কক্সবাজারের চকরিয়ায় থানা হেফাজতে যুবকের মৃত্যুতে পুলিশের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তার পরিবার। যদিও পুলিশ দাবী করছে এটা আত্মহত্যা। আত্মহত্যা হলেও এসময় পুলিশ কোথায় ছিলো, এমন প্রশ্ন পরিবারের।
নিহত দুর্জয়ের পরিবারের সদস্যরা জানান, দুর্জয় সপ্তাহ খানেক আগে ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন, পুলিশের কাছে আত্মহত্যার খবর পেয়েছেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে এসেছেন দুর্জয়ের চাচাতো ভাই সঞ্জীব দাস।
তিনি বলেন, ‘ সকালে ফোন পেয়ে আমরা থানায় গেলে পুলিশ জানায় সে হাজতে সুইসাইড করেছে। সেখানে গিয়ে আমরা তাকে শার্টে পেঁচানো অবস্থায় ফাঁসিতে ঝুলন্ত দেখেছি, হাজতের ভেতরে কি হয়েছে বা পুলিশ তাকে প্রেসার দিয়েছে কি না জানিনা।’
লাশ ঝুলে থাকার দৃশ্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে সঞ্জীব দাশ বলেন, হাজতের দরজায় লোহার এঙ্গেলে ঝুলে থাকলেও পায়ের নিচে মাত্র ২ ইঞ্চি ফাঁকা ছিলো। হাত গুলো এঙ্গেলের ভেতর ঢুকানো ছিলো। বুঝতে পারছিনা জিনিসটা কিভাবে সম্ভব। এরকম স্যুসাইড করলে মানুষ জিহ্বা বের করে, একটু চিৎকার করে৷
সঞ্জীব প্রশ্ন তোলেন, হাজতের বাইরে তো কনস্টেবল থাকার কথা। তাহলে কি তিনি দায়িত্বে ছিলেন না?
অভিযোগের বিষয়ে পরিবার অবগত ছিলো কিনা জানতে চাইলে সঞ্জীব বলেন, দূর্জয় চৌধুরীর নামে একটি চেক জালিয়াতি অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগটি প্রমানিত হয়নি কোন প্রকার তদন্ত করা হয়নি। অভিযোগ বিষয় জানতে থানায় গেলে দুর্জয় কে গ্রেফাতার দেখিয়ে হেফাজতে রাখা হয়।
“খবর পেরে রাত সাড়ে ১২টায় পরিবারে লোকজন খাবার ও ঔষুধ নিয়ে নিহত দু্র্জয়ের সাথে দেখা করতে যান এবং থানা হেফাজতে দায়িত্ব থাকা পুলিশ কর্মকর্তা মহিউদ্দিন কে জানানো হয় সে এক সপ্তাহ আগে স্টোক করছিল, তার শ্বাস কষ্টজনিত রোগ আছে। মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত তাই তাকে যেন ভালভাবে নজর রাখে”
“এই সময় তার মার সাথে কথা বলে দূর্জয়। মাকে বলে মা আমি কোন ভুল ত্রুটি করি নাই। আমাকে ভুল বুঝিও না আমি ট্রমার মধ্যে আছি” – বলেন সঞ্জীব।
তবে চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার অভিজিত দাস জানান, বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাত ৯ টার দিকে দুর্জয়ের কর্মরত বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তাকে থানায় সোপর্দ করেন।
২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার দায়ের করা মামলায় তাকে রাত ১১ টায় হেফাজতে নেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
পুলিশ কর্মকর্তা অভিজিত দাশ বলেন, ‘আত্মহত্যার দৃশ্য কিছুটা দুরত্বের কারণে সরাসরি ধারণ না হলেও দুর্জয়ের ‘চলাফেরা’ ও অন্যান্য কার্যকলাপের দৃশ্য থানার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে।’
পুলিশ সদস্যদের গাফিলতি আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামগ্রিক বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি কাজ করছে।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) ভোরে চকরিয়া থানা হাজতের ভেতরে ঝুলন্ত অবস্থায় ঐ যুবকের মরদেহ পাওয়া যায়। পুলিশের দাবী, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
নিহত দুর্জয় চৌধুরী (২৭) চকরিয়া পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড হিন্দু পাড়া কমল চৌধুরীর ছেলে। তিনি চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর পদে কর্মরত ছিলেন।
এদিকে এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘ চকরিয়া থানা হাজতে যুবক আত্মহত্যার ঘটনায় মাননীয় পুলিশ সুপারের নির্দেশে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে এসে সুরতহাল করেছেন।’
‘তদন্ত কমিটি নিরুপণ করবে ঘটনাটি কি ছিলো এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বেরিয়ে আসবে আসল ঘটনা’ বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।