ঢাকা ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে কক্সবাজারে দ্রুত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন চায় শিবির টেকনাফে মাদক মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেফতার মহেশখালীতে পুলিশের অভিযানে আটক-১ সাংবাদিক হাফিজের বাবার জানাজা সোমবার সকাল ১০ টায় সাংবাদিক হাফিজের বাবার ইন্তেকাল: টিটিএনের শোক “গোলদীঘিতে ধরা পড়া কাতলা মাছটি ১১ কেজি নয়, প্রকৃত ওজন ৬ কেজি” আসছে “মন্থা”, কক্সবাজারে বৃষ্টি গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে: আঘাত হানবে মঙ্গল বা বুধবার প্রথম দিনই ধরা পড়ল আড়াই কেজির ইলিশ, ৯২০০ টাকায় বিক্রি ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা, কোথায়, কখন আঘাত হানতে পারে সবুজ ঘাসে ঢাকা চট্টগ্রামের উইকেট, কেমন হবে রান পাবনায় ট্রাকচাপায় বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীসহ নিহত ৩ কি হতে পারে: নির্বাচন, না নতুন অন্তর্বর্তী সরকার? ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে সড়ক ছাড়লো বাসটার্মিনাল এলাকার বাসিন্দারা টেকনাফ জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক: দলীয় লেজুড়বৃত্তির সাংবাদিকতা থেকে বেরিয়ে আসুন

একরামের শ্বশুরবাড়ির জায়গা দখল করে বদির বিলাসী গাছবাড়ি

টেকনাফ পৌর এলাকার চৌধুরী পাড়ার একটি বিশাল আমগাছের ছায়ায় নির্মিত একটি কাঠের গাছবাড়ি এখন অনেকের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু।

এই গাছবাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি। তিনি এই স্থানে ভিআইপি ও বিশেষ অতিথিদের নিয়ে বসতেন।

তবে এই গাছবাড়িটি নির্মিত হয়েছে একটি ৬৭ শতক বিতর্কিত জমির ওপর যা বদির বা তার পরিবারের মালিকানাধীন ছিল না।

১৯৯০ সালের বাংলাদেশ ভূমি জরিপ অনুযায়ী, এই জমি — যেখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রও রয়েছে — “অর্পিত সম্পত্তি” হিসেবে চিহ্নিত, যা সরকারের পক্ষে উপজেলা প্রশাসন পরিচালনা করে।

তবে জমিটির মালিকানা দাবি করেছেন জাহির আহমদ নামের এক ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা। তাদের দাবী, ২০১০ সালে বদির লোকজন জোরপূর্বক তাদের উচ্ছেদ করে। গেলো এক বছর আগে জাহিরের মৃত্যু হয়।

জাহিরের মেয়ে আয়েশা বেগম, যিনি ২০১৮ সালে র‍্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত সাবেক পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের স্ত্রী। তিনি বলেন, “২০০৯ সাল পর্যন্ত ঈদের ছুটিতে আমরা সবাই এই বাড়িতে আসতাম। কিন্তু ২০১০ সালে আমাদের আত্মীয়দের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়।”

জাহিরের একমাত্র ছেলে দীন মোহাম্মদ বলেন, তার বাবা ১৯৭১ সালের আগেই সেখানে টিনের ঘর বানিয়েছিলেন।

“বাবার মৃত্যুর পর ২০১০ সালে এক রাতে ডাকাতেরা পেছনের প্রাচীর ভেঙে ও মূল দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢোকে। তারা আমার ফুপু ও তার পরিবারকে ভয় দেখিয়ে চলে যেতে বলে। ভয়ে তারা পরদিনই পালিয়ে যায়। এরপর বদি জায়গাটি দখল করে,” বলেন দীন মোহাম্মদ।

তিনি আরও বলেন, বদি তাকে ১৮ লাখ টাকা দিয়ে জমি ভুলে যেতে বলেন, যদিও জমির বাজারমূল্য কমপক্ষে ৮ কোটি টাকা।

তিনি বলেছিলেন, “তোমার কিছু সই করতে হবে না, টাকা নিয়ে বাড়িটা ভুলে যাও”, বলেন দীন।

তিনি বদির বিরুদ্ধে তাদের জমির কাগজপত্র নিয়ে নেয়া ও চলমান মামলার দখল নেয়ার অভিযোগও করেন।

জানা গেছে, বদি গাছবাড়িটি নির্মাণ করেন জহিরের পরিবারিক বাড়ি ভেঙে ফেলার পর।

দলিল অনুযায়ী, ২০০১ সালের ২৩ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা জজ আদালতে জহির মামলা করেন, দাবি করেন জমিটি ভুলভাবে ‘অর্পিত সম্পত্তি’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

তিনি দাবি করেন, ১৯৬৬ সালে মিয়ানমারে পাড়ি জমানো আটজন রাখাইন ব্যক্তির কাছ থেকে জমিটি কিনেছিলেন তার বাবা।

এই মামলা এখনো চলমান।

সম্প্রতি এই প্রতিবেদক সরেজমিন গিয়ে গাছবাড়িটি তালাবদ্ধ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখতে পান।

স্থানীয়রা জানান, জুলাইয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বদির পরিবার জমি ছেড়ে চলে যায়।

এরপর কিছুদিনের মধ্যে চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার হন বদি এবং বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

জমি নিয়ে জানতে চাইলে টেকনাফের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী বলেন, “এই এলাকায় অনেক খাস জমি আইনি জটিলতায় জড়িত।”

সরকারের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামসুল হুদা বলেন, “জহিরের পরিবার ও রাষ্ট্রপক্ষের মামলাটি বর্তমানে কক্সবাজার অতিরিক্ত আদালত-১ এ চলছে। ২০১৪ সালে তারা একটি পক্ষে রায় পেলেও, সরকার তার বিরুদ্ধে একটি মিসকেস করে।”

আদালতের নথি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে মামলার তিনজন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণের নির্দেশ দেয় আদালত।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

This will close in 6 seconds

একরামের শ্বশুরবাড়ির জায়গা দখল করে বদির বিলাসী গাছবাড়ি

আপডেট সময় : ০৪:৫২:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

টেকনাফ পৌর এলাকার চৌধুরী পাড়ার একটি বিশাল আমগাছের ছায়ায় নির্মিত একটি কাঠের গাছবাড়ি এখন অনেকের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু।

এই গাছবাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি। তিনি এই স্থানে ভিআইপি ও বিশেষ অতিথিদের নিয়ে বসতেন।

তবে এই গাছবাড়িটি নির্মিত হয়েছে একটি ৬৭ শতক বিতর্কিত জমির ওপর যা বদির বা তার পরিবারের মালিকানাধীন ছিল না।

১৯৯০ সালের বাংলাদেশ ভূমি জরিপ অনুযায়ী, এই জমি — যেখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রও রয়েছে — “অর্পিত সম্পত্তি” হিসেবে চিহ্নিত, যা সরকারের পক্ষে উপজেলা প্রশাসন পরিচালনা করে।

তবে জমিটির মালিকানা দাবি করেছেন জাহির আহমদ নামের এক ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা। তাদের দাবী, ২০১০ সালে বদির লোকজন জোরপূর্বক তাদের উচ্ছেদ করে। গেলো এক বছর আগে জাহিরের মৃত্যু হয়।

জাহিরের মেয়ে আয়েশা বেগম, যিনি ২০১৮ সালে র‍্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত সাবেক পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের স্ত্রী। তিনি বলেন, “২০০৯ সাল পর্যন্ত ঈদের ছুটিতে আমরা সবাই এই বাড়িতে আসতাম। কিন্তু ২০১০ সালে আমাদের আত্মীয়দের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়।”

জাহিরের একমাত্র ছেলে দীন মোহাম্মদ বলেন, তার বাবা ১৯৭১ সালের আগেই সেখানে টিনের ঘর বানিয়েছিলেন।

“বাবার মৃত্যুর পর ২০১০ সালে এক রাতে ডাকাতেরা পেছনের প্রাচীর ভেঙে ও মূল দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢোকে। তারা আমার ফুপু ও তার পরিবারকে ভয় দেখিয়ে চলে যেতে বলে। ভয়ে তারা পরদিনই পালিয়ে যায়। এরপর বদি জায়গাটি দখল করে,” বলেন দীন মোহাম্মদ।

তিনি আরও বলেন, বদি তাকে ১৮ লাখ টাকা দিয়ে জমি ভুলে যেতে বলেন, যদিও জমির বাজারমূল্য কমপক্ষে ৮ কোটি টাকা।

তিনি বলেছিলেন, “তোমার কিছু সই করতে হবে না, টাকা নিয়ে বাড়িটা ভুলে যাও”, বলেন দীন।

তিনি বদির বিরুদ্ধে তাদের জমির কাগজপত্র নিয়ে নেয়া ও চলমান মামলার দখল নেয়ার অভিযোগও করেন।

জানা গেছে, বদি গাছবাড়িটি নির্মাণ করেন জহিরের পরিবারিক বাড়ি ভেঙে ফেলার পর।

দলিল অনুযায়ী, ২০০১ সালের ২৩ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা জজ আদালতে জহির মামলা করেন, দাবি করেন জমিটি ভুলভাবে ‘অর্পিত সম্পত্তি’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

তিনি দাবি করেন, ১৯৬৬ সালে মিয়ানমারে পাড়ি জমানো আটজন রাখাইন ব্যক্তির কাছ থেকে জমিটি কিনেছিলেন তার বাবা।

এই মামলা এখনো চলমান।

সম্প্রতি এই প্রতিবেদক সরেজমিন গিয়ে গাছবাড়িটি তালাবদ্ধ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখতে পান।

স্থানীয়রা জানান, জুলাইয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বদির পরিবার জমি ছেড়ে চলে যায়।

এরপর কিছুদিনের মধ্যে চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার হন বদি এবং বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

জমি নিয়ে জানতে চাইলে টেকনাফের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী বলেন, “এই এলাকায় অনেক খাস জমি আইনি জটিলতায় জড়িত।”

সরকারের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামসুল হুদা বলেন, “জহিরের পরিবার ও রাষ্ট্রপক্ষের মামলাটি বর্তমানে কক্সবাজার অতিরিক্ত আদালত-১ এ চলছে। ২০১৪ সালে তারা একটি পক্ষে রায় পেলেও, সরকার তার বিরুদ্ধে একটি মিসকেস করে।”

আদালতের নথি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে মামলার তিনজন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণের নির্দেশ দেয় আদালত।