ঢাকা ০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বিজ্ঞাপনী সংস্থা কক্স এ্যাড ও ফাহিম এ্যাড এর মালিক আবছার,হারুন ও জাহেদ এর বিরুদ্ব্যে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদ রমজানে পণ্য মূল্যের কোন ব্যত্যয় হবে না- বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা পাসপোর্টে থাকছে না পুলিশ ভেরিফিকেশন রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় দাসের জামিন কেন নয়: হাইকোর্টের রুল যুক্তরাজ্যের মানবাধিকারবিষয়ক রাষ্ট্রদূত ঘুরে দেখলেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কর্মকর্তার লকার ফ্রিজ করতে গভর্নরকে দুদকের চিঠি দেশে ক্যানসার চিকিৎসা এখনও অপ্রতুল শাবান মাসে নফল রোজা রাখবেন যেভাবে বিপিএলে যেমন খেলছেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাংলাদেশ স্কোয়াডের ১৫ তারকা ‘চট্টল সুরাঙ্গন’- এর অভিষেক অনুষ্ঠান যেন সংস্কৃতিপ্রেমীদের মিলনমেলা.. গানে-আনন্দে সত্যেন সেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর প্রীতি সম্মিলন সম্পন্ন মিয়ানমার সীমান্তে আবারো মাইন বিস্ফোরণ, যুবকের পা বিচ্ছিন্ন মহেশখালী প্রেসক্লাবের নির্বাচন সম্পন্ন: সভাপতি-জয়নাল, সা: সম্পাদক-জিকু পরিবেশ অপরাধে জর্জরিত পালংখালী!  সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে প্রশাসনের নাভিশ্বাস কক্সবাজারে শতাধিক মন্ডপে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা..
অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া গমন

‘স্বেচ্ছায় পাচার’ হতে গিয়ে ফিরলেন লাশ হয়ে

স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ী থেকে বের হয় রহমত উল্লাহ। উদ্দেশ্য মালয়েশিয়া গমন। সাথে ছিলো তার আরেক মামাতো ভাইও। রহমত উল্লাহ (৪৫) রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ির চরপাড়া এলাকার মো: কাশেমের পুত্র।

টেকনাফ থেকে অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে প্রতিবেশী জাহাঙ্গীর। সহযাত্রী ছিল তারই এলাকার আরও ৯ জন।

তবে মালয়েশিয়া আর যাওয়া হলোনা রহমতের। ফিরলেন লাশ হয়ে। টেকনাফের ডেইলপাড়া এলাকার মানবপাচারের ডেরা থেকে পালানোর সময় ডাকাতের হাতে মৃত্যু হয় রহমত উল্লাহর। নিখোঁজ আছেন তার সাথে যাওয়া মামাতো ভাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ডেরা থেকে পালিয়ে আসা একজনের স্বজন জানান, শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চেইন্দা থেকে জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে রহমত উল্লাহসহ ৬ জনকে নিয়ে যাওয়া হয় টেকনাফ ডেইলপাড়া এলাকায়। পরদিন মনির, তারেক, অলি উল্লাহ ও মনু নামের আরও ৪ জনকে কৌশলে নিয়ে যায় ওই জাহাঙ্গীর। গাড়ীর ড্রাইভারসহ মোট ১১ জনকে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখায় জাহাঙ্গীর।

এই স্বজন আরো জানান, মূলত পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে এমন প্রলোভনে পড়ে যায় তারা। তবে টেকনাফ নিয়ে পাঁচদিন বন্দী করে রাখে ওই ১১ জনকে। পরে মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সকালে তারা জানালা দিয়ে পালিয়ে আসার সময় মারধরের শিকার হন। পরে দালালদের হাত থেকে নয় জন বেঁচে ফিরতে পারলেও ফিরতে পারেনি রহমত উল্লাহ।

এক স্বজন বলেন, “এরমধ্যে ২ জন ফিরেছেন এক লক্ষ টাকা মুক্তিপন দিয়ে।”

নিহত রহমত উল্লাহর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সফুরা খাতুন জানান, দালালচক্রের গোপন আস্তানা থেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তার স্বামী। তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে আনেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

সফুরা জানান, এমন খবর পেয়ে তার বোন জামাইসহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আসার ১০ মিনিট পর মৃত্যু হয় তার স্বামীর।

সফুরার বোন জামাই মো: রাসেল জানান, শুক্রবার থেকে খোঁজ না পাওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েন তারা। মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ তিনি খবর পান টেকনাফে যাওয়া সেই ১১ জনকে মারধর করেছে দালাল চক্র। তবে সেখানে রহমত উল্লাহর নাম খুঁজে পাননি তিনি। পরে তার কাছে খবর আসে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রহমত উল্লাহ নামের একজন ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় আনা হয়েছে।

রাসেল বলেন, “হাসপাতালে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাদেরকে জানান ছুরিকাঘাতের ফলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যু হয়েছে রহমত উল্লাহর। এছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারধরের চিহ্ন পাওয়া গেছে।”

রাসেল জানান, এ ঘটনায় রহমত উল্লাহর মামাতো ভাই এখনও নিখোঁজ রয়েছে। তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে দালালরা।

এ ঘটনা টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: গিয়াস উদ্দিন মুঠোফোনে জানান, এধরণের কোনো ঘটনা সম্পর্কে অবগত নন তিনি। তবে বিষয়টির খোঁজ খবর নিয়ে তদন্ত করা হবে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান। তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছেন। মানবপাচার বিষয়টি নিয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের এখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উন্নত জীবনের আশায় ‘স্বেচ্ছায় পাচার’ হন। সাগরে মৃত্যুর ঝুঁকি আছে জেনেও তারা এ পন্থায় বিদেশে যেতে চান দালালদের মাধ্যেম।”

এই ‘স্বেচ্ছায় পাচার’ বিষয়টির কারবে মানবপাচার ঠেকানো অনেকাংশে কঠিন বলে মনে করেন মিজানুর রহমান।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

বিজ্ঞাপনী সংস্থা কক্স এ্যাড ও ফাহিম এ্যাড এর মালিক আবছার,হারুন ও জাহেদ এর বিরুদ্ব্যে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদ

This will close in 6 seconds

অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া গমন

‘স্বেচ্ছায় পাচার’ হতে গিয়ে ফিরলেন লাশ হয়ে

আপডেট সময় : ০১:৫৭:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫

স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ী থেকে বের হয় রহমত উল্লাহ। উদ্দেশ্য মালয়েশিয়া গমন। সাথে ছিলো তার আরেক মামাতো ভাইও। রহমত উল্লাহ (৪৫) রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ির চরপাড়া এলাকার মো: কাশেমের পুত্র।

টেকনাফ থেকে অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে প্রতিবেশী জাহাঙ্গীর। সহযাত্রী ছিল তারই এলাকার আরও ৯ জন।

তবে মালয়েশিয়া আর যাওয়া হলোনা রহমতের। ফিরলেন লাশ হয়ে। টেকনাফের ডেইলপাড়া এলাকার মানবপাচারের ডেরা থেকে পালানোর সময় ডাকাতের হাতে মৃত্যু হয় রহমত উল্লাহর। নিখোঁজ আছেন তার সাথে যাওয়া মামাতো ভাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ডেরা থেকে পালিয়ে আসা একজনের স্বজন জানান, শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চেইন্দা থেকে জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে রহমত উল্লাহসহ ৬ জনকে নিয়ে যাওয়া হয় টেকনাফ ডেইলপাড়া এলাকায়। পরদিন মনির, তারেক, অলি উল্লাহ ও মনু নামের আরও ৪ জনকে কৌশলে নিয়ে যায় ওই জাহাঙ্গীর। গাড়ীর ড্রাইভারসহ মোট ১১ জনকে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখায় জাহাঙ্গীর।

এই স্বজন আরো জানান, মূলত পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে এমন প্রলোভনে পড়ে যায় তারা। তবে টেকনাফ নিয়ে পাঁচদিন বন্দী করে রাখে ওই ১১ জনকে। পরে মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সকালে তারা জানালা দিয়ে পালিয়ে আসার সময় মারধরের শিকার হন। পরে দালালদের হাত থেকে নয় জন বেঁচে ফিরতে পারলেও ফিরতে পারেনি রহমত উল্লাহ।

এক স্বজন বলেন, “এরমধ্যে ২ জন ফিরেছেন এক লক্ষ টাকা মুক্তিপন দিয়ে।”

নিহত রহমত উল্লাহর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সফুরা খাতুন জানান, দালালচক্রের গোপন আস্তানা থেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তার স্বামী। তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে আনেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

সফুরা জানান, এমন খবর পেয়ে তার বোন জামাইসহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আসার ১০ মিনিট পর মৃত্যু হয় তার স্বামীর।

সফুরার বোন জামাই মো: রাসেল জানান, শুক্রবার থেকে খোঁজ না পাওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েন তারা। মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ তিনি খবর পান টেকনাফে যাওয়া সেই ১১ জনকে মারধর করেছে দালাল চক্র। তবে সেখানে রহমত উল্লাহর নাম খুঁজে পাননি তিনি। পরে তার কাছে খবর আসে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রহমত উল্লাহ নামের একজন ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় আনা হয়েছে।

রাসেল বলেন, “হাসপাতালে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাদেরকে জানান ছুরিকাঘাতের ফলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যু হয়েছে রহমত উল্লাহর। এছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারধরের চিহ্ন পাওয়া গেছে।”

রাসেল জানান, এ ঘটনায় রহমত উল্লাহর মামাতো ভাই এখনও নিখোঁজ রয়েছে। তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে দালালরা।

এ ঘটনা টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: গিয়াস উদ্দিন মুঠোফোনে জানান, এধরণের কোনো ঘটনা সম্পর্কে অবগত নন তিনি। তবে বিষয়টির খোঁজ খবর নিয়ে তদন্ত করা হবে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান। তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছেন। মানবপাচার বিষয়টি নিয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের এখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উন্নত জীবনের আশায় ‘স্বেচ্ছায় পাচার’ হন। সাগরে মৃত্যুর ঝুঁকি আছে জেনেও তারা এ পন্থায় বিদেশে যেতে চান দালালদের মাধ্যেম।”

এই ‘স্বেচ্ছায় পাচার’ বিষয়টির কারবে মানবপাচার ঠেকানো অনেকাংশে কঠিন বলে মনে করেন মিজানুর রহমান।