২ নভেম্বর ২০২৩, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) জামালপুরের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক এ কে এম দিদারুল আলম অভিযানের অযুহাতে যান সেখানকার যৌনপল্লীতে।
যেখানে মাদকসহ অনৈতিক কর্মকান্ড থেকে ভাগ নিতে তিনি বৈঠকে মিলিত হন ঐ পল্লীর প্রধান হিসেবে পরিচিত এক নারীর সাথে।
জাতীয় একটি দৈনিকে ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, বৈঠকের সেই মূহুর্ত মুঠোফোনে কৌশলে ধারণ করেন দিদারুলের অধীনস্থ ডিএনসি’র এক সদস্য। বিষয়টি টের পেয়ে ঐ সদস্যকে দিদারুল করেন হেনস্তা, এছাড়াও ঘটনার দিন মাদক মামলার পলাতক এক আসামীকে ধরার পর মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন তিনি।
এডি দিদারুলের এসব অনিয়ম-দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে সে বছরের ২৭ নভেম্বর জামালপুর ডিএনসির পরিদর্শক তারেক মাহমুদ, এসআই মোস্তাফিজুর রহমান, হিসাবরক্ষক ফরহাদ হোসেনসহ ১৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁর বিরুদ্ধে ডিএনসির প্রধান কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।
অথচ অভিযোগ দাখিলের মাত্র ১ মাস ২৫ দিন আগে ২ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে চাঁদপুরে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের পর ডিএনসির জামালপুর কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক পদে বদলি করা হয় কক্সবাজার ডিএনসির বর্তমান এই সহকারী পরিচালককে।
২৫ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে যোগদানের মাত্র অল্প কয়দিনেই কক্সবাজারেও আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন ডিএনসি’র বিতর্কিত এই কর্মকর্তা।
উখিয়ার একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এক নারী ও এক যুবক কে ইয়াবা-পিস্তলের গুলি সহ যৌথ অভিযানে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আটক করে ডিএনসি, যার নেতৃত্বে ছিলেন দিদারুল।
সূত্র বলছে, প্রায় ৯ লাখ টাকা মূল্যের ৫ টিকেল স্বর্ণ এবং ২০ লাখ টাকা মূল্যের ২০ হাজার ইয়াবার বিনিময়ে আটক নারীর স্বামীকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন তিনি।
এঘটনায় মামলা ‘হালকা’ করে দেওয়ার কথা বলে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবী করা হয় বলেও রয়েছে অভিযোগ।
সর্বশেষ, রবিবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কক্সবাজারের স্থানীয় সাংবাদিক শাহিন মাহমুদ রাসেল তার ফেসবুকে এক সিএনজি চালকের স্ত্রীর ভিডিও পোস্ট করেন।
পোস্টের ক্যাপশনে রাসেল লেখেন,
“অপকর্মে মশগুল মাদকদ্রব্যের এডি দিদারুল। মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া সিএনজি চালক বজল করিমের স্ত্রী রাশেদার আহাজারি!”
এরপর রাসেল ওই নারীর ভিডিও বক্তব্য ফেসবুকে পোস্ট করলেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে রাত সাড়ে ৯টায় মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের কার্যালয়ে আগে থেকে আটক থাকা এক আসামিকে শিখিয়ে সাংবাদিক রাসেলের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ানো হয় এবং সেটি ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচার করা হয়।
এই ঘটনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (ডিএনসি) কাজী গোলাম তওসিফ বলেন,”এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনারা লিখিত অভিযোগ দিন, আমি ডিজিকে বলে দিচ্ছি, দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মমতাজ তানভীর এবং চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাহিদ হোসেন মোল্লা বলেন, “কোনো আসামি আদালতে স্বীকারোক্তি না দিলে বা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে অন্য কারও নাম উল্লেখ না করলে তাকে আসামি করা যায় না। পাবলিক প্লেসে স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে কাউকে অভিযুক্ত করাও আইনসিদ্ধ নয়। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি।”
এবিষয়ে এডি দিদারুলের কোনো মন্তব্য পাওয়া না গেলেও সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক রাসেলকে ইয়াবা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টার প্রতিবাদে সোমবার (১০ মার্চ) ‘কক্সবাজারে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ’ ব্যানারে কক্সবাজার শহরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে