অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে স্বাধীন অনলাইন গণমাধ্যম ইনস্ক্রিপ্ট ডট মি–তে।
সাক্ষাৎকারে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন ভাঙা, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের ঠিক ছয় মাসের মাথায় দেশে নতুন করে উত্তেজনা, একাত্তর প্রশ্নে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অবস্থান, দেশে ইসলামি মৌলবাদের প্রভাব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন নাহিদ।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়িটি ভাঙা কি সরকার আটকাতে পারতো না? এর প্রয়োজনীয়তা ছিল কিনা এমন প্রশ্নে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘বাংলাদেশে বিচারপ্রক্রিয়া চলমান। আমরা চাইছি দ্রুত নিষ্পত্তি। বিচারে প্রমাণ হয়ে গেলে আন্তর্জাতিকভাবে আমরা এগোতে পারব। ভারত সরকার শেখ হাসিনা এবং বেশ কিছু আওয়ামী নেতাকে আশ্রয় দিয়েছে। তারা একটা ব্যখ্যা আমাদের দিয়েছে। তারা বলেছে, শেখ হাসিনাকে কোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হবে না। সেই প্রতিশ্রুতি যথাযথ রক্ষা হচ্ছে না। বিচার হওয়ার আগে হাসিনার সমস্ত সক্রিয়তার ব্যাপারে আমরা ভারত সরকারকেই প্রশ্ন করব।’
শেখ মুজিবের বাড়ি ভাঙার সময় সেনাবাহিনী কেন ব্যবস্থা নিল না সে প্রশ্নে নাহিদ বলেন, ‘আইন শৃঙ্খলা বাহিনী শক্তি প্রয়োগ করলে ঘটনা আরও হঠকারী হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতো। তারা চেষ্টা করেছে ক্ষোভ প্রশমনের। কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। রাজনৈতিক উস্কানি দেওয়া হয়েছে এখানে। এখন বিষয়টা যাতে আর না ছড়ায়, সরকারের তরফে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
একাত্তরের ধারাবাহিকতায় চব্বিশের চেতনাকে ধারণ, মুক্তিযুদ্ধে বিরোধী অবস্থানের পরও জাতির কাছে ক্ষমা না চাওয়া জামায়াতে ইসলামীকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কথা প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘১৯৭১ পরবর্তীতে এতকাল পরেও ইচ্ছে করেই জামায়াত ইস্যুটা প্রাসঙ্গিক করে রাখা হয়েছে। যে কোনও বিরোধিতা বা আন্দোলনকেই জামায়াত–শিবির ট্যাগ দেওয়ার প্রবণতা ছিল। তাদের নানাভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। জামাতের নেতৃত্ব এখন মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করেই তাদের বক্তব্য দিচ্ছে। এই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়ার মধ্যে দিয়ে জামায়াতের কাফফারা হয়েছে। কিন্তু জামায়াতকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, একাত্তর মীমাংসিত বিষয়। এ নিয়ে ভবিষ্যতে তারা রাজনৈতিক বিরোধিতা করবে না’।
হাসনাত আবদুল্লাহ ভাঙার কথা বলছেন, বিপরীতে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম গড়ার কথা বলছেন। এটি কি ক্ষমতার লড়াইয়ের পূর্বাভাস? এমন প্রশ্নে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘মাহফুজ আলম সরকারের জায়গা থেকে দায়িত্বশীল বক্তব্য দিয়েছেন। আবার ভাঙতে না জানলে আমরা গড়তেও পারব না। ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়েই এই সময়টা যাবে। এটুকুই বলব। নানা ঘরানার মানুষ ছাত্রদের ব্যানারে এসে জড়ো হয়েছেন। সবাই একমতের হবে না এটাই স্বাভাবিক। আমরা একাত্তর আর চব্বিশকে ধারণ করেই বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই।’
আগামী ডিসেম্বরে ভোট হলে জামায়াত, হেফাজত, চরমোনাই এ ধরনের ইসলামপন্থী দলগুলো কেমন ভোট পাবে বলে মনে করেন? এমন প্রশ্নে নাহিদ বলেন, ‘আগের হিসাব এবার মিলবে না। কেননা দীর্ঘদিন মানুষ ভোটই দিতে পারেনি। প্রচুর নতুন ভোটার এবার। তবে আমার ধারণা, জামায়াতের নেতৃত্বে মানুষ আস্থা রাখবে না। তাদের ঐতিহাসিক ভুলগুলো জনগণ মনে রেখেছে। তাছাড়া ইসলামিস্ট রাজনীতিতে মানুষের সমর্থন নেই। এই রাজনীতির ভবিষ্যতও নেই বাংলাদেশে। বরং তরুণদের দ্বারা পরিচালিত মূলধারার সার্বজনীন ও গণতান্ত্রিক চরিত্রের দলকে মানুষ সমর্থন জানাবে বলেই মনে করি।’
নতুন দল গঠন, সেই দলের হাল ধরা এবং সরকারের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, কবে পদত্যাগ করবেন তা এখনই বলতে পারছেন না।
আর দলে তাঁর কী ভূমিকা হবে সেটিও দলে না যাওয়া পর্যন্ত তিনি বলতে পারবেন না।
সূত্র: ইনস্ক্রিপ্ট ডট মি–অবলম্বনে আজকের পত্রিকার প্রতিবেদন