Thursday, May 16, 2024

রিয়াদের বীরত্বের পরও ১৪৯ রানে পরাজয় বাংলাদেশের

স্পোর্টস ডেস্কঃ

বিশ্বকাপে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৪৯ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করতে নেমে কুইন্টন ডি ককের ১৭৪ রানের অনবদ্য সেঞ্চুরির পর হেনরিখ ক্লাসেনের ঝড়ো ৯০ রানের ওপর ভর করে ৩৮২ রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ব্যাটারদের আসা যাওয়ার মিছিলে টাইগারদের ঢাল হয়ে দাঁড়ান অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। স্রোতের বিপরীতে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৪র্থ সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ২০ বল বাকি থাকতেই ২৩৩ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা। এই পরাজয়ের ফলে সেমি ফাইনালের স্বপ্ন অনেকটাই থিতু হয়ে গেলো সাকিব আল হাসানের দলের।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার দেয়া ৩৮৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দেখেশুনেই করে দুই টাইগার ওপেনার লিটন দাস ও তানজিদ তামিম। ৬ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৩০ রান তুলেন তারা। এরপরই ছন্দপতন ঘটে বাংলাদেশের। সপ্তম ওভারে মার্কো জানসেনের শর্ট বলে কট বিহাইন্ড হন তানজিদ তামিম। ১৭ বলে ১২ রান করে সাজঘরে ফেরেন এ বাঁহাতি ব্যাটার।

এরপরের বলেই গোল্ডেন ডাক মেরে সাজঘরে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। জানসেনের ডাউন দ্য লেগের বলে ফ্লিক করতে গিয়েছিলেন নাজমুল। কিন্তু উইকেটের পেছনে ক্লাসেনের হাতে ধরা পড়েন তিনি। এতে প্রথম বলেই কোনো রান না করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ক্রিজে এসে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সাকিব আল হাসানও। লিজাড উইলিয়ামসের অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে নিজের তৃতীয় ক্যাচটি লুফে নেন হেনরিখ ক্লাসেন। ৪ বলে ১ রান করে আউট হন সাকিব।

দ্রুতই তিন উইকেট হারানোর পর মুশফিকুর রহিমের দায়িত্ব ছিল লিটনকে সঙ্গে নিয়ে বিপদ সামাল দেয়া। তবে সেটা করতে পারলেন না বাংলাদেশের অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। জেরাল্ড কোয়েতজের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খেলতে গিয়ে ডিপ থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৮ রান করা মুশফিক। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার ফেরার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি লিটনও। কাগিসো রাবাদার বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েছেন ২২ রান করা এই ওপেনার। উইকেটে থিতু হলেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। কেশভ মহারাজের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন ১১ রান করা এই ব্যাটার।

৮১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশের হয়ে একাই লড়াই চালিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সপ্তম উইকেট জুটিতে নাসুম আহমেদকে সঙ্গী করে ৪১ রানের জুটি গড়েন রিয়াদ। তিন চারে ১৯ বলে ১৯ রান করে নাসুম আউট হলে ভাঙে এই জুটি। তবে ৮ম উইকেটে হাসান মাহমুদকে সঙ্গী করে ফের লড়াই চালান বাংলাদেশের এই ‘সাইলেন্ট কিলার’। ৬৭ বলে তুলে নেন চলতি আসরের প্রথম ফিফটি।

নবম উইকেট জুটিতে মোস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪র্থ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মাহমুদউল্লাহ। রাবাদার বলে এক রান নিয়ে ১০৪ বলে ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। আগের দু’টি করেছিলেন ২০১৫ বিশ্বকাপে। সেঞ্চুরির পর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি দ্যা সাইলেন্ট কিলার। কোয়েতজারের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফে মার্কো জানসেনের হাতে ধরা পড়লে ভাঙে ৬৮ রানের জুটি। আউট হওয়ার আগে ১১১ বলে ১১টি চার ও ৪টি ছক্কার সাহায্যে ১১১ রান করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এরপর মাত্র ৬ রান যোগ করতেই আউট হন মোস্তাফিজুর রহমান। উইলিয়ামসের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে টপ এজ হলে কাভারে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডার মিলারের হাতে ধরা পড়েন ১১ রান মোস্তাফিজ। সেই সাথে ২৩৩ রানে থামে টাইগাররা।

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ ৩ টি উইকেট শিকার করেন জেরাল্ড কোয়েতজে। এছাড়াও ২ টি করে উইকেট নেন মার্কো জানসেন, কাগিসো রাবাদা ও লিজাড উইলিয়ামস। ১টি উইকেট পান কেশভ মাহরাজ।

এর আগে, ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা বেশ দেখেশুনে খেলেন দুই ওপেনার রেজা হেন্ড্রিকস ও কুইন্টন ডি কোক। তবে শূন্য রানে জীবন পাওয়া হেনড্রিকস অবশ্য ১২ রানেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন। শরিফুল ইসলামের গুড লেন্থের ডেলিভারিতে সোজা ব্যাটে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন তিনি। হেনড্রিকসের ব্যাট থেকে আসে ১৯ বলে ১২ রান।

দ্বিতীয় উইকেট পেতে অবশ্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি টাইগারদের। মেহেদী হাসান মিরাজের করা কুইকার ডেলিভারিতে ফ্লিক করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন রাসে ভ্যান ডার ডুসেন। এই ডানহাতি ইনফর্ম ব্যাটার করেন মাত্র ১ রান। ৪ নম্বরে ক্রিজে আসেন এইডেন মার্করাম। প্রোটিয়া অধিনায়ককে সঙ্গী করে দলের হাল ধরেন ডি কক। দু’জনই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। এই দু’জনের জুটিও ছাড়িয়ে যায় শতরান। দু’জনই ছুটছেন সেঞ্চুরির পথে। শুরুতে দেখেশুনে খেললেও উইকেটে থিতু হয়েই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন ডি কক ও মার্করাম। মিরাজের বলে পয়েন্ট দিয়ে চার মেরে ৫৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি পৌঁছান মার্করাম।

হাফ সেঞ্চুরির পর তাকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি সাকিব। টাইগার অধিনায়কের করা টসড আপ ডেলিভারিতে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে লং অফে লিটন দাসের দারুণ ক্যাচে ফেরেন মার্করাম। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৬৯ বলে ৬০ রান। মার্করাম ফিরলেও হেনরিখ ক্লাসেনকে নিয়ে ১০১ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২০তম সেঞ্চুরি তুলে নেন ডি কক। চলতি টুর্নামেন্টে এটি তার তৃতীয় সেঞ্চুরি।

ক্যারিয়ার সেরা ফর্মে থাকা কুইন্টন ডি কক ১৫০ রান পূর্ণ করতে পরের ফিফটি হাঁকান কেবল ২৮ বলে। রীতিমতো ঝড় তুলে ৪৪ ওভারেই স্কোরবোর্ডে এনে দেন ৩০০ রান। এরমাঝেই ক্লাসেন পঞ্চাশ করেন ৩৪ বল খেলে।

হাসান মাহমুদ নিজের দ্বিতীয় স্পেলে এসে অবশ্য ডি কককে থামান। ফেরার আগে ১৪০ বলে ১৭৪ রানের ইনিংস সাজান ১৫ চার ও ৭ ছক্কায়। হেনরিখ ক্লাসেন আজও ছিলেন সেঞ্চুরির পথেই। ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলেই ৬ হাঁকিয়ে পৌঁছান ৯০ এর ঘরে। পরের বলেও ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টা, হাসান মাহমুদের স্লো বাউন্সারে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে। বিদায় নেয়ার আগে ৪৯ বলের ইনিংসে তার ব্যাট থেকে আসে ৮ টি ছক্কা ও ২ চার।

শেষপর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস থামে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৮২ রানে। ১৫ বলে ৩৪ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন ডেভিড মিলার। শেষ দশ ওভারে বাংলাদেশের বোলাররা খরচ করেন মোট ১৪৪ রান। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট শিকার করেন হাসান মাহমুদ। এছাড়াও ১ টি করে উইকেট নেন সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও শরিফুল ইসলাম।

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

You cannot copy content of this page