ঢাকা ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
জামালপুরের ‘যৌনপল্লী’ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প – মাদকের এডি দিদারুলের যত অপকর্ম! সাংবাদিককে ফাঁসাতে কক্সবাজার মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের লাইভ নাটক! “আমার বোনের কান্না, আর না-আর না” পেকুয়ার বানৌজা শেখ হাসিনা নৌঘাঁটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে বানৌজা পেকুয়া পেকুয়ার নৌঘাঁটি সহ সামরিক বাহিনীর ৮ সংস্থা-স্থাপনার নাম পরিবর্তন ধর্ম উপদেষ্টা কক্সবাজার আসছেন সোমবার: জেলা মডেল মসজিদ উদ্বোধন করবেন চকরিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান: ৫৯ হাজার টাকা জরিমানা মব ভায়োল্যান্স সৃষ্টিকারী সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে: মাহফুজ আলম ব্যারিস্টার সাফফাত ফারদিন চৌধুরী – মরিচ্যাপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন সভাপতি রিজার্ভ এখন ২১.৪০ বিলিয়ন ডলার ধর্ষণের মামলা ৯০ দিনে শেষ করতে আইন হচ্ছে : উপদেষ্টা বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর পরিচালনা বোর্ডের সদস্য হলেন কাজল বদরখালীতে মহেশখালী পারাপারের গাড়ি যখন ইচ্ছে আটকে দিচ্ছে কতিপয় লোকজন কন্যা শিশুদের সাথে লেডিস ক্লাব, কক্সবাজারের আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উখিয়ায় পরিত্যক্ত ব্যাগে মিললো ৫০ হাজার ইয়াবা

সোডিয়াম লবণের বিকল্প গ্রহণের পরামর্শ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ও আমাদের অবস্থান

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, সম্প্রতি নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে যেখানে পরামর্শ হচ্ছে “ঘরে নিয়মিত লবণ ব্যবহার না করে কম সোডিয়ামযুক্ত বিকল্প লবণ গ্রহণের”। কিন্তু লবণের বিকল্প গুলি আসলে কী? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তথা WHO কেন এটি সুপারিশ করছে? আসুন একবার দেখে নেওয়া যাক।

একটি বহুল পুরানো সমস্যার নতুন সমাধান কোন পথে?

লবণ (সোডিয়াম ক্লোরাইড) কম খাওয়ার পরামর্শ নতুন নয়। এটি কয়েক দশক ধরে আন্তর্জাতিক নির্দেশিকা গুলির একটি অংশ। কারণ স্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে লবণে থাকা সোডিয়াম আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে যখন আমরা এটি খুব বেশি গ্ৰহণ করি।

অতিরিক্ত সোডিয়াম ক্লোরাইড গ্ৰহণ উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়, যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। উচ্চ রক্তচাপ: হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

WHO অনুমান করে যে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ১.৯ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর কারণ হলো অতিরিক্ত লবণ খাওয়া। তারা প্রতিদিন ২ গ্রামের বেশি সোডিয়াম গ্রহণ না করার পরামর্শ দেয়। তবে, মানুষ গড়ে এর দ্বিগুণেরও বেশি খায়, যা প্রায় ৪.৩ গ্রাম দিনে। আর বাংলাদেশে বিসিক বলছে ১৪.৫ গ্ৰাম দৈনিক লবণ প্রয়োজন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের (তাদের বাৎসরিক লবণের চাহিদা ও উৎপাদন এর তথ্য অনুসারে)।

২০১৩ সালে, WHO’র সদস্য রাষ্ট্রগুলি ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০% সোডিয়াম গ্রহণ কমানোর বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল (লবণ গ্রহণ কমাতে এবং জীবন রক্ষা করতে ব্যাপক প্রচেষ্টা প্রয়োজন, ৯ মার্চ ২০২৩)। কিন্তু লবণ গ্রহণ কমানো খুবই কঠিন কাজ বলে প্রমাণিত হয়েছে এই সময়ের মধ্যে। বেশিরভাগ দেশ ২০২৫ সালের মধ্যে WHO এর সোডিয়াম গ্রহণ কমানোর লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে না তাই WHO আবার ২০৩০ সালের জন্য একই লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

মুশকিল হলো, কম লবণ খাওয়ার অর্থ হল কম লবণাক্ত স্বাদ গ্রহণ করা। এর জন্য খাবার তৈরির প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এটি প্রমাণিত হয়েছে যে শুধুমাত্র বাড়িতে খাবার তৈরির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত লবণের ব্যবহার অপ্রয়োজনীয় নয়, বরং খাদ্য শিল্পের ক্ষেত্রেও এটি অত্যধিক অপ্রয়োজনীয়।

পটাশিয়াম সমৃদ্ধ লবণের ব্যবহার বৃদ্ধিতে সুবিধা সমূহ:

কম সোডিয়াম লবণের প্রধান বিকল্প হল পটাসিয়াম সমৃদ্ধ লবণ। এটি এমন লবণ যেখানে সোডিয়াম ক্লোরাইডের কিছু অংশ পটাসিয়াম ক্লোরাইড দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়।

পটাশিয়াম একটি অপরিহার্য খনিজ , যা শরীরের সকল কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাজা ফল এবং শাকসবজিতে উচ্চ পটাশিয়াম থাকায় এগুলো মানুষের জন্য এত ভালো হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। যদিও মানুষ তাদের প্রয়োজনের চেয়েও বেশি সোডিয়াম খাচ্ছে, তবুও অনেকেই পর্যাপ্ত পটাশিয়াম পাচ্ছে না কারণ পটাশিয়াম যুক্ত খাবার আমরা খুব কম গ্ৰহণ করছি।

WHO দৈনিক ৩.৫ গ্রাম পটাসিয়াম গ্রহণের পরামর্শ দেয়, কিন্তু সামগ্রিকভাবে, বেশিরভাগ দেশের মানুষ এর চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম পটাসিয়াম গ্রহণ করে থাকে।

পটাশিয়াম সমৃদ্ধ লবণ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তাই সোডিয়াম গ্রহণ কমিয়ে এবং আমাদের খাদ্য তালিকায় পটাশিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া দরকার, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করবে। বিশ্বজুড়ে বড় পরীক্ষায় দেখা গেছে যে নিয়মিত লবণের পরিবর্তে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ লবণ গ্রহণ করলে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি কমে ।

মডেলিং গবেষণায় দেখা গেছে যে মানুষ পটাসিয়াম সমৃদ্ধ লবণ ব্যবহারের দিকে স্যুইচ করলে প্রতি বছর শুধুমাত্র চীন এবং ভারতেই হৃদরোগ (যেমন হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক) থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু রোধ করা যাবে।

লবণ গ্রহণ কমানোর পরিবর্তনের মূল সুবিধা হল, পটাসিয়াম সমৃদ্ধ লবণের ব্যবহারে বেশিরভাগ মানুষ স্বাদে কোনও গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য লক্ষ্য করেন না ।

লবণের ব্যবহারে পরিবর্তন আনতে চ্যালেঞ্জ সমূহ:

যদি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এটি হতে পারে WHO এর দেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শগুলির মধ্যে একটি।

খাবার তৈরির পদ্ধতিতে সামান্য পরিবর্তন আনা গেলে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু এই পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে কিছু বাধা অতিক্রম করতে হবে।

প্রথমত, সুবিধা এবং ঝুঁকির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা পটাসিয়াম ভালভাবে ব্যবহার করতে পারেন না, তাই পটাশিয়াম তাদের জন্য উপযুক্ত নয়। যদিও এরা জনসংখ্যার একটি ছোট অংশ, তবে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে পটাসিয়াম সমৃদ্ধ লবণ যুক্ত পণ্য গুলিতে যথাযথ সতর্কতা লেবেল যুক্ত করা হয়েছে।

পটাশিয়াম সমৃদ্ধ লবণকে আরও সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য করে তোলা একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হবে। সোডিয়াম ক্লোরাইডের তুলনায় পটাশিয়াম ক্লোরাইড উৎপাদন ব্যয়বহুল, এবং বর্তমানে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ লবণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটি বিশেষ স্বাস্থ্য পণ্য হিসেবে প্রিমিয়াম মূল্যে বিক্রি হয় ।

লবণের বিকল্প গুলিকে কম-সোডিয়াম লবণ, পটাসিয়াম লবণ, খনিজ লবণ, অথবা সোডিয়াম-হ্রাসকৃত লবণও বলা যেতে পারে। বাংলাদেশে উৎপাদিত লবণকে অবশ্যই কম সোডিয়াম লবণ বলা যেতে পারে, পরীক্ষায় দেখা গেছে দেশে উৎপাদিত লবণে প্রায় ৭৩% সোডিয়াম ক্লোরাইড বিদ্যমান। আয়োডিনযুক্ত লবণ আইন ২০২১ এ বলা হচ্ছে বাজারজাত করণ লবণে সোডিয়াম ক্লোরাইড থাকতে হবে ৯৬% (সর্বনিম্ন)। আমাদের বিকল্প গুলোর চিন্তা করতে হবে। ২০২১ সালে প্রকাশিত (বিশ্বব্যাপী কম-সোডিয়াম লবণের প্রাপ্যতা, প্রণয়ন, লেবেলিং এবং মূল্য: পরিবেশগত স্ক্যান) এর পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে কম সোডিয়ামযুক্ত লবণ মাত্র ৪৭টি দেশে বাজারজাত করা হয়েছিলো, বেশিরভাগই উচ্চ-আয়ের দেশ গুলিতে। দাম নিয়মিত লবণের থেকে প্রায় ১৫ গুণ বেশি ছিল।

পণ্যটির ব্যাপক প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য, একটি সম্প্রসারিত সরবরাহ ব্যবস্থা প্রয়োজন হবে যা আরও বেশি খাদ্যে পটাসিয়াম ক্লোরাইড পাওয়া যাবে। এবং নিয়মিত লবণের পাশাপাশি আমরা পটাসিয়াম-সমৃদ্ধ লবণও রাখবো যাতে লোকেদের এটি খুঁজে পেতে সহজ হয়।

কিছু দেশে ব্যবহৃত লবণের প্রায় ৮০% প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে আসে । খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত লবণের পরিবর্তনকে স্পষ্টভাবে অগ্রাধিকার না দিলে WHO এর নির্দেশিকাটি ব্যর্থ হবে। স্বাস্থ্য সুবিধা সর্বাধিক করার জন্য খাদ্য শিল্পের প্রচারণাতে স্টেকহোল্ডারদের সাথে সরকারের কাজ করা অপরিহার্য।

তথ্য: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য জার্নাল

লেখক
শেখ জাহাঙ্গীর হাছান মানিক
( লবণ গবেষক)
sheikh.jhm@gmail.com

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

জামালপুরের ‘যৌনপল্লী’ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প – মাদকের এডি দিদারুলের যত অপকর্ম!

This will close in 6 seconds

সোডিয়াম লবণের বিকল্প গ্রহণের পরামর্শ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ও আমাদের অবস্থান

আপডেট সময় : ১১:৫৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, সম্প্রতি নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে যেখানে পরামর্শ হচ্ছে “ঘরে নিয়মিত লবণ ব্যবহার না করে কম সোডিয়ামযুক্ত বিকল্প লবণ গ্রহণের”। কিন্তু লবণের বিকল্প গুলি আসলে কী? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তথা WHO কেন এটি সুপারিশ করছে? আসুন একবার দেখে নেওয়া যাক।

একটি বহুল পুরানো সমস্যার নতুন সমাধান কোন পথে?

লবণ (সোডিয়াম ক্লোরাইড) কম খাওয়ার পরামর্শ নতুন নয়। এটি কয়েক দশক ধরে আন্তর্জাতিক নির্দেশিকা গুলির একটি অংশ। কারণ স্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে লবণে থাকা সোডিয়াম আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে যখন আমরা এটি খুব বেশি গ্ৰহণ করি।

অতিরিক্ত সোডিয়াম ক্লোরাইড গ্ৰহণ উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়, যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। উচ্চ রক্তচাপ: হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

WHO অনুমান করে যে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ১.৯ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর কারণ হলো অতিরিক্ত লবণ খাওয়া। তারা প্রতিদিন ২ গ্রামের বেশি সোডিয়াম গ্রহণ না করার পরামর্শ দেয়। তবে, মানুষ গড়ে এর দ্বিগুণেরও বেশি খায়, যা প্রায় ৪.৩ গ্রাম দিনে। আর বাংলাদেশে বিসিক বলছে ১৪.৫ গ্ৰাম দৈনিক লবণ প্রয়োজন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের (তাদের বাৎসরিক লবণের চাহিদা ও উৎপাদন এর তথ্য অনুসারে)।

২০১৩ সালে, WHO’র সদস্য রাষ্ট্রগুলি ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০% সোডিয়াম গ্রহণ কমানোর বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল (লবণ গ্রহণ কমাতে এবং জীবন রক্ষা করতে ব্যাপক প্রচেষ্টা প্রয়োজন, ৯ মার্চ ২০২৩)। কিন্তু লবণ গ্রহণ কমানো খুবই কঠিন কাজ বলে প্রমাণিত হয়েছে এই সময়ের মধ্যে। বেশিরভাগ দেশ ২০২৫ সালের মধ্যে WHO এর সোডিয়াম গ্রহণ কমানোর লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে না তাই WHO আবার ২০৩০ সালের জন্য একই লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

মুশকিল হলো, কম লবণ খাওয়ার অর্থ হল কম লবণাক্ত স্বাদ গ্রহণ করা। এর জন্য খাবার তৈরির প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এটি প্রমাণিত হয়েছে যে শুধুমাত্র বাড়িতে খাবার তৈরির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত লবণের ব্যবহার অপ্রয়োজনীয় নয়, বরং খাদ্য শিল্পের ক্ষেত্রেও এটি অত্যধিক অপ্রয়োজনীয়।

পটাশিয়াম সমৃদ্ধ লবণের ব্যবহার বৃদ্ধিতে সুবিধা সমূহ:

কম সোডিয়াম লবণের প্রধান বিকল্প হল পটাসিয়াম সমৃদ্ধ লবণ। এটি এমন লবণ যেখানে সোডিয়াম ক্লোরাইডের কিছু অংশ পটাসিয়াম ক্লোরাইড দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়।

পটাশিয়াম একটি অপরিহার্য খনিজ , যা শরীরের সকল কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাজা ফল এবং শাকসবজিতে উচ্চ পটাশিয়াম থাকায় এগুলো মানুষের জন্য এত ভালো হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। যদিও মানুষ তাদের প্রয়োজনের চেয়েও বেশি সোডিয়াম খাচ্ছে, তবুও অনেকেই পর্যাপ্ত পটাশিয়াম পাচ্ছে না কারণ পটাশিয়াম যুক্ত খাবার আমরা খুব কম গ্ৰহণ করছি।

WHO দৈনিক ৩.৫ গ্রাম পটাসিয়াম গ্রহণের পরামর্শ দেয়, কিন্তু সামগ্রিকভাবে, বেশিরভাগ দেশের মানুষ এর চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম পটাসিয়াম গ্রহণ করে থাকে।

পটাশিয়াম সমৃদ্ধ লবণ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তাই সোডিয়াম গ্রহণ কমিয়ে এবং আমাদের খাদ্য তালিকায় পটাশিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া দরকার, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করবে। বিশ্বজুড়ে বড় পরীক্ষায় দেখা গেছে যে নিয়মিত লবণের পরিবর্তে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ লবণ গ্রহণ করলে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি কমে ।

মডেলিং গবেষণায় দেখা গেছে যে মানুষ পটাসিয়াম সমৃদ্ধ লবণ ব্যবহারের দিকে স্যুইচ করলে প্রতি বছর শুধুমাত্র চীন এবং ভারতেই হৃদরোগ (যেমন হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক) থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু রোধ করা যাবে।

লবণ গ্রহণ কমানোর পরিবর্তনের মূল সুবিধা হল, পটাসিয়াম সমৃদ্ধ লবণের ব্যবহারে বেশিরভাগ মানুষ স্বাদে কোনও গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য লক্ষ্য করেন না ।

লবণের ব্যবহারে পরিবর্তন আনতে চ্যালেঞ্জ সমূহ:

যদি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এটি হতে পারে WHO এর দেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শগুলির মধ্যে একটি।

খাবার তৈরির পদ্ধতিতে সামান্য পরিবর্তন আনা গেলে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু এই পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে কিছু বাধা অতিক্রম করতে হবে।

প্রথমত, সুবিধা এবং ঝুঁকির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা পটাসিয়াম ভালভাবে ব্যবহার করতে পারেন না, তাই পটাশিয়াম তাদের জন্য উপযুক্ত নয়। যদিও এরা জনসংখ্যার একটি ছোট অংশ, তবে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে পটাসিয়াম সমৃদ্ধ লবণ যুক্ত পণ্য গুলিতে যথাযথ সতর্কতা লেবেল যুক্ত করা হয়েছে।

পটাশিয়াম সমৃদ্ধ লবণকে আরও সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য করে তোলা একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হবে। সোডিয়াম ক্লোরাইডের তুলনায় পটাশিয়াম ক্লোরাইড উৎপাদন ব্যয়বহুল, এবং বর্তমানে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ লবণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটি বিশেষ স্বাস্থ্য পণ্য হিসেবে প্রিমিয়াম মূল্যে বিক্রি হয় ।

লবণের বিকল্প গুলিকে কম-সোডিয়াম লবণ, পটাসিয়াম লবণ, খনিজ লবণ, অথবা সোডিয়াম-হ্রাসকৃত লবণও বলা যেতে পারে। বাংলাদেশে উৎপাদিত লবণকে অবশ্যই কম সোডিয়াম লবণ বলা যেতে পারে, পরীক্ষায় দেখা গেছে দেশে উৎপাদিত লবণে প্রায় ৭৩% সোডিয়াম ক্লোরাইড বিদ্যমান। আয়োডিনযুক্ত লবণ আইন ২০২১ এ বলা হচ্ছে বাজারজাত করণ লবণে সোডিয়াম ক্লোরাইড থাকতে হবে ৯৬% (সর্বনিম্ন)। আমাদের বিকল্প গুলোর চিন্তা করতে হবে। ২০২১ সালে প্রকাশিত (বিশ্বব্যাপী কম-সোডিয়াম লবণের প্রাপ্যতা, প্রণয়ন, লেবেলিং এবং মূল্য: পরিবেশগত স্ক্যান) এর পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে কম সোডিয়ামযুক্ত লবণ মাত্র ৪৭টি দেশে বাজারজাত করা হয়েছিলো, বেশিরভাগই উচ্চ-আয়ের দেশ গুলিতে। দাম নিয়মিত লবণের থেকে প্রায় ১৫ গুণ বেশি ছিল।

পণ্যটির ব্যাপক প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য, একটি সম্প্রসারিত সরবরাহ ব্যবস্থা প্রয়োজন হবে যা আরও বেশি খাদ্যে পটাসিয়াম ক্লোরাইড পাওয়া যাবে। এবং নিয়মিত লবণের পাশাপাশি আমরা পটাসিয়াম-সমৃদ্ধ লবণও রাখবো যাতে লোকেদের এটি খুঁজে পেতে সহজ হয়।

কিছু দেশে ব্যবহৃত লবণের প্রায় ৮০% প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে আসে । খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত লবণের পরিবর্তনকে স্পষ্টভাবে অগ্রাধিকার না দিলে WHO এর নির্দেশিকাটি ব্যর্থ হবে। স্বাস্থ্য সুবিধা সর্বাধিক করার জন্য খাদ্য শিল্পের প্রচারণাতে স্টেকহোল্ডারদের সাথে সরকারের কাজ করা অপরিহার্য।

তথ্য: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য জার্নাল

লেখক
শেখ জাহাঙ্গীর হাছান মানিক
( লবণ গবেষক)
sheikh.jhm@gmail.com