জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস বেশ কয়েকটি প্রধান বৈশ্বিক সংকট, বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত মোকাবেলার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। এই সমালোচনা গুলি দ্বিমুখীতা, অদক্ষতা এবং প্রয়োগকারী ক্ষমতার অভাবের অভিযোগ থেকে উদ্ভূত হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান আমরা দেখছি যেমনটি বিবিসি কে ভলকার তুর্ক বলেছেন “বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সতর্ক করেছিলাম (২০২৪, জুলাই), ফলশ্রুতিতে পরিবর্তন দেখলাম”।
এখন এমন কাউকে সতর্ক করে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে অবদান রাখতে পারেন তুর্ক।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংকটে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস কি করছে?
সমালোচকরা ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী (তাতমাদো) কর্তৃক রোহিঙ্গা জনগণের জাতিগত নির্মূল এবং ‘গণহত্যা’ রোধ করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য জাতিসংঘের সমালোচনা করছে।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগণের ‘গণহত্যা’ এবং জাতিগত নির্মূল প্রতিরোধে ব্যর্থতার জন্য জাতিসংঘ ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। জাতিসংঘের প্রাক্তন কূটনীতিক গার্ট রোজেনথাল প্রাথমিক সতর্কতা এবং সংকট প্রতিক্রিয়ায় পদ্ধতিগত ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন (রোজেনথাল, ২০১৯)। জাতিসংঘ সেই সতর্কীকরণকে উপেক্ষায় যারা জড়িত ছিলেন তাদের বিষয়ে নিশ্চয়ই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বা করবে। তুর্ক এর এখন সে দিকটায় নজর দেওয়া উচিত যেমনটি বাংলাদেশ বিষয়ে বিশেষ নজর দিচ্ছেন।
তারা মায়ানমারে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে সমালোচকরা বলেন।মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) মামলা সত্ত্বেও, অপরাধীদের জবাবদিহি করার ক্ষেত্রে খুব কম অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশের ‘গণহত্যা’ নিয়ে নিশ্চয়ই তুর্ক দেরি করবেন না। তারা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে বাংলাদেশের ‘গণহত্যা’ এর বিচারে সহযোগিতা করতে চায়। রুয়ান্ডা (১৯৯৪), বসনিয়া (১৯৯৫) এর মত এখন মায়ানমার (২০১৭-বর্তমান) এর ঘটনা গুলিতেও ‘গণহত্যা’ প্রতিরোধে বারবার ব্যর্থতা দেখছি। তুর্কের উচিত মায়ানমারে রোহিঙ্গা ‘গণহত্যা’ নিয়ে কি কি করা হয়েছে তার একটা বিশদ বিবরণ তুলে ধরা।
জাতিসংঘকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে মনে করা হয়, কিন্তু এর রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা এবং অদক্ষতা প্রায়শই সংকটের প্রতি দুর্বল প্রতিক্রিয়ার দিকে পরিচালিত করে। অনেক দেশ এবং সুশীল সমাজ বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লঙ্ঘন মোকাবেলায় জাতিসংঘকে আরও কার্যকর করার জন্য ভেটো ক্ষমতা সীমিত করা বা প্রয়োগের ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য সংস্কারের পক্ষে যুক্তি দেন।
ভলকার তুর্ক জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গা নিধন, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ, ফিলিস্তিন ইসরায়েল যুদ্ধ ও অন্যান্য বিষয়ে কি কি পদক্ষেপ ও সংস্কার করেছেন তার একটি তালিকা নিশ্চয়ই সংবাদ সংস্থায় সরবরাহ করবেন অথবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জানাবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
লেখক–শেখ জাহাঙ্গীর হাছান মানিক, গবেষক ও চিন্তক।