ঢাকা ০৬:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
পেকুয়ায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৩ সাগরে ঘূর্ণিঝড় মোনথা, ২ নম্বর সংকেত সাংবাদিক আব্দুল আজিজের পিতৃবিয়োগ: জানাজা বাদ মাগরিব পেকুয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে অনলাইন জুয়ার ২ এজেন্ট আটক উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে কক্সবাজারে দ্রুত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন চায় শিবির টেকনাফে মাদক মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেফতার মহেশখালীতে পুলিশের অভিযানে আটক-১ সাংবাদিক হাফিজের বাবার জানাজা সোমবার সকাল ১০ টায় সাংবাদিক হাফিজের বাবার ইন্তেকাল: টিটিএনের শোক “গোলদীঘিতে ধরা পড়া কাতলা মাছটি ১১ কেজি নয়, প্রকৃত ওজন ৬ কেজি” আসছে “মন্থা”, কক্সবাজারে বৃষ্টি গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে: আঘাত হানবে মঙ্গল বা বুধবার প্রথম দিনই ধরা পড়ল আড়াই কেজির ইলিশ, ৯২০০ টাকায় বিক্রি ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা, কোথায়, কখন আঘাত হানতে পারে সবুজ ঘাসে ঢাকা চট্টগ্রামের উইকেট, কেমন হবে রান

কক্সবাজার বিমানবন্দর: আতংক আকাশে নয়, মাটিতে!

আকাশে নয়, এবার আতঙ্ক নেমে এলো রানওয়েতে। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন শহর কক্সবাজারের বিমানবন্দরে গত শনিবার সন্ধ্যায় উড্ডয়নের ঠিক আগ মুহূর্তে রানওয়েতে ঢুকে পড়ে একটি কুকুর। এতে বেসরকারি এয়ারলাইন এয়ার এস্ট্রার একটি ফ্লাইটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে কুকুরটি মারা যায় এবং ফ্লাইটটি এক ঘণ্টারও বেশি সময় বিলম্বিত হয়। যাত্রীদের মধ্যে দেখা দেয় চরম আতঙ্ক।

কুকুরের ধাক্কায় থমকে যায় উড্ডয়ন-

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ওই ফ্লাইটে ৭২ জন যাত্রী ছিলেন। কুকুরের সঙ্গে ধাক্কা লাগার পর পাইলট সঙ্গে সঙ্গে উড়োজাহাজ থামিয়ে দেন। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পরে মৃত কুকুরটি সরিয়ে ফেললে রাত ৮টার দিকে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়।

পুনরাবৃত্ত ঘটনার পরও স্থায়ী সমাধান নেই-

স্থানীয় বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। এর আগেও কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েতে কুকুর, গরু, এমনকি ছাগল প্রবেশ করে উড়োজাহাজ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেছে। ২০২১ সালে একইভাবে রানওয়েতে উড়োজাহাজের ধাক্কায় মারা যায় দুটি গরু। অথচ এখনো পর্যন্ত নেই কোনো নির্ভরযোগ্য প্রাণী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।

নিরাপত্তা হুমকিতে বিমান চলাচল-

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) স্বীকার করেছে, কক্সবাজার বিমানবন্দরে জনবল সংকট ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে নিয়মিত প্যাট্রোলিং করা সম্ভব হয় না। ফলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রাণী নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কুকুর বা অন্য বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য ভয়াবহ হুমকি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অ্যাভিয়েশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আইকাওর (ICAO) নির্দেশনা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে ‘বার্ড শুটার’ ও প্রাণী তাড়ানোর আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকা আবশ্যক। অথচ কক্সবাজার বিমানবন্দরে এখনো নেই কোনো বার্ড শুটার কিংবা কুকুর বা পাখি তাড়ানোর বিশেষ প্রযুক্তি।

যাত্রীদের আতঙ্ক ও ক্ষোভ-

একজন যাত্রী বলেন, ‘‘শনিবার বিমান হঠাৎ থেমে গেলে মনে হয়েছিল বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে। পরে শুনলাম কুকুরের সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে- তখন খুবই ভয় পেয়েছিলাম।’’

ব্যবস্থাপনার নাজুক অবস্থা-

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, কক্সবাজার বিমানবন্দর ঘিরে সুরক্ষা প্রাচীরের ঘাটতি, এলোমেলো নির্মাণকাজ ও ঠিকাদারি জটিলতা পরিস্থিতি আরও সংকটময় করে তুলেছে। ১৮৯ জন আনসার নিয়োজিত থাকলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সন্ধ্যার পর পর্যাপ্ত আলো না থাকা, পুরোনো যন্ত্রপাতি ও রাডার সমস্যাও নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে।

কর্তৃপক্ষের ভাষ্য-

বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মর্তুজা বলেন, ‘‘কয়েকটি কুকুর রানওয়েতে ঢুকে পড়ে। দেয়ালের কিছু অংশে নির্মাণকাজ চলায় সেগুলো ফাঁক দিয়ে আসে। মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বার্ড শুটার আমাদের নেই। এয়ারফোর্স মাঝে মাঝে শুট করে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। তবে পরবর্তী ঝুঁকি এড়াতে কুকুর তাড়ানো ও দেয়াল মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’

‘সেফটি ফার্স্ট’–তবু নেই নিরাপত্তার নিশ্চয়তা

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘‘সব বিমানবন্দরে বার্ড শুটার থাকা বাধ্যতামূলক। শুধু ঢাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেই চলবে না। যাত্রী, পাইলট ও ক্রুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।’’

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

This will close in 6 seconds

কক্সবাজার বিমানবন্দর: আতংক আকাশে নয়, মাটিতে!

আপডেট সময় : ০৬:১১:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫

আকাশে নয়, এবার আতঙ্ক নেমে এলো রানওয়েতে। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন শহর কক্সবাজারের বিমানবন্দরে গত শনিবার সন্ধ্যায় উড্ডয়নের ঠিক আগ মুহূর্তে রানওয়েতে ঢুকে পড়ে একটি কুকুর। এতে বেসরকারি এয়ারলাইন এয়ার এস্ট্রার একটি ফ্লাইটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে কুকুরটি মারা যায় এবং ফ্লাইটটি এক ঘণ্টারও বেশি সময় বিলম্বিত হয়। যাত্রীদের মধ্যে দেখা দেয় চরম আতঙ্ক।

কুকুরের ধাক্কায় থমকে যায় উড্ডয়ন-

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ওই ফ্লাইটে ৭২ জন যাত্রী ছিলেন। কুকুরের সঙ্গে ধাক্কা লাগার পর পাইলট সঙ্গে সঙ্গে উড়োজাহাজ থামিয়ে দেন। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পরে মৃত কুকুরটি সরিয়ে ফেললে রাত ৮টার দিকে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়।

পুনরাবৃত্ত ঘটনার পরও স্থায়ী সমাধান নেই-

স্থানীয় বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। এর আগেও কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েতে কুকুর, গরু, এমনকি ছাগল প্রবেশ করে উড়োজাহাজ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেছে। ২০২১ সালে একইভাবে রানওয়েতে উড়োজাহাজের ধাক্কায় মারা যায় দুটি গরু। অথচ এখনো পর্যন্ত নেই কোনো নির্ভরযোগ্য প্রাণী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।

নিরাপত্তা হুমকিতে বিমান চলাচল-

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) স্বীকার করেছে, কক্সবাজার বিমানবন্দরে জনবল সংকট ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে নিয়মিত প্যাট্রোলিং করা সম্ভব হয় না। ফলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রাণী নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কুকুর বা অন্য বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য ভয়াবহ হুমকি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অ্যাভিয়েশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আইকাওর (ICAO) নির্দেশনা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে ‘বার্ড শুটার’ ও প্রাণী তাড়ানোর আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকা আবশ্যক। অথচ কক্সবাজার বিমানবন্দরে এখনো নেই কোনো বার্ড শুটার কিংবা কুকুর বা পাখি তাড়ানোর বিশেষ প্রযুক্তি।

যাত্রীদের আতঙ্ক ও ক্ষোভ-

একজন যাত্রী বলেন, ‘‘শনিবার বিমান হঠাৎ থেমে গেলে মনে হয়েছিল বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে। পরে শুনলাম কুকুরের সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে- তখন খুবই ভয় পেয়েছিলাম।’’

ব্যবস্থাপনার নাজুক অবস্থা-

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, কক্সবাজার বিমানবন্দর ঘিরে সুরক্ষা প্রাচীরের ঘাটতি, এলোমেলো নির্মাণকাজ ও ঠিকাদারি জটিলতা পরিস্থিতি আরও সংকটময় করে তুলেছে। ১৮৯ জন আনসার নিয়োজিত থাকলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সন্ধ্যার পর পর্যাপ্ত আলো না থাকা, পুরোনো যন্ত্রপাতি ও রাডার সমস্যাও নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে।

কর্তৃপক্ষের ভাষ্য-

বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মর্তুজা বলেন, ‘‘কয়েকটি কুকুর রানওয়েতে ঢুকে পড়ে। দেয়ালের কিছু অংশে নির্মাণকাজ চলায় সেগুলো ফাঁক দিয়ে আসে। মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বার্ড শুটার আমাদের নেই। এয়ারফোর্স মাঝে মাঝে শুট করে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। তবে পরবর্তী ঝুঁকি এড়াতে কুকুর তাড়ানো ও দেয়াল মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’

‘সেফটি ফার্স্ট’–তবু নেই নিরাপত্তার নিশ্চয়তা

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘‘সব বিমানবন্দরে বার্ড শুটার থাকা বাধ্যতামূলক। শুধু ঢাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেই চলবে না। যাত্রী, পাইলট ও ক্রুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।’’