জাতীয় মহাসড়ক এন-১, রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু হয়ে ৪৬৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়ক শেষ হয়েছে কক্সবাজার জেলার সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে।
অন্যতম ব্যস্ত এই সড়কের কক্সবাজার-টেকনাফ অংশের দৈর্ঘ্য ৭৯ কিলোমিটার। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সড়কটির মাধ্যমে সংযুক্ত কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা।
২০২৫ সালের প্রথম দশদিনে এই সড়কের উখিয়া ও রামুতে পৃথক তিনটি স্থানে মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪ জন।
সর্বশেষ ১০ জানুয়ারি (শুক্রবার) রামুর খুনিয়াপালংয়ে সিএনজি ও ট্রাকের সংর্ঘষে মারা যান সিএনজিযাত্রী জেলার স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক গণসংযোগের বিজ্ঞাপন কর্মকর্তা সাহাবউদ্দিন জীবন (৩০)।
এর আগের দিন ৯ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সকালে উখিয়ার জনবহুল কুতুপালং এলাকার টিভি টাওয়ার সংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে এনজিওকর্মী লিকু মানকিন (৩০) নিহত হন।
স্ত্রী, সন্তানকে নিয়ে মোটরসাইকেল চালক লিকুর গন্তব্য ছিলো টেকনাফমুখী, বাঁকে উঠলে সামনে থাকা রডবাহী ট্রাক হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পেছনে চলে আসে।
দুইবছর বয়সী পুত্রসন্তান ও স্ত্রীকে নামিয়ে দিয়ে লিকু চেষ্টা করেছিলেন নিজের বাহন কে নিয়ন্ত্রণ করতে, কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই ট্রাকটির পেছনের চাকার নিচে পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি।
বছরের দ্বিতীয় দিনে (২ জানুয়ারি) বন্ধু আব্দুর রহমান কে সাথে নিয়ে কর্মের তাগিদে মোটরসাইকেল নিয়ে ছুটছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি লিটন গাজী (২২) ।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে জানা গেছে, উখিয়ার থাইংখালী এলাকায় একটি গ্যাস ফিলিং স্টেশনের সামনে কক্সবাজারমুখী লিটন হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টেকনাফমুখী একটি বাসের চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে বন্ধুসহ মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান।
সওজের তথ্য বলছে, এই সড়কে অন্তত ১৩টি অংশ আছে যেখানে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা ঘটে। অত্যাধিক ঝুঁকির তালিকায় আছে উখিয়া অংশে পাহাড়ি ঢালুতে গড়ে ওঠা চারটি বাঁক আমগাছতলা-উখিয়া কলেজ, শাহপুরী হাইওয়ে থানা-কুতুপালং রাস্তার মাথা, টিভি টাওয়ার-বালুখালী কাস্টমস এবং মরা গর্জন গাছতলা-থাইংখালী।
কুতুপালংয়ের টিভি টাওয়ার বাঁকের পাশে লাগানো অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ৭নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রবেশপথ, যেটি দিয়ে প্রতিদিন রোহিঙ্গা চালিত হাজারো টমটম-ইজিবাইক চলাচল করে । এছাড়া ক্যাম্প এলাকা লাগোয়া এই বাঁকে কর্মব্যস্ত দিন গুলোতে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
রোহিঙ্গা অদক্ষ চালকদের দৌরাত্ম্য এবং ক্যাম্প সংলগ্ন সড়কের অব্যবস্থাপনা বন্ধে ক্যাম্প প্রশাসন ও এপিবিএন সহ সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করেন উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হোসেন চৌধুরী।
তিনি বলেন, ” চালক-পথচারীদের সতর্কতার সাথে সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে জনসচেতনতাই গুরুত্বপূর্ণ, সচেতন থাকলে দূর্ঘটনা কমানো সম্ভব।”
প্রশাসনের পক্ষ থেকে দূর্ঘটনায় নিহত লিটন গাজী, আব্দুর রহমান ও লিকু মানকিনের পরিবারকে মরদেহ পরিবহন খরচ বাবদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং নিহত জীবনের পরিবারকেও সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে হাইওয়ে পুলিশ সবসময় তৎপর আছে বলে জানান শাহপুরী হাইওয়ে থানার ইনচার্জ মাহাবুবুল কবির। ‘