন, ও দক্ষিণ চীন সাগর।
বিশ্বব্যাপী শক্তি সংগ্রাম বিশ্লেষণ করা কিভাবে উপভোগ করবেন?
প্রথমত মার্কিন-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেন হচ্ছে তা জানার চেষ্টা করুন, শুধু কি বাণিজ্য যুদ্ধ, সামরিক জোট (AUKUS, QUAD), বা তাইওয়ান সমস্যা?
দ্বিতীয়ত রাশিয়া-পশ্চিমা সম্পর্ক কিসের উপর নির্ভর করছে এবং অর্থনীতিতে ও রাজনীতিতে এর প্রভাব শুধু কি ইউক্রেন যুদ্ধ, ন্যাটো সম্প্রসারণ, ও জ্বালানি রাজনীতিতে?
তৃতীয়ত মধ্যপ্রাচ্যের গতিশীলতায় বাধা কি? শুধুই কি ইরান-সৌদি উত্তেজনা, ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত?
বিশ্লেষণাত্মক মানসিকতা বিকাশে এগিয়ে থাকতে কি করবেন?
মতামতপত্র এবং পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন শুরু করুন। বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির তুলনা করুন যেমন পশ্চিমা, পূর্ব, এবং নিরপেক্ষতা কোথায়। অন্যদের সাথে আলোচনা করুন পাশাপাশি আপনার অন্তর্দৃষ্টি সম্পর্কে লিখুন।
জানতে ইন্টারেক্টিভ টুল ব্যবহারে নিজেকে এগিয়ে রাখতে হবে।
ক্যাস্পিয়ান রিপোর্ট, জিওপলিটিক্স অ্যান্ড এম্পায়ার এবং রিয়েললাইফলোরের মতো ভূ-রাজনৈতিক ইউটিউব চ্যানেল গুলি অনুসরণ করুণ। পডকাস্ট শুনুন যেমন, গ্লোবাল ডিসপ্যাচেস, ও ওয়ার্ল্ডলি বাই ভক্স।
একটি অঞ্চল বা থিমে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠার চেষ্টা করুন।
দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, অথবা ইন্দো-প্যাসিফিকের উপর ফোকাস করুন নিজের চিন্তা ভাবনা সমূহকে। শক্তি, সামরিক কৌশল, অথবা সাইবার যুদ্ধের মতো নির্দিষ্ট বিষয় গুলি অধ্যয়ন করুন।
ভূরাজনীতি কেন জানতে হবে?
ভারত, চীন এবং বঙ্গোপসাগরের মধ্যে অবস্থানের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশ কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে তাই।
তথ্যসূত্র: বিশ্বের বিভিন্ন ভূরাজনীতিক বিশেষজ্ঞ, পত্রপত্রিকা, পাবলিকেশন, গবেষক ও বই পত্র।
লেখক
শেখ জাহাঙ্গীর হাছান মানিক
গবেষক ও চিন্তক