Monday, May 6, 2024

সেকেন্ড-ইন-কমান্ডসহ আরসার শীর্ষ ৩ নেতা আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)’র সেকেন্ড-ইন-কমান্ড আবুল হাশিম ও আরসা প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনির দেহরক্ষী’সহ তিন আরসা শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে দেশি-বিদেশি গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২০ এক্সটেনশনের একটি গোপন আস্তানায় র‍্যাব-১৫ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেছে দাবি করে বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) দুপুর ১২ টায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় র‍্যাব।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, উখিয়া ৪নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প, ব্লক-জি/৯ এর আবুল হাসিম (৩১), উখিয়া ১২নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প, ব্লক-এইচ/০১, বালুখালি-২ এর হোসেন জোহার প্রকাশ আলী জোহার(৩২) এবং উখিয়া ৬নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প, ব্লক-ডি/৭ এর মোঃ আলম প্রকাশ শায়ের মুছা (৩৫)। এসময় তাদের কাছ থেকে ২টি বিদেশী অস্ত্র, ১টি দেশীয় তৈরী এলজি এবং ৪ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত ১১ ফেব্রুয়ারি উখিয়ার ২০নং এক্সটেনশন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোঃ আসাদ উল্লাহ নামে এক যুবককে ১০/১৫ জন অজ্ঞাত সন্ত্রাসী গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে। পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া তথ্যে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্তমানে আরসার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড আবুল হাশিম ও আরসা প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনির দেহরক্ষী’সহ তিন আরসা সন্ত্রাসীকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়।

হাসিম যেভাবে আরসা’র সেকেন্ড-ইন-কমান্ড:

আবুল হাসিম ২০১৭ সালে বাংলাদেশে প্রবেশ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বপরিবারে বসবাস শুরু করে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সংগঠন আরসায় যোগদান করে। সে প্রথম দিকে নেট গ্রুপের সদস্য হিসেবে কাজ করতো। এরপর ২০২০-২২ পর্যন্ত ব্লক জিম্মাদারের দায়িত্বে ছিল। তার নেতৃত্বে ক্যাম্প-৪ এবং ক্যাম্প-৪ (বর্ধিত) এ আরসা কর্তৃক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য নতুন করে ঘাঁটি তৈরী করে। যখন র‌্যাব ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক একেক করে আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ গ্রেফতার হয় সন্ত্রাসী সংগঠনটির নেতৃত্বের সংকট দেখা দেয়। ফলশ্রুতিতে করিম উল্লাহ প্রকাশ কলিম উল্লাহ বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর আরসার নেতৃত্ব গ্রহণ করে এবং গ্রেফতারকৃত আবুল হাসিম সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে। সে আরসার শীর্ষ নেতা ওস্তাদ খালিদের নির্দেশনায় ক্যাম্পে সশস্ত্র দায়িত্ব পালন করে থাকে। এছাড়া সে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে সাজাপ্রাপ্ত আরসা সদস্যদের জামিনে মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে এবং আরসার সাংগঠনিক কাজে মায়ানমারে যাতায়াত করতো। সে আরসার সিনিয়র নেতৃবৃন্দদের নির্দেশনা মোতাবেক আরসার আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্রিক শরণার্থী শিবিরে সহিংসতা সৃষ্টি, মারামারি, প্রতিপক্ষ গ্রুপকে ক্যাম্প এলাকা থেকে বিতাড়িত করার জন্য দফায় দফায় সশস্ত্র হামলা, আরসার টার্গেটকৃত মাঝি, সাধারণ রোহিঙ্গা ও বিত্তশালী রোহিঙ্গাদের হত্যা ও অপহরণসহ নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করতো।

গ্রেফতারকৃত আবুল হাসিম ৪নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এরশাদ, ইমাম হোসেন ও সাব মাঝি সৈয়দ আলম হত্যা, ৩নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আব্দুল হামিদ, মোঃ কাসিম ও ইউনুস হত্যা এবং ১৭নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাছিম হত্যার সাথে জড়িত বলে তথ্য পাওয়া যায়। এ সংক্রান্ত বিষয়ে তার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা রয়েছে।

পরিবহন শাখার কমান্ডার ছিলেন জোহার প্রকাশ আলী জোহার:

২০১৭ সালে মায়ানমারে অবস্থানকালে আরসায় যোগদান করে জোহার। আরসার নেতাদের এক স্থান হতে অন্য স্থানে তার মোটরসাইকেল যোগে আনা-নেয়া করতো। পরবর্তীতে সে বাংলাদেশে আসার পর ২০১৯ সালের শুরুতে আরসা নেতা মৌলভী আব্দুর রহমানের মাধ্যমে পুনরায় আরসায় যোগদান করে। এই সময়ে সে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১২ এর আরসার পাহারাদার এবং পরে ব্লক জিম্মাদার হিসেবে কাজ করতো। যারা মায়ানমারে থাকাকালীন আরসার সদস্য হিসেবে নিয়োজিত ছিল এবং ২০১৭ সালে বাংলাদেশে প্রবেশ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে তাদের খুঁজে বের করে পুনরায় আরসায় ফেরত আনা ছিল তার মূল কাজ। ২০২০ সালের প্রথম হতে সে মৌলভী লাল মোহাম্মদ এবং মুফতি আতিক এর সহযোগী হিসেবে আরসার কাচারী বা আদালতে বিচার কাজ করতো। তখন আরসার কাচারীতে বিভিন্ন নির্যাতন ও জরিমানা আদায়ের মূল কাজটা করতো। ২০২২ সালে কোনারপাড়া ডিজিএফআই কর্মকর্তা হত্যাকান্ডের পর আরসার কমান্ডাররা মায়ানমারের অভ্যন্তরে চলে গেলে সে আরসার পরিবহন শাখার কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পায়। এছাড়া আরসা নেতারা ক্যাম্পে চলাচল, হত্যাকান্ড, অগ্নিসংযোগ সহ নানা ধরনের অপকর্ম করার সময় সে তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করতো এবং একই সাথে তাদের এক স্থান হতে অন্য স্থানে যাতায়াতের প্রাক্কালে গাইড হিসেবে কাজ করতো বলে জানায়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে কক্সবাজারের উখিয়া থানায় ২টি মামলা রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়।

আতাউল্লাহ জুনুনীর দেহরক্ষী বোমা তৈরির কারিগর আলম প্রকাশ শায়ের মুছা:

২০১৭ সালে বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও সে ২০১৬ সালে ৯ অক্টোবর আরসা কর্তৃক মায়ানমার পুলিশ ঘাঁটিতে হামলার পর পর আরসায় যোগদান করে। সে মায়ানমারে প্রথমে আরসার পাহারাদার হিসেবে কাজ করতো এবং পরবর্তীতে আরসা নেতাদের এক স্থান হতে অন্য স্থানে গমনাগমনের ক্ষেত্রে তার মোটর সাইকেল যোগে পৌঁছে দিতো। সে বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশের পর ২০১৮ সালের শুরুতে আরসা নেতা মৌলানা হাশিম শরীফ, মুফতি জিয়া এবং মৌলভী আবু আনাসের মাধ্যমে পুনরায় আরসায় যোগদান এবং আরসার সাথী ও ব্লক জিম্মাদার হিসেবে কাজ শুরু করে। পরবর্তী সে ২০১৯ সালে প্রায় ৩ মাস ও ২০২০ সাল হতে প্রায় ২ বছর মায়ানমারে অবস্থান করে এবং সেখানে অবস্থানকালীন সময়ে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বোমা তৈরীর প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়াদির উপর প্রশিক্ষণ নেয়।

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

You cannot copy content of this page