ঢাকা ০২:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
জিনিয়াসহ আটকরা এখনো থানায় জুলাই আন্দোলনের নেতা জিনিয়াসহ আটকদের মুক্তি দাবী ও শিক্ষকদের আন্দোলনে উদীচীর সংহতি দশদিন পর আবারো ঘুমধুম সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ, কি হচ্ছে ওপারে? টেকনাফে এসে অপহরণের শিকার সেন্টমার্টিনের যুবক: ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি স্বাধীনতাবিরোধী ও সরকারসৃষ্ট দল দুটি পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়: হাফিজ উদ্দিন বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ জলসীমানায় মাসব্যাপী জরিপ করবে নরওয়ে জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপর প্রাধান্য দিলে ‘খারাপ নজির’ সৃষ্টি হবে: সালাহউদ্দিন আহমেদ দেশের মানুষ এখন সেনাসদস্যদের দিকে তাকিয়ে আছে: সেনাপ্রধান যুবকের জরিমানাসহ ৭ বছরের কারাদণ্ড বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশি অংশে জরিপে নামছে নরওয়ের গবেষণা জাহাজ আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন করতে ৪ মিলিয়ন ইউরো দেবে ইইউ বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হলেন ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন, এরপর আমরা বিদায় নেব : আসিফ নজরুল তিস্তা প্রকল্পে চীনা ঋণ নিতে চায় সরকার, চেয়েছে ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ছাত্ররাজনীতিতে পরিবর্তন চান শিক্ষার্থীরা
আজ বিশ্ব বাঘ দিবস

পাচারকারীদের হাতে বাঘের মৃত্যু বেশি

বিশ্বে বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবনে পাচারকারীদের হাতে বেশি মারা পড়ছে বাঘ। বাঘ সংরক্ষণে নানা উদ্যোগের মধ্যে গত আড়াই দশকে ২১টি বাঘের স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও পাচারকারীদের হাতে মারা পড়েছে ২৬টি। একই সময়ে উদ্ধার করা হয়েছে ২৪টি বাঘের চামড়া, চারটি মাথার খুলি ও ২৯৬টি হাড়।

পাচারকারীদের হাতে মারা পড়া ছাড়াও সুন্দরবনসংলগ্ন লোকালয়ে এসে গ্রামবাসীর হাতে মারা পড়েছে ১৪টি বাঘ। তবে বাঘ সংরক্ষণে নেওয়া ‘টাইগার অ্যাকশন প্ল্যানে (২০১৮–২০২৭) বলা হয়েছে, ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত লোকালয়ে এসে গ্রামবাসীর হাতে মারা গেছে গড়ে তিনটি বাঘ। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে একটি বাঘের মৃত্যু হয়েছে।

বন অধিপ্তরের তথ্যমতে, গত আড়াই দশকে সব মিলিয়ে মারা যাওয়া বাঘের সংখ্যা ৬২। ২০২৪ সালে সর্বশেষ বাঘ জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১২৫, যা আগের জরিপের চেয়ে ১১টি বেশি।

বাঘের চামড়া ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উদ্ধারের ঘটনায় বন বিভাগ মামলা করলেও অধিকাংশ সময় মামলার ত্রুটির কারণে অভিযুক্তরা বের হয়ে যান। বন বিভাগের হিসাবমতে, গত দেড় দশকে বাঘ হত্যা ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উদ্ধারের ঘটনায় ১৯টি মামলার মধ্যে ১০টির রায় হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি মামলায় আসামিদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। বাকি চার মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। অন্য ৯টি মামলা এখনো বিচারাধীন।

এসব মামলায় ৭৪ জনকে আসামি করা হলেও অধিকাংশ মামলায় অভিযুক্তরা জামিনে বের হয়ে এসে আবার একই অপরাধে জড়ান বলে বন বিভাগ সুন্দরবন অঞ্চলের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনে হরিণশিকারিদের তৎপরতা বেড়েছে।

হাছানুর রহমান বলেন, ‘খুলনার কয়রায় হরিণশিকারিদের তৎপরতা বেশি। আমাদের ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে আমরা উঠান বৈঠক করে সচেতনতা তৈরি করছি।’

এমন পরিস্থিতিতে আজ সারা দেশে পালন করা হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য—‘বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি, সুন্দরবনের প্রবৃদ্ধি।’

২০২৩ সালের আগস্টে করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বন্য প্রাণী গবেষণা সংস্থা প্যানথেরা এবং চীনভিত্তিক সংস্থা চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সুন্দরবনে বাঘশিকারি দস্যুরা এখনো সক্রিয় আছে। বিশ্বের ১৫টি দেশে সুন্দরবনের বাঘের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচার হচ্ছে। কিন্তু এসব ঘটনায় অভিযুক্তদের অধিকাংশ আইনি ফাঁকফোকর দিয়ে বেকসুর খালাস পেয়ে যাচ্ছেন।

বন অধিদপ্তরের তথ্যে চারটি মামলায় তাদের পক্ষে রায় এসেছে বলা হলেও বন আদালতের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা।

এমন পরিস্থিতিতে আজ সারা দেশে পালন করা হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য—‘বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি, সুন্দরবনের প্রবৃদ্ধি।’
খুলনা বন আদালতের রিটেইনার (বন মামলা দেখাশোনা করার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) জি এম কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বন আদালতে আছি। বাঘের চামড়া উদ্ধারের ঘটনায় খুলনা শেরেবাংলা রোড এলাকার তিনজন পাঁচ বছর করে সাজা পেয়েছিল। এ ছাড়া আর কোনো ঘটনা আমার মনে পড়ছে না।’

মামলা দায়েরে বন বিভাগের আইনি দুর্বলতা আছে কি না, তা জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন কর্মকর্তা বলেন, বন বিভাগের মামলা করার প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু ত্রুটি থেকে যায়। যেমন বন আইনের ৭২–এর ১(ঘ) বিধানমতে, তথ্য উদ্‌ঘাটনকারী কর্মকর্তা একটা নির্ধারিত ফরমে আসামির জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। সেখানে দেখা যায়, একাধিক আসামি থাকলেও সবার একই রকম জবানবন্দি।

ফলে আদালতে যুক্তিতর্কের সময় এটা দুর্বলতা হিসেবে প্রমাণিত হয়, জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, এ ছাড়া মামলায় যাদের সাক্ষী রাখা হয়, তাদের বেশির ভাগ কোর্টে জেরার সময় শক্তভাবে ঘটনার পক্ষে সাক্ষ্য দিতে পারেন না। এসব সুযোগ নিয়ে অভিযুক্তরা পার পেয়ে যান।

২০১২ সালের ডিসেম্বরে বাঘের দাঁতসহ গ্রেপ্তার দাকোপ উপজেলার ঢাংমারী এলাকার দুজন অভিযুক্ত আদালতে এভাবে পার পেয়ে যান বলে তিনি উদাহরণ দেন।

জানতে চাইলে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা করার সময় এ ধরনের দুর্বলতা আমরা দেখি। সেটি কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা এখন আমাদের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের অধীনে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসছি। কয়েকটা ধাপে আমরা সরকারি কৌঁসুলিদের সহায়তায় এ আইনি দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’

বাঘের অস্তিত্বের জন্য পাচারকারী ছাড়াও হরিণের নির্বিচার শিকার, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লবণাক্ততা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও জীববৈচিত্র্যে হ্রাস বাঘের অস্তিত্বসংকটকে বাড়িয়ে তুলছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বাঘ গবেষক এম এ আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, হরিণের চোরা শিকার সুন্দরবনে বাঘের প্রধান সংকট। বাঘের খাদ্যের ৭৮ শতাংশই আসে হরিণ থেকে। বাকি অংশ বন্য শূকর পূরণ করে। এ চোরা শিকার বন্ধ করতে না পারলে বাঘের খাদ্যসংকট তৈরি হবে।

এম এ আজিজ বলেন, বাঘের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সংকট হলো সুন্দরবনের নদীগুলোর উজানে পানির প্রবাহ কমছে। ফলে সমুদ্রের লবণাক্ততা সুন্দরবনের ভেতরে প্রবেশ করছে। উদ্ভিদবৈচিত্র্য কমছে। সুন্দরবন পূর্বাংশে হরিণের সংখ্যা বেশি। পশ্চিমাংশে কম। আমরা যদি সুন্দরবনের আশপাশে শিল্পায়নের বিস্তার রোধ করতে না পারি, তাহলে বাস্তুতন্ত্রের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাবে। স্বাভাবিকভাবে বাস্তুতন্ত্রের শীর্ষে থাকা বাঘও এতে আক্রান্ত হবে।

সূত্র: প্রথম আলো

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

জিনিয়াসহ আটকরা এখনো থানায়

This will close in 6 seconds

আজ বিশ্ব বাঘ দিবস

পাচারকারীদের হাতে বাঘের মৃত্যু বেশি

আপডেট সময় : ০১:২২:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

বিশ্বে বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবনে পাচারকারীদের হাতে বেশি মারা পড়ছে বাঘ। বাঘ সংরক্ষণে নানা উদ্যোগের মধ্যে গত আড়াই দশকে ২১টি বাঘের স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও পাচারকারীদের হাতে মারা পড়েছে ২৬টি। একই সময়ে উদ্ধার করা হয়েছে ২৪টি বাঘের চামড়া, চারটি মাথার খুলি ও ২৯৬টি হাড়।

পাচারকারীদের হাতে মারা পড়া ছাড়াও সুন্দরবনসংলগ্ন লোকালয়ে এসে গ্রামবাসীর হাতে মারা পড়েছে ১৪টি বাঘ। তবে বাঘ সংরক্ষণে নেওয়া ‘টাইগার অ্যাকশন প্ল্যানে (২০১৮–২০২৭) বলা হয়েছে, ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত লোকালয়ে এসে গ্রামবাসীর হাতে মারা গেছে গড়ে তিনটি বাঘ। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে একটি বাঘের মৃত্যু হয়েছে।

বন অধিপ্তরের তথ্যমতে, গত আড়াই দশকে সব মিলিয়ে মারা যাওয়া বাঘের সংখ্যা ৬২। ২০২৪ সালে সর্বশেষ বাঘ জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১২৫, যা আগের জরিপের চেয়ে ১১টি বেশি।

বাঘের চামড়া ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উদ্ধারের ঘটনায় বন বিভাগ মামলা করলেও অধিকাংশ সময় মামলার ত্রুটির কারণে অভিযুক্তরা বের হয়ে যান। বন বিভাগের হিসাবমতে, গত দেড় দশকে বাঘ হত্যা ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উদ্ধারের ঘটনায় ১৯টি মামলার মধ্যে ১০টির রায় হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি মামলায় আসামিদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। বাকি চার মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। অন্য ৯টি মামলা এখনো বিচারাধীন।

এসব মামলায় ৭৪ জনকে আসামি করা হলেও অধিকাংশ মামলায় অভিযুক্তরা জামিনে বের হয়ে এসে আবার একই অপরাধে জড়ান বলে বন বিভাগ সুন্দরবন অঞ্চলের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনে হরিণশিকারিদের তৎপরতা বেড়েছে।

হাছানুর রহমান বলেন, ‘খুলনার কয়রায় হরিণশিকারিদের তৎপরতা বেশি। আমাদের ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে আমরা উঠান বৈঠক করে সচেতনতা তৈরি করছি।’

এমন পরিস্থিতিতে আজ সারা দেশে পালন করা হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য—‘বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি, সুন্দরবনের প্রবৃদ্ধি।’

২০২৩ সালের আগস্টে করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বন্য প্রাণী গবেষণা সংস্থা প্যানথেরা এবং চীনভিত্তিক সংস্থা চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সুন্দরবনে বাঘশিকারি দস্যুরা এখনো সক্রিয় আছে। বিশ্বের ১৫টি দেশে সুন্দরবনের বাঘের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচার হচ্ছে। কিন্তু এসব ঘটনায় অভিযুক্তদের অধিকাংশ আইনি ফাঁকফোকর দিয়ে বেকসুর খালাস পেয়ে যাচ্ছেন।

বন অধিদপ্তরের তথ্যে চারটি মামলায় তাদের পক্ষে রায় এসেছে বলা হলেও বন আদালতের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা।

এমন পরিস্থিতিতে আজ সারা দেশে পালন করা হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য—‘বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি, সুন্দরবনের প্রবৃদ্ধি।’
খুলনা বন আদালতের রিটেইনার (বন মামলা দেখাশোনা করার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) জি এম কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বন আদালতে আছি। বাঘের চামড়া উদ্ধারের ঘটনায় খুলনা শেরেবাংলা রোড এলাকার তিনজন পাঁচ বছর করে সাজা পেয়েছিল। এ ছাড়া আর কোনো ঘটনা আমার মনে পড়ছে না।’

মামলা দায়েরে বন বিভাগের আইনি দুর্বলতা আছে কি না, তা জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন কর্মকর্তা বলেন, বন বিভাগের মামলা করার প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু ত্রুটি থেকে যায়। যেমন বন আইনের ৭২–এর ১(ঘ) বিধানমতে, তথ্য উদ্‌ঘাটনকারী কর্মকর্তা একটা নির্ধারিত ফরমে আসামির জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। সেখানে দেখা যায়, একাধিক আসামি থাকলেও সবার একই রকম জবানবন্দি।

ফলে আদালতে যুক্তিতর্কের সময় এটা দুর্বলতা হিসেবে প্রমাণিত হয়, জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, এ ছাড়া মামলায় যাদের সাক্ষী রাখা হয়, তাদের বেশির ভাগ কোর্টে জেরার সময় শক্তভাবে ঘটনার পক্ষে সাক্ষ্য দিতে পারেন না। এসব সুযোগ নিয়ে অভিযুক্তরা পার পেয়ে যান।

২০১২ সালের ডিসেম্বরে বাঘের দাঁতসহ গ্রেপ্তার দাকোপ উপজেলার ঢাংমারী এলাকার দুজন অভিযুক্ত আদালতে এভাবে পার পেয়ে যান বলে তিনি উদাহরণ দেন।

জানতে চাইলে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা করার সময় এ ধরনের দুর্বলতা আমরা দেখি। সেটি কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা এখন আমাদের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের অধীনে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসছি। কয়েকটা ধাপে আমরা সরকারি কৌঁসুলিদের সহায়তায় এ আইনি দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’

বাঘের অস্তিত্বের জন্য পাচারকারী ছাড়াও হরিণের নির্বিচার শিকার, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লবণাক্ততা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও জীববৈচিত্র্যে হ্রাস বাঘের অস্তিত্বসংকটকে বাড়িয়ে তুলছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বাঘ গবেষক এম এ আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, হরিণের চোরা শিকার সুন্দরবনে বাঘের প্রধান সংকট। বাঘের খাদ্যের ৭৮ শতাংশই আসে হরিণ থেকে। বাকি অংশ বন্য শূকর পূরণ করে। এ চোরা শিকার বন্ধ করতে না পারলে বাঘের খাদ্যসংকট তৈরি হবে।

এম এ আজিজ বলেন, বাঘের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সংকট হলো সুন্দরবনের নদীগুলোর উজানে পানির প্রবাহ কমছে। ফলে সমুদ্রের লবণাক্ততা সুন্দরবনের ভেতরে প্রবেশ করছে। উদ্ভিদবৈচিত্র্য কমছে। সুন্দরবন পূর্বাংশে হরিণের সংখ্যা বেশি। পশ্চিমাংশে কম। আমরা যদি সুন্দরবনের আশপাশে শিল্পায়নের বিস্তার রোধ করতে না পারি, তাহলে বাস্তুতন্ত্রের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাবে। স্বাভাবিকভাবে বাস্তুতন্ত্রের শীর্ষে থাকা বাঘও এতে আক্রান্ত হবে।

সূত্র: প্রথম আলো