Thursday, May 16, 2024

প্রান্তিক এর জন্য সত্যিকারের সেবামূলক ব্যাংক কি আদৌ হয়েছে?

প্রান্তিক এর জন্য সত্যিকারের সেবামূলক ব্যাংক কি আদৌ হয়েছে?

বর্তমানে দেশে প্রচলিত ধারার ব্যাংক রয়েছে মোট ৬১ টি সূত্র বিবিসি বাংলা। শাখার পাশাপাশি অনেক ব্যাংকের রয়েছে অনলাইন সেবাও।

দেশে উচ্চ পর্যায়‌ থেকে একেবারে নিম্ন পর্যায়ের মানুষ জনের অনেকাংশেই ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার করছেন। মুদ্রানীতি ঘোষণা ও বাস্তবায়নে কি পেলাম বা কি হারালাম সেভাবে‌ কোন সংবাদ প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের জন্য কেউ প্রকাশ করে না। যেমনটি বাজেটের পর ফলাও করে প্রকাশ করা হয় কিসের দাম বেড়েছে অথবা কমেছে।

বাংলাদেশে ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক এর চেয়ে নেতিবাচক প্রভাব বেশি। যদিও দেশে এখনো কোনো ব্যাংক প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দেওয়ালিয়া ঘোষণা করে নাই। তদুপরি আমরা দেখি অনেকগুলো ব্যাংক ঠিক ভাবে আমানতকারীদের আমানত চাহিবা মাত্র ফেরত দিতে পারছে না। পক্ষান্তরে এই দিতে না পারাও একপ্রকার ‘দেওয়ালিয়া’। ব্যাংক থেকে আমরা কি চাই বা কি পেলাম? কেন তারা দেয় না? যেমনটি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন ‘ওদের অনেক আছে তবু দেয় না” সত্যি কি তাই হচ্ছে ব্যাংকে?

আসুন জেনে নিই কি আছে তাদের। কিভাবে দেয় না। কিভাবে প্রান্তিক মানুষের আমানতকে পুঁজি করে বাংলাদেশের ব্যাংক গুলো দৈনন্দিন লাভের অংশ বৃদ্ধি করছে। কিভাবে আমরা ঠকছি বা ঠকানো হচ্ছে?

যখন একটা ব্যাংকে একাউন্ট খোলা হয় তার বিপরীতে অনেকগুলো সার্ভিস যুক্ত হয় উদাহরণস্বরূপ ১) মুঠোফোনে এসএমএস এর মাধ্যমে ট্রানজেকশন এর অ্যালার্ট প্রদান। ২) ভিসা বা মাস্টার কোম্পানির ডেবিট কার্ড প্রদান। ৩) ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট ইস্যু। ৪) ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেওয়া। ৫) বাৎসরিক একাউন্ট মেন্টেনেন্স ফি অন্তর্ভুক্ত করা ৬) নির্দিষ্ট অংকের টাকা একাউন্টে সর্বনিম্ন ব্যালেন্স হিসেবে রেখে দেওয়া এবং ৭) এটিএম বুথ সম্প্রসারণ না করে তৃতীয় পক্ষের এটিএম ব্যবহার করার ফলে ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকার জন্য অভিন্ন ব্যাচ এর চার্জ নেওয়া। উপরোক্ত সেবা সমূহ কিভাবে আমাদের বিপরীতে কাজ করে;

ধরুন আপনি একটা ব্যাংক একাউন্ট ওপেন করলেন এর অর্থ আপনি দৈনন্দিন বিভিন্ন ট্রানজেকশন পরিচালনা করবেন। কিন্তু আমরা প্রান্তিকরা একটা একাউন্ট খোলার পর, মাসে দুইবার অথবা তিনবার লেনদেন সম্পর্ণ করে থাকি। তাহলে দেখুন তিনটা ট্রানজেকশনে আমাদেরকে তিনটি এসএমএস দিয়েছে ব্যাংক। ওনারা যেহেতু বাল্ক এসএমএস কিনেন আমার মনে হয় না একটি এসএমএস ৫০ পয়সা থেকে বেশি হওয়ার কথা। তাহলে প্রতি বছরে ৩৬ টা এসএমএস প্রদান করে ব্যাংক সর্বোচ্চ ১৮ টাকা প্লাস পনেরো পার্সেন্ট ভ্যাট খরচ করে থাকে। কিন্তু ব্যাংক বাৎসরিক এসএমএস এর চার্জ নামে ২০০ টাকার উপরে আপনার একাউন্ট থেকে টাকা কেটে নিচ্ছে । এতে বুঝা যায় ৩৬ টাকার বিপরীতে আমরা ২০০ টাকা দিলাম তার মানে ১৬৪ টাকা বেশি নিয়ে নিল। আমরা মনে করি একটা স্লাব থাকা দরকার ট্রানজেকশনের জন্য। কত থেকে কতটা ট্রানজেকশন হলে কত টাকা নেওয়া হবে। ঠিক ডেবিট কার্ডও আমরা ওভাবে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু ৫৪৫ টাকার নিচে কোথাও কোন ডেবিট কার্ড আছে বলে আমার মনে হয় না। একজন প্রান্তিক ব্যক্তির পক্ষে বছরে ৩৬ বার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলার জন্য ৫৪৫ টাকা ডেবিট কার্ডের জন্য নেওয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত। এবার আসা যাক এটিএম বুথ সম্প্রসারণ না করে তৃতীয় পক্ষের এটিএম বুথ ব্যবহারের ফলে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ টাকা টেক্স সহ কেটে নেওয়া হয়।

ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং সলভেন্সি সার্টিফিকেট আজকাল খুব দরকার বিশেষ করে ইনকাম ট্যাক্স, বিদেশে চিকিৎসা অথবা ছেলে মেয়েদের বিদেশে পড়াশোনা করানোর জন্য যে সার্টিফিকেট না হলে একেবারেই নয়। আমরা দেখি বাৎসরিক দুবার ব্যাংক স্টেটমেন্ট নেওয়া ফ্রি। কিন্তু ব্যাংক সেই ফ্রিটা অন ডিমান্ড যখন নিতে যায় তখন দেয় না। এখানে দুইটা ফ্রি মানে সফটওয়্যারে কোটা পদ্ধতি থাকবে যেন দুইটা স্টেটমেন্ট নিতে পারে, যে কোন সময়ের জন্য। এর পরবর্তী হলে বছরে তাকে একটা ফি দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটা স্টেটমেন্ট দেওয়ার জন্য সফটওয়্যার একটা ক্লিকই যথেষ্ট। নির্দিষ্ট সংখ্যার পাতার জন্য নির্দিষ্ট হারে টাকা নেওয়া যেতে পারে। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে প্রান্তিক মানুষের থেকে দুই থেকে তিন পাতার স্টেটমেন্টের বিপরীতে যত টুকু ফি নেওয়া হচ্ছে, একশ পাতা নিলেও সেই ফি নেওয়া হচ্ছে অন্যদের কাছ থেকে।

আমরা দেখি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট অংকের একটা এমাউন্ট হোল্ড করে রাখে। এভাবে একেকটা ব্যাংক এক লক্ষ গ্ৰাহকের কাছ থেকে যদি এক হাজার করে হোল্ড করে রাখে প্রতিদিন দশ কোটি টাকা তাদের কোষাগারে জমা থাকে। প্রতিদিন ঐ টাকার ঋণ হিসেবে ব্যাংক সুদ পাচ্ছে প্রায় ৩৩ হাজার টাকা ১২% অনুসারে। কখনো হোল্ড থাকা টাকার বিপরীতে গ্ৰাহকদের লাভ প্রদান হয়েছে বলে মনে হয় না।

আমরা ঠকছি, আমাদেরকে ঠকানো হচ্ছে, আমরা কি ঠকেই যাব?

লেখক:
শেখ জাহাঙ্গীর হাছান মানিক
[email protected]

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

You cannot copy content of this page