ঢাকা ০৫:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
মৌসুমি বায়ুর বিস্তার: বৃষ্টি থাকবে ‘ভিজিএফ চালের অনিয়ম’ নিয়ে সংবাদ – চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল: হচ্ছে সরাসরি সম্প্রচার পরিত্যক্ত পুকুরে মিললো বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুর লাশ হাই কোর্টের রায় বাতিল, এক যুগ পর নিবন্ধন ফিরে পাচ্ছে জামায়াত প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতল পিএসজি নাফ নদে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ কিশোর ফিরলো লাশ হয়ে ছি’নতা’ইকারীর ধা’ক্কা’য় মায়ের সামনে ছেলের প্রা’ণ গেলো সড়কে রামুতে অপারেশন ডেভিল হান্টে ২ আওয়ামীলীগ নেতা আটক নাফ নদে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ কিশোর ফিরলো লাশ হয়ে রেফারিজ প্রশিক্ষণ কোর্সে উত্তীর্ণ কুতুবদিয়ার নিহাল মহেশখালীতে রশিদ হ’ত্যা: আসামিদের পাল্টা মামলায় হয়রানির শিকার বাদীর পরিবার চকরিয়ায় পানিতে ডুবে ৭ বছর বয়সী রাফির মৃত্যু বৈরী আবহাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সেন্টমার্টিন: খাদ্য সংকট সি-ট্রাকে নেই ডাস্টবিন: যাত্রীরা যত্রতত্র ফেলছে প্লাস্টিক বর্জ্য

খেজুর দিয়ে ইফতার করলে যে উপকার

খেজুর দিয়ে ইফতার করলে যে উপকার

মহান আল্লাহর একটি অপূর্ব সৃষ্টি খেজুর। সুস্বাদু এ ফলটি খাবার হিসেবেও স্বাস্থ্যসম্মত এবং ভিটামিনসমৃদ্ধ। দৈনন্দিন জীবনের খাদ্য ঘাটতির চাহিদা পরিপূরক, জাদু ও বিষ প্রতিরোধক খাবার এটি। পবিত্র রমজানে সারা দিনের রোজার ক্লান্তি শেষে ইফতারে দুয়েকটি খেজুরে খেলে দুর্বলতা কেটে যায়। ইফতারিতে খেজুর খাওয়া সুন্নত। রাসুল (সা.) খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। হাদিস শরিফেও খেজুর দিয়ে ইফতার করার নির্দেশ রয়েছে।

খেজুর দিয়ে ইফতার করার ব্যাপারে হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে, সে যেন খেজুর দ্বারা করে। কেননা তাতে বরকত ও কল্যাণ রয়েছে।’ (মেশকাত: ১৮৯৩)। অন্য হাদিসে রয়েছে, আনাস বিন মালেক (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’ (তিরমিজি: ৬৩২)।

শুধু রমজানই নয়, অন্যান্য দিনেও খেজুর শরীরের বিশেষ পুষ্টিদানকারী খাবার। হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, বিষ ও জাদু তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (বোখারি ও মুসলিম)। সুতরাং পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং হাদিসের নির্দেশনায় খেজুর মানুষের জন্য অনেক উপকারী।

খেজুর দিয়ে ইফতার করার উপকারিতা হলো—১. কয়েকটি খেজুরই সাময়িক ক্ষুধা নিবারণে সহায়তা করে; ২. খেজুরে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি থাকায় দুর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী, সামান্য পরিশ্রমেই যারা পেরেশান হয়ে যায়, ইফতারে খেজুর খেলে তাদের দুর্বলতা কেটে যায় এবং রোজা রাখা সহজ হয়; ৩. শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে খেজুর কার্যকর ভূমিকা রাখে। ফলে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের স্বাভাবিকভাবে রোজা রাখা সহজ হয়; ৪. খেজুর হৃদরোগ, জ্বর ও পেটের পীড়ায় উপকারী এবং বলবর্ধক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। ক্ষুধামান্দ্য ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে খেজুরবিশেষ উপকারী; ৫. খেজুর পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ দূর করে, শুষ্ক কাশি, অ্যাজমা ও গ্যাসের জন্যও উপকারী; ৬. রোজাদারের পেট খালি থাকায় শরীরে গ্লুকোজের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। খেজুর সেটা দ্রুত পূরণে সাহায্য করে।

বলা হয়ে থাকে, বছরে যতগুলো দিন আছে, খেজুরে তার চেয়েও বেশি গুণ রয়েছে। খেজুর যেমনি সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকর ফল। খেজুর খাওয়ার বৈজ্ঞানিক কারণ অনেক। যেমন—খেজুরের পুষ্টিগুণ প্রচুর। খেজুরে সুগারের পরিমাণ এত বেশি থাকে যে, এক কামড়েই অনেকটা এনার্জি পাওয়া যায়। এর মধ্যে আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, গ্লুকোজ, ম্যাগনেশিয়াম ও সুক্রোজ থাকে। যে কারণে খেজুর খাওয়ার মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে শরীরে এনার্জি বেড়ে যায়। সারা দিন উপোস করে শরীরে যে ক্লান্তি আসে, তা দূর করে এনার্জি জোগাতে সাহায্য করে খেজুর। রোজা রাখলে সাধারণত অ্যাসিডিটি হয়। যার থেকে অস্বস্তি হতে থাকে। খেজুর শরীরে অ্যাসিডের মাত্রা বশে রেখে অস্বস্তি কমায়। সারা দিন না খেয়ে থাকলে খাওয়ার সময় বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা তৈরি হয়। তাই খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙলে এর মধ্যে থাকা জটিল কার্বোহাইড্রেট হজম হতে বেশি সময় নেয়। ফাইবার থাকার কারণে পেট ভরা লাগে। তাই বেশি খাওয়ার আগেই পেট ভরে যায়। অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে তা পৌষ্টিকতন্ত্রের কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও হতে পারে। খেজুর শরীরে উৎসেচক ক্ষরণে সাহায্য করে। ফলে হজম ভালো হয়।

মহান রব আমাদের রমজানে স্বস্তি ও সুস্থতা দান করুন। আমিন।

ট্যাগ :

This will close in 6 seconds

খেজুর দিয়ে ইফতার করলে যে উপকার

আপডেট সময় : ১০:৩০:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫

মহান আল্লাহর একটি অপূর্ব সৃষ্টি খেজুর। সুস্বাদু এ ফলটি খাবার হিসেবেও স্বাস্থ্যসম্মত এবং ভিটামিনসমৃদ্ধ। দৈনন্দিন জীবনের খাদ্য ঘাটতির চাহিদা পরিপূরক, জাদু ও বিষ প্রতিরোধক খাবার এটি। পবিত্র রমজানে সারা দিনের রোজার ক্লান্তি শেষে ইফতারে দুয়েকটি খেজুরে খেলে দুর্বলতা কেটে যায়। ইফতারিতে খেজুর খাওয়া সুন্নত। রাসুল (সা.) খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। হাদিস শরিফেও খেজুর দিয়ে ইফতার করার নির্দেশ রয়েছে।

খেজুর দিয়ে ইফতার করার ব্যাপারে হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে, সে যেন খেজুর দ্বারা করে। কেননা তাতে বরকত ও কল্যাণ রয়েছে।’ (মেশকাত: ১৮৯৩)। অন্য হাদিসে রয়েছে, আনাস বিন মালেক (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’ (তিরমিজি: ৬৩২)।

শুধু রমজানই নয়, অন্যান্য দিনেও খেজুর শরীরের বিশেষ পুষ্টিদানকারী খাবার। হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, বিষ ও জাদু তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (বোখারি ও মুসলিম)। সুতরাং পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং হাদিসের নির্দেশনায় খেজুর মানুষের জন্য অনেক উপকারী।

খেজুর দিয়ে ইফতার করার উপকারিতা হলো—১. কয়েকটি খেজুরই সাময়িক ক্ষুধা নিবারণে সহায়তা করে; ২. খেজুরে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি থাকায় দুর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী, সামান্য পরিশ্রমেই যারা পেরেশান হয়ে যায়, ইফতারে খেজুর খেলে তাদের দুর্বলতা কেটে যায় এবং রোজা রাখা সহজ হয়; ৩. শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে খেজুর কার্যকর ভূমিকা রাখে। ফলে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের স্বাভাবিকভাবে রোজা রাখা সহজ হয়; ৪. খেজুর হৃদরোগ, জ্বর ও পেটের পীড়ায় উপকারী এবং বলবর্ধক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। ক্ষুধামান্দ্য ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে খেজুরবিশেষ উপকারী; ৫. খেজুর পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ দূর করে, শুষ্ক কাশি, অ্যাজমা ও গ্যাসের জন্যও উপকারী; ৬. রোজাদারের পেট খালি থাকায় শরীরে গ্লুকোজের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। খেজুর সেটা দ্রুত পূরণে সাহায্য করে।

বলা হয়ে থাকে, বছরে যতগুলো দিন আছে, খেজুরে তার চেয়েও বেশি গুণ রয়েছে। খেজুর যেমনি সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকর ফল। খেজুর খাওয়ার বৈজ্ঞানিক কারণ অনেক। যেমন—খেজুরের পুষ্টিগুণ প্রচুর। খেজুরে সুগারের পরিমাণ এত বেশি থাকে যে, এক কামড়েই অনেকটা এনার্জি পাওয়া যায়। এর মধ্যে আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, গ্লুকোজ, ম্যাগনেশিয়াম ও সুক্রোজ থাকে। যে কারণে খেজুর খাওয়ার মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে শরীরে এনার্জি বেড়ে যায়। সারা দিন উপোস করে শরীরে যে ক্লান্তি আসে, তা দূর করে এনার্জি জোগাতে সাহায্য করে খেজুর। রোজা রাখলে সাধারণত অ্যাসিডিটি হয়। যার থেকে অস্বস্তি হতে থাকে। খেজুর শরীরে অ্যাসিডের মাত্রা বশে রেখে অস্বস্তি কমায়। সারা দিন না খেয়ে থাকলে খাওয়ার সময় বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা তৈরি হয়। তাই খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙলে এর মধ্যে থাকা জটিল কার্বোহাইড্রেট হজম হতে বেশি সময় নেয়। ফাইবার থাকার কারণে পেট ভরা লাগে। তাই বেশি খাওয়ার আগেই পেট ভরে যায়। অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে তা পৌষ্টিকতন্ত্রের কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও হতে পারে। খেজুর শরীরে উৎসেচক ক্ষরণে সাহায্য করে। ফলে হজম ভালো হয়।

মহান রব আমাদের রমজানে স্বস্তি ও সুস্থতা দান করুন। আমিন।