সাইফুল আফ্রিদি :
কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকত আর মেরিনড্রাইভই হচ্ছে পর্যটকদের বিনোদন ও সময় কাটানোর অন্যতম মাধ্যম। মেরিনড্রাইভকে কেন্দ্র করে তাই পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে গড়ে উঠছে নানান ব্যবসা বাণিজ্য। তার মধ্যে অন্যতম মেরিনড্রাইভের রেন্ট বাইক। পর্যটকদের চাহিদা মেটাতে এসব গড়ে উঠলেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে বাইক ভাড়া দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার সরেজমিনে কলাতলী মোড় হয়ে মেরিনড্রাইভ সড়ক ঘুরে কয়েকটি রেন্ট বাইকের স্পট চোখে পড়েছে। কেউ ‘রেন্ট এ বাইক’ সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দোকান খোলেছে, কেউ অন্য জিনিস বেচাকেনার পাশাপাশি দোকানের পাশে বাইক দাঁড় করিয়ে ‘বাইক ভাড়া দেওয়া হয়’ লেখা সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। আবার কেউ কেউ গ্যারেজের সামনে সারি সারি রেখেছে বিভিন্ন মডেলের ইয়ামাহা, এফজেড,জিক্সার, হিরো, টিভিএস, এপাসি, পালসারসহ নামীদামী ব্রান্ডের মোটরসাইকেল ও রানারের স্কুটি।
পর্যটকের পাশাপাশি স্থানীয় তরুণ তরুণীদের স্কুটি,বাইক নিয়ে মেরিনড্রাইভে ঘুরতে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। তবে অদক্ষ ছেলে-মেয়ে,কলেজ ছাত্র -ছাত্রীদেরকেও এসব গাড়ী ভাড়া দেয় তারা।
সোমবার (২২ জানুয়ারী) মেরিন ড্রাইভ সড়কে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কক্সবাজার সরকারী কলেজের এক ছাত্রী নিহত হয়, আহত হয় তার সাথে থাকা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের এক ছাত্র। এরপর থেকে প্রশ্ন উঠে নিরাপদ রাইডের। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কিভাবে এসব দোকানগুলো পর্যটক ও তরুণ-তরুণীদের মাঝে মোটরসাইকেল ভাড়া দিচ্ছে? পর্যটকদের নিরাপত্তায় এই ক্ষেত্রে উঠে আসছে প্রশাসনের ভূমিকার কথা।
বাইক ভাড়া দেয়া প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিঘন্টা ৩’শ টাকা করে সর্বনিম্ন ৩ ঘন্টার জন্য ৯’শ টাকায় মোটর সাইকেল ভাড়া দেয়া হয়। আবার প্রতি ৪ ঘন্টার জন্য আছে ১ হজার টাকার প্যাকেজ। মোটর সাইকেল ভাড়া নিতে কি কি কাগজপত্র জমা দিতে হয় সেই বিষয়ে জানতে চাইলে বাইক মালিকরা জানায়- জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে জমা নেওয়া হয় না থাকলে নাই, নিশ্চিত করা হয় না ড্রাইভিং লাইসেন্স। এসব ছাড়াও নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করেই ২ হাজার টাকা অতিরিক্ত জামানত দিয়ে মোটর সাইকেল ভাড়া নিতে পারে যে কেউ।
ভাড়া গাড়ি চালানোর সময় ট্যুরিস্ট পুলিশ কিংবা ট্রাফিক পুলিশ আটকাবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে গাড়ির মালিক বলেন- “যেখানে পুলিশের হাতে পড়বেন, তাদের সাথে সর্বোচ্চ ভাল আচরণ করবেন। যদি ছেড়ে না দেয় তবে আমাদের নাম্বারে ফোন দিবেন। বাকিটা আমরা ম্যানেজ করে নিব।”
মালিকদের একজনের সাথে প্রশাসনের
লোকের বেশ সখ্যতা দেখা গিয়েছে। গাড়ি ভাড়া দেওয়ার ফাঁকে ওই মালিক মুঠোফোনে বলতে শোনা যায়, ভাইয়া, আজকে অভিযান আছে? অভিযান থাকলে একটু জানায়েন। আজকে ডলফিন মোড়েও গাড়ি ধরতে দেখলাম। এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।
এই বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের কক্সবাজার শাখার সভাপতি জসিম উদ্দীন কিশোর জানান- সড়কে গাড়ি চালানোর জন্য গাড়ি ও চালকের লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। এই নীতি অনুসরণ না করে যারা মোটর সাইকেল ভাড়া দিচ্ছে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের জরিমানা করতে হবে। পাশাপাশি দায়িত্বরত পুলিশ ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সেক্ষেত্রে মেরিন ড্রাইভ সড়কে দুর্ঘটনা ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি আপেল মাহমুদ জানান- পর্যটন এলাকায় পর্যটকরা আনন্দ উল্লাস করতে আসে। সেক্ষেত্রে মোটর সাইকেল ভাড়া দেয়ার বিষয়টি একেবারে বন্ধ করা যাবে না। তবে মোটরসাইকেল ভাড়া দেয়ার আগে লাইসেন্স আছে কি না নিশ্চিত করার জন্য মালিকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ইতিমধ্যে ভাড়া দেয়া মোটর সাইকেল মালিকদের ডাকা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইয়ামিন হোসেন বলেন- “ অদক্ষ ছেলেমেয়েদের মোটরসাইকেল ভাড়া দেয়ার বিষয়টি জানা ছিল না। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। যাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কেউ মোটর সাইকেল ভাড়া দিতে না পারে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”