ঢাকা ০২:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে: আঘাত হানবে মঙ্গল বা বুধবার প্রথম দিনই ধরা পড়ল আড়াই কেজির ইলিশ, ৯২০০ টাকায় বিক্রি ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা, কোথায়, কখন আঘাত হানতে পারে সবুজ ঘাসে ঢাকা চট্টগ্রামের উইকেট, কেমন হবে রান পাবনায় ট্রাকচাপায় বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীসহ নিহত ৩ কি হতে পারে: নির্বাচন, না নতুন অন্তর্বর্তী সরকার? ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে সড়ক ছাড়লো বাসটার্মিনাল এলাকার বাসিন্দারা টেকনাফ জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক: দলীয় লেজুড়বৃত্তির সাংবাদিকতা থেকে বেরিয়ে আসুন উখিয়ায় পুলিশের পৃথক অভিযানে মিলল ১০ হাজার ইয়াবা ওপার থেকে ছোড়া গুলি পায়ে বিঁধলো নারীর খুনিয়া পালংয়ে চলন্তগাড়িতে ফিল্মি কায়দায় ডা’কা’তি, মোবাইলও টাকা ছিনতাই চকরিয়ায় ফের ২ মোটরসাইকেল আরোহীর মৃ’ত্যু সেন্ট মার্টিন দখলকারীদের বিরুদ্ধে জোরালো বার্তা দিয়েছি: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উখিয়ায় ৮ খুদে হাফেজার কোরআন সবিনা খতম উপলক্ষে নানান আয়োজন বাবার সাথে মাছ ধরতে গিয়ে রেজুখালে স্কুল শিক্ষার্থী নিখোঁজ
সংকট শুরু যেখান থেকে

আট ঘন্টা বন্ধের পর সচল কক্সবাজার টেকনাফ সড়ক

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউনিসেফ এর অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পের চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা। চাকুরিতে পুনর্বহালের দাবিতে তারা আমরণ অনশনের মাধ্যমে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন।

সোমবার সকাল ৬ টা থেকে শুরু হওয়া এই অবরোধে সড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ জট হয়ে আছে যানবাহন।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, অবিলম্বে চাকরিতে পুনর্বহালের ব্যবস্থা না হলে আন্দোলনের আরও কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা দেওয়া হবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা সড়ক অবরোধ ও অনশন চালিয়ে যাবেন।

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের কোটবাজার স্টেশনে এই অবরোধ ককর্মসূচি করছেন চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা। ঘটনাস্থলে পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

দুপুরের পর কর্মসূচিস্থলে উপস্থিত হন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সাইফুদ্দিন শাহীনসহ জেলা প্রশাসন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কর্মকর্তারা। এসময় পুলিশ সুপার বলেন, আন্দোলনকারীদের কিছুটা ধৈর্য্য ধরা উচিৎ বলে আমি মনে করি। যেসকল শিক্ষকরা চাকরি হারিয়েছে তাদের ব্যবস্থা হচ্ছে। তারা চাচ্ছে একবারেই যেনো সকল শিক্ষকদের ব্যবস্থা করা হয়। আমরা তাদেরকে আশ্বস্ত করেছি ১৫০ জনের ব্যবস্থা হয়েছে। একটি এনজিও তাদের চাকরির ব্যবস্থা করেছে। বাকিদের জন্যও আবেদন করা হয়েছে। তবে তাদের আরও কিছু দাবি আছে যেগুলো শুনতেই এখানে এসেছি।

“তবে তাদের এই রাস্তায় দাঁড়িয়ে জন দূর্ভোগ সৃষ্টি করার কোনো অধিকার নেই। তারা চাকরি হারিয়েছে। তাদের চাকরির ব্যবস্থা তো হচ্ছে। তবে এই বিষয়ে এভাবে রাস্তায় আন্দোলনে দাঁড়িয়ে পড়া আইনগতভাবে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”

পুলিশ সুপার বলেন, “ডমেসটিক বিষয়গুলো RRRC ও UNICEF এর দায়িত্ব। কিন্তু যাদের কাছে যাওয়া দরকার সেখানে না গিয়ে তারা এখানে রাস্তায় আন্দোলন করছে, সড়ক অবরোধ করছে এটা ঠিক নয়।”

বেলা তিনটার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন বলেন, “আমরা এখনো এখানে আছি। আন্দোলনকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি এখানে রাস্তা বন্ধ হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, তাই তারা যেনো জনদূর্ভোগের কারন না হয়। শরণার্থী কমিশনসহ আমরা চেষ্টা করছি আশা করি তারা কথা শুনবেন।”

তবে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক মো. শামীম বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টায় অবরোধ কর্মসূচি তুলে নেয় আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক মো শামীম জানান, জনদূর্ভোগ বিবেচনায় অবরোধ তুলে নেয়া হয়েছে। তবে আগামীকাল আন্দোলন উখিয়া নাকি কক্সবাজারে করা হবে তা নিয়ে রাতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

চাকরিচ্যুত শিক্ষক বোরহান উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা মানবিক সংস্থার অধীনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত ছিলেন। হঠাৎ করেই তাদের বিনা কারণে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফলে জীবিকা হারিয়ে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন।

এদিকে অবরোধের কারণে সকাল থেকেই ব্যস্ত এই সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে কোটবাজার স্টেশনে সড়কের উভয় দিকে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ শত শত গাড়ি আটকে পড়ে। এ নিয়ে ভোগান্তিতে রয়েছে সাধারণ যাত্রী ও চালকরা।

সিএনজি অটোরিকশা চালক নুরুল আলম বলেন, সড়ক অবরোধের কারণে ৫ ঘন্টা দাঁড়িয়ে আছি। যাত্রীও নেমে হেঁটে চলে গেছে।

ট্রাক চালক রহিম উদ্দিন বলেন, “সকাল ৭ টা থেকে এখন ২ টা পর্যন্ত এক জায়গায় আছি,খাওয়া-দাওয়া বাদ দিয়ে। তবে স্থানীয় শিক্ষকদের এই আন্দোলন কিন্তু ভুল না। দেশি শিক্ষকদের বাদ দিয়ে রোহিঙ্গা শিক্ষকদের চাকরির ব্যবস্থা করা এটা তো ঠিক না।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার উর্ধতন কর্মীরা জানিয়েছেন, অনেকেই ভেতরের সড়ক ব্যবহার করে ক্যাম্পে গিয়েছেন। অনেকেই বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে এসেছেন।

এবিষয়ে উখিয়ার ইউএনও মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, এই সমস্যাটি ইউনিসেফ এবং আরআরআরসির সাথে আন্দোলনকারীদের। আমরা সবার সাথে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।

তবে সকাল থেকে বেশ কয়েকবার শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

সংকট যেকারণে:

রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমের দায়িত্বে থাকা জাতিসংঘের শিশু তহবিল- ইউনিসেফ গেলো ২ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলো তহবিল সংকটের কারনে সীমিত করে ফেলা হচ্ছে এই প্রকল্প।

বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আশ্রয়শিবিরে সাড়ে চার হাজারের অধিক শিক্ষাকেন্দ্র চালু আছে। এসব ‘লার্নিং সেন্টারে’ প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার শিশু পড়াশোনা করে।

ইউনিসেফের কক্সবাজার কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা (চিফ অফ ফিল্ড অফিস) এঞ্জেলা কার্নে বলেছিলেন, “শিখন কেন্দ্রগুলো আপাতত জুনের শেষ নাগাদ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। কিন্তু এরপর কেন্দ্রগুলো খুলবে কি-না তা নির্ভর করবে নতুন করে তহবিল পাওয়ার উপরে।

“যদি শিক্ষা কার্যক্রম ফের শুরু হয় তাহলে গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ আওতাভুক্ত স্থানীয় পর্যায়ের শিক্ষকরা (বাংলাদেশি নাগরিক) চাকরিতে থাকবেন না।”

এতে করে স্থানীয় এক হাজার ১৭৯ জন শিক্ষক চাকরি হারানোর কথা বলেছিলেন এঞ্জেলা কার্নে।

এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই আন্দোলন চলছিলো উখিয়ায়। মে মাসের শেষের দিকে আন্দোলন তীব্র হয়েছিলো। তখন স্থানীয়রা বৈষম্যের অভিযোগ তুলেন।

এই বিষয়ে ওই সংবাদ সম্মেলমে ইউনিসেফ কর্মকর্তা এঞ্জেলা কার্নে বলেছিলেন, “এখানে কোনো বৈষম্য নেই, এটা শুধুমাত্র তহবিল সংকটের কারণে নেওয়া সিদ্ধান্ত। আমাদের এখানে তিন হাজারের অধিক বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক কাজ করেন, যেখান থেকে শুধুমাত্র গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ ভুক্তরা থাকছেন না।”

ইউনিসেফের দেয়া তথ্য অনুযায়ী সীমিত এই প্রকল্পে শিক্ষার্থীদের আর শেখানো হবে না ইংরেজি, বিজ্ঞান বা সামাজিক শিক্ষা। বার্মিজ ভাষা, গণিত, জীবন দক্ষতা ও সামাজিক মানসিক শিক্ষার উপর অগ্রাধিকার দেওয়া হবে কেবল। যেখানে যুক্ত থাকবেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শিক্ষকরা।

এমনকি শিশুদের নতুন করে পাঠ্যবই দেওয়া থেকেও সরে আসার কথা জানিয়েছিলেন কার্নে। পুরাতন বইগুলো শিক্ষাবর্ষ শেষে পুনরায় নতুন ক্লাসের শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে: আঘাত হানবে মঙ্গল বা বুধবার

This will close in 6 seconds

সংকট শুরু যেখান থেকে

আট ঘন্টা বন্ধের পর সচল কক্সবাজার টেকনাফ সড়ক

আপডেট সময় : ০৪:২৮:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউনিসেফ এর অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পের চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা। চাকুরিতে পুনর্বহালের দাবিতে তারা আমরণ অনশনের মাধ্যমে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন।

সোমবার সকাল ৬ টা থেকে শুরু হওয়া এই অবরোধে সড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ জট হয়ে আছে যানবাহন।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, অবিলম্বে চাকরিতে পুনর্বহালের ব্যবস্থা না হলে আন্দোলনের আরও কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা দেওয়া হবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা সড়ক অবরোধ ও অনশন চালিয়ে যাবেন।

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের কোটবাজার স্টেশনে এই অবরোধ ককর্মসূচি করছেন চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা। ঘটনাস্থলে পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

দুপুরের পর কর্মসূচিস্থলে উপস্থিত হন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সাইফুদ্দিন শাহীনসহ জেলা প্রশাসন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কর্মকর্তারা। এসময় পুলিশ সুপার বলেন, আন্দোলনকারীদের কিছুটা ধৈর্য্য ধরা উচিৎ বলে আমি মনে করি। যেসকল শিক্ষকরা চাকরি হারিয়েছে তাদের ব্যবস্থা হচ্ছে। তারা চাচ্ছে একবারেই যেনো সকল শিক্ষকদের ব্যবস্থা করা হয়। আমরা তাদেরকে আশ্বস্ত করেছি ১৫০ জনের ব্যবস্থা হয়েছে। একটি এনজিও তাদের চাকরির ব্যবস্থা করেছে। বাকিদের জন্যও আবেদন করা হয়েছে। তবে তাদের আরও কিছু দাবি আছে যেগুলো শুনতেই এখানে এসেছি।

“তবে তাদের এই রাস্তায় দাঁড়িয়ে জন দূর্ভোগ সৃষ্টি করার কোনো অধিকার নেই। তারা চাকরি হারিয়েছে। তাদের চাকরির ব্যবস্থা তো হচ্ছে। তবে এই বিষয়ে এভাবে রাস্তায় আন্দোলনে দাঁড়িয়ে পড়া আইনগতভাবে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”

পুলিশ সুপার বলেন, “ডমেসটিক বিষয়গুলো RRRC ও UNICEF এর দায়িত্ব। কিন্তু যাদের কাছে যাওয়া দরকার সেখানে না গিয়ে তারা এখানে রাস্তায় আন্দোলন করছে, সড়ক অবরোধ করছে এটা ঠিক নয়।”

বেলা তিনটার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন বলেন, “আমরা এখনো এখানে আছি। আন্দোলনকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি এখানে রাস্তা বন্ধ হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, তাই তারা যেনো জনদূর্ভোগের কারন না হয়। শরণার্থী কমিশনসহ আমরা চেষ্টা করছি আশা করি তারা কথা শুনবেন।”

তবে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক মো. শামীম বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টায় অবরোধ কর্মসূচি তুলে নেয় আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক মো শামীম জানান, জনদূর্ভোগ বিবেচনায় অবরোধ তুলে নেয়া হয়েছে। তবে আগামীকাল আন্দোলন উখিয়া নাকি কক্সবাজারে করা হবে তা নিয়ে রাতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

চাকরিচ্যুত শিক্ষক বোরহান উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা মানবিক সংস্থার অধীনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত ছিলেন। হঠাৎ করেই তাদের বিনা কারণে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফলে জীবিকা হারিয়ে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন।

এদিকে অবরোধের কারণে সকাল থেকেই ব্যস্ত এই সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে কোটবাজার স্টেশনে সড়কের উভয় দিকে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ শত শত গাড়ি আটকে পড়ে। এ নিয়ে ভোগান্তিতে রয়েছে সাধারণ যাত্রী ও চালকরা।

সিএনজি অটোরিকশা চালক নুরুল আলম বলেন, সড়ক অবরোধের কারণে ৫ ঘন্টা দাঁড়িয়ে আছি। যাত্রীও নেমে হেঁটে চলে গেছে।

ট্রাক চালক রহিম উদ্দিন বলেন, “সকাল ৭ টা থেকে এখন ২ টা পর্যন্ত এক জায়গায় আছি,খাওয়া-দাওয়া বাদ দিয়ে। তবে স্থানীয় শিক্ষকদের এই আন্দোলন কিন্তু ভুল না। দেশি শিক্ষকদের বাদ দিয়ে রোহিঙ্গা শিক্ষকদের চাকরির ব্যবস্থা করা এটা তো ঠিক না।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার উর্ধতন কর্মীরা জানিয়েছেন, অনেকেই ভেতরের সড়ক ব্যবহার করে ক্যাম্পে গিয়েছেন। অনেকেই বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে এসেছেন।

এবিষয়ে উখিয়ার ইউএনও মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, এই সমস্যাটি ইউনিসেফ এবং আরআরআরসির সাথে আন্দোলনকারীদের। আমরা সবার সাথে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।

তবে সকাল থেকে বেশ কয়েকবার শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

সংকট যেকারণে:

রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমের দায়িত্বে থাকা জাতিসংঘের শিশু তহবিল- ইউনিসেফ গেলো ২ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলো তহবিল সংকটের কারনে সীমিত করে ফেলা হচ্ছে এই প্রকল্প।

বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আশ্রয়শিবিরে সাড়ে চার হাজারের অধিক শিক্ষাকেন্দ্র চালু আছে। এসব ‘লার্নিং সেন্টারে’ প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার শিশু পড়াশোনা করে।

ইউনিসেফের কক্সবাজার কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা (চিফ অফ ফিল্ড অফিস) এঞ্জেলা কার্নে বলেছিলেন, “শিখন কেন্দ্রগুলো আপাতত জুনের শেষ নাগাদ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। কিন্তু এরপর কেন্দ্রগুলো খুলবে কি-না তা নির্ভর করবে নতুন করে তহবিল পাওয়ার উপরে।

“যদি শিক্ষা কার্যক্রম ফের শুরু হয় তাহলে গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ আওতাভুক্ত স্থানীয় পর্যায়ের শিক্ষকরা (বাংলাদেশি নাগরিক) চাকরিতে থাকবেন না।”

এতে করে স্থানীয় এক হাজার ১৭৯ জন শিক্ষক চাকরি হারানোর কথা বলেছিলেন এঞ্জেলা কার্নে।

এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই আন্দোলন চলছিলো উখিয়ায়। মে মাসের শেষের দিকে আন্দোলন তীব্র হয়েছিলো। তখন স্থানীয়রা বৈষম্যের অভিযোগ তুলেন।

এই বিষয়ে ওই সংবাদ সম্মেলমে ইউনিসেফ কর্মকর্তা এঞ্জেলা কার্নে বলেছিলেন, “এখানে কোনো বৈষম্য নেই, এটা শুধুমাত্র তহবিল সংকটের কারণে নেওয়া সিদ্ধান্ত। আমাদের এখানে তিন হাজারের অধিক বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক কাজ করেন, যেখান থেকে শুধুমাত্র গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ ভুক্তরা থাকছেন না।”

ইউনিসেফের দেয়া তথ্য অনুযায়ী সীমিত এই প্রকল্পে শিক্ষার্থীদের আর শেখানো হবে না ইংরেজি, বিজ্ঞান বা সামাজিক শিক্ষা। বার্মিজ ভাষা, গণিত, জীবন দক্ষতা ও সামাজিক মানসিক শিক্ষার উপর অগ্রাধিকার দেওয়া হবে কেবল। যেখানে যুক্ত থাকবেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শিক্ষকরা।

এমনকি শিশুদের নতুন করে পাঠ্যবই দেওয়া থেকেও সরে আসার কথা জানিয়েছিলেন কার্নে। পুরাতন বইগুলো শিক্ষাবর্ষ শেষে পুনরায় নতুন ক্লাসের শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে।