নিজস্ব প্রতিবেদক:
মহেশখালীতে কর্মসৃজন প্রকল্পে এক নারী শ্রমিককে ওয়ার্ড প্রকল্প সভাপতির ইন্ধনে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে মাঝি জয়নাল আবেদীন জনুর বিরুদ্ধে।
মারধরের শিকার ভুক্তভোগী নারী শ্রমিক গোলরাণী বড়ুয়া (৩৬) অভিযোগ করে বলেন, ‘কালারমারছড়া ১ নং ওয়ার্ড উত্তর নলবিলায় কাজ করার সময় অপর শ্রমিক রহিমা ও খাদিজার সাথে তার বাকবিতন্ডা হয়। পরে মাঝি জয়নাল এসে বিষয়টি ওয়ার্ড প্রকল্পের সভাপতি স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য ইসমত আরাকে জানায়। সভাপতির কথায় মাঝি জয়নাল আমাকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে।’ ভুক্তভোগীর অভিযোগ, কর্মসৃজনে শ্রমিক অনুপস্থিতিসহ নানা অনিয়ম নিয়ে পরিদর্শনে আসা অফিসারকে অভিযোগ করায় আগে থেকে তার উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ইসমত আরা। শুধু তাই নয় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পে কালারমার ছড়া ১ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য ইসমত আরার বিরুদ্ধে রয়েছে শ্রমিকদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ। ১ নং ওয়ার্ডে ১৯৮ দিনের প্রকল্পটিতে নারী-পুরুষ মোট শ্রমিক ৫৪ জন, প্রত্যেকের দৈনিক মজুরি ৪’শ টাকা। কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক নুর হোসেন ও সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, মুঠোফোনের নগদ একাউন্টে আসা অর্থ থেকে অর্ধেক টাকা দিতে হয় সভাপতিকে। না দিলে মাঝির মাধ্যমে দৈনিক হাজিরায় অনুপস্থিতি দেখানো হয়। ইতোপূর্বে নুর হোসেন থেকে ৬ হাজার এবং সাইফুল ইসলাম থেকে ৩ হাজার এছাড়াও আরো দুয়েকজনের কাছ থেকে ৯ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেন তারা। এছাড়া দৈনিক ৫৪ জন শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলেও কাজে উপস্থিত থাকে ২৫-৩০ জন। অনেক অনুপস্থিত শ্রমিকদেরকে উপস্থিত দেখিয়ে তাদের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও তুলেন সভাপতির বিরুদ্ধে।
নারী শ্রমিককে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে মাঝি জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘গোলরাণীর সাথে অপর দুই শ্রমিকের দ্বন্দ্ব হলে আমি বিষয়টি সভাপতিকে জানাই। পরে তাদের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে দেই। এছাড়াও গোলরাণীর দেখানো আঘাত পূর্বের বলে দাবী করেন জয়নাল।’
জানতে চাইলে ওই প্রকল্পের সভাপতি মহিলা ইউপি সদস্য ইসমত আরা শ্রমিক গোলরাণীকে মারতে বলার কথা স্বীকার করে বলেন ‘গোলরাণীর বিষয়টি নিয়ে বিকালে বিচার হবে।’ নারী শ্রমিক-কে মারধর করতে বলা এবং এই বিষয়ে বিচার করার এখতিয়ার তার আছে কি না জানতে চাইলে ইউপি সদস্য ইসমত আরা বলেন, আমি মহিলা মেম্বার আমি সব পারি’। শ্রমিকদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন সেটা ইজিপিপি প্রকল্পের উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার জানেন।
ওই প্রকল্পের কালারমারছড়া ১ নং ওয়ার্ড পরিদর্শক সাজ্জাদের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এই প্রকল্পের পূর্বে দায়িত্ব থাকা পরিদর্শক নুরুজ্জামান জানান, কর্মসৃজন প্রকল্পের কালারমারছড়া ১ নং ওয়ার্ড সভাপতি ওই মহিলার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছিলো। শ্রমিকদের হয়রানি করার অভিযোগও ছিলো তার বিরুদ্ধে।
মহেশখালী উপজেলা ইজিপিপি প্রকল্পের প্রকৌশলী পলাশ কুমার রায় জানান, এ-সংক্রান্ত একটি অভিযোগ তারা পেয়েছেন। কাউকে মারধর করার এখতিয়ার সভাপতি কিংবা মাঝির নেই জানিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে। প্রকল্পের ওয়ার্ড সভাপতিকে দিয়ে শ্রমিকদের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে অফিস সম্পৃক্ত নয় বলে জানিয়ে বিষয়টি সত্য নয় বলে জানান।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীকি মারমা জানান, ইজিপিপি প্রকল্পের এক নারী শ্রমিককে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত মাঝিকে প্রকল্পের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। নারী শ্রমিককে মারধরের প্ররোচনা এবং অর্থ হাতিয়ে নেওয়ায় অভিযুক্ত সভাপতি ইসমত আরা-কে শোকজ করা হয়েছে। শিগগিরই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।