Tuesday, May 7, 2024

উখিয়ার দুর্ধর্ষ রাসেল ডাকাতের পৃষ্ঠপোষকতায় কোন জনপ্রতিনিধি?

নিজস্ব প্রতিবেদক:

১৫ টি মামলার আসামী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী শেখ রাসেল ওরফে মোহাম্মদ আবু রাসেল।

উখিয়ার ক্রাইম জোন খ্যাত পালংখালী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য শেখ হাবিবুর রহমানের এই পুত্র টেকনাফ-উখিয়া উপজেলার সংযোগস্থলে বাস করা অর্ধ লক্ষ মানুষের আতংকের নাম, যাকে ডাকা হয় রাসেল ডাকাত নামেও।

থাইংখালী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গহীন পাহাড়ে আস্তানা গেড়ে অপরাধের রাজত্ব কায়েম করা রাসেলের রয়েছে নিজস্ব অস্ত্রধারী বাহিনী।

দীর্ঘ ১০ বছর ধরে গুম,খুন,অপহরণ,অবৈধভাবে বালি উত্তোলন সহ নানা অপরাধ করে চলা রাসেল ও তার ৬ সহযোগীকে ১৫ আগস্ট দিবাগত  রাতে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-১৫।

এসময় রাসেলের আস্তানায় থাকা ৮ টি অস্ত্র, অসংখ্য গোলাবারুদ ও ২০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

রুদ্ধশ্বাস অভিযানের মাধ্যমে অবশেষে রাসেলকে  গ্রেফতার করতে সফল হওয়া র‍্যাব সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, এই বাহিনীর উত্থান ও শক্তিশালী হয়ে উঠার নেপথ্যে ছিলো স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধির পৃষ্ঠপোষকতা।

তদন্তের স্বার্থে জনপ্রতিনিধির নাম প্রকাশ না করলেও গণমাধ্যমকে র‍্যাব-১৫ এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৈয়দ সাদিকুল হক বলেন, “রাসেল বাহিনীর অত্যাচারে স্থানীয়রা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো, এবং কিছু জনপ্রতিনিধির প্ররোচনায় তারা অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিলো।”

রাসেলের অত্যাচারের শিকার স্থানীয়রা বলছেন, বাবা সাবেক জনপ্রতিনিধি ও তার সাথে বর্তমান স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধিদের সাথে সখ্যতা থাকায় সে কাউকে পরোয়া করতো না।

১৮টি মামলার আসামী, ৪টি ফৌজদারি মামলায় আদালতের চূড়ান্ত করা অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত স্বত্তেও নিজেকে জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি দাবি করা আলোচিত চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা গফুর উদ্দিন চৌধুরীকে ইঙ্গিত করেছেন অনেকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পালংখালী ইউপির ৩ নং ওয়ার্ডের এক স্থানীয় ভুক্তভোগী জানান,  ” চেয়ারম্যানের যোগসাজশে রাসেল ভয়ংকর হয়ে উঠে, নির্বাচনেও সে তাকে সহযোগিতা করেছে। আসকারা না পেলে এতো বিশাল বাহিনী দিয়ে আমাদের উপর অত্যাচারের স্টিম রোলার চালানোর ক্ষমতা সে পেতো না।”

আশ্চর্য জনকভাবে রাসেলকে যখন আইনের আওতায় আনলো র‍্যাব, ঠিক তার দিন তিনেক আগে থেকেই নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন না গফুর উদ্দিন চৌধুরী।

পালংখালীর অনেক চায়ের দোকানের এখন বিষয়বস্তু, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে তাদের চেয়ারম্যান অন্যত্র চলে গেছেন।

এমন কথা প্রচার হলে প্রতিবেদক মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন গফুর উদ্দিন চৌধুরীর সাথে।

ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ঢাকায় অবস্থান করছেন জানিয়ে প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ” আমি দুই তিন দিনের মধ্যেই এলাকায় ফিরবো। ”

ডাকাত রাসেলের সাথে পারিবারিক বিরোধ আছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ” আমি তাকে পৃষ্ঠপোষকতা করার প্রশ্নই আসেনা, তার সাথে আমার বিরোধ আছে। বন সন্ত্রাসীরা তাকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। ”

এসময় তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুল হক মার্শালকে রাসেলের প্ররোচনাকারী বলে দায়ী করেন।

এপ্রসঙ্গে শাহীনুল হক মার্শালের বক্তব্য নিতে তার মুঠোফোনে বেশ কবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। তবে জানা গেছে, গফুর উদ্দিন চৌধুরীর সাথে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহীনুল হক মার্শালের পূর্ব বিরোধ আছে।

চলতি মাসের শুরুতে আদালত কতৃক চারটি ফৌজদারি মামলার চূড়ান্ত অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত হওয়ায় গফুর উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি দেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক।

এর আগে ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি টানা তিনবার পালংখালীর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বরত গফুর উদ্দিন চৌধুরীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এদিকে র‍্যাব জানিয়েছে, রাসেল বাহিনীর নেপথ্যে যদি কোন জনপ্রতিনিধির সংশ্লিষ্টতা তদন্তে প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

You cannot copy content of this page