কক্সবাজারের চকরিয়া পুলিশের হেফাজতে থাকা যুবকের মৃত্যুতে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয়রা। এরপর এ ঘটনায় এক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ও দুই পুলিশ কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে ওই তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহারের তথ্য জানিয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, থানা হেফাজতে আত্মহত্যা করে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার কারণে তিন পুলিশকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন, এএসআই মোহাম্মদ হানিফ মিয়া, কনস্টেবল মহি উদ্দিন ও ইশরাক হোসেন।
বিকেলে তিনটার দিকে বিক্ষোভে চকরিয়া ইমাম সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।
কফিল উদ্দিন প্রশ্ন রেখে বলেন, “প্রিজন সেলে কিভাবে মানুষ মারা যায়? আসামি রাখার তো একটা জায়গা আছে, রিমান্ডে তাকে তোমরা মারলা কেনো? টর্চার করলা কেনো? ফাঁসি খেলো কিভাবে? সে ফাঁসি খেয়েছে নাকি তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে? এসবের উত্তর চকরিয়ার মানুষ জানতে চায়।
এরআগে দুপুরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে কথা হয় দুর্জয় চৌধুরীর ফুফাতো ভাই সঞ্জীব দাশ এর সাথে।
সঞ্জীব প্রশ্ন তোলেন, হাজতের বাইরে তো কনস্টেবল থাকার কথা। তাহলে কি তিনি দায়িত্বে ছিলেন না?
চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার অভিজিত দাশ বলেন, ‘আত্মহত্যার দৃশ্য কিছুটা দুরত্বের কারণে সরাসরি ধারণ না হলেও দুর্জয়ের ‘চলাফেরা’ ও অন্যান্য কার্যকলাপের দৃশ্য থানার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে।’
পুলিশ সদস্যদের গাফিলতি আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামগ্রিক বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি কাজ করছে।
এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘ চকরিয়া থানা হাজতে যুবক আত্মহত্যার ঘটনায় মাননীয় পুলিশ সুপারের নির্দেশে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে এসে সুরতহাল করেছেন।’
‘তদন্ত কমিটি নিরুপণ করবে ঘটনাটি কি ছিলো এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বেরিয়ে আসবে আসল ঘটনা’ বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাত ৯ টার দিকে দুর্জয়ের কর্মরত বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তাকে থানায় সোপর্দ করেন।
২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার দায়ের করা মামলায় তাকে রাত ১১ টায় হেফাজতে নেওয়া হয় বলে জানান পুলিশের এই দুজন কর্মকর্তা।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) ভোরে চকরিয়া থানা হাজতের ভেতরে ঝুলন্ত অবস্থায় ঐ যুবকের মরদেহ পাওয়া যায়। পুলিশের দাবী, নিহত যুবক দুর্জয় চৌধুরী আত্মহত্যা করেছে। সে চাকরিয়া পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড হিন্দু পাড়ার কমল চৌধুরীর ছেলে। চকরিয়া সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার অপারেটরের দায়িত্বে ছিলেন দুর্জয়।