মাতারবাড়ি বন্দরের জন্য ২৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়কে খরচ হচ্ছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। গত সরকারের আমলে জাইকার অর্থায়নে নেওয়া এ প্রকল্পের প্রতি কিলোমিটারে খরচ হচ্ছে রেকর্ড ৪৭৬ কোটি টাকা। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিটুজি চুক্তিতে দ্বিপাক্ষিক ঋণের শর্তের বেড়াজালই মূল কারণ। ঠিকাদার, পরামর্শক নিয়োগে প্রতিযোগিতার অভাবে বেড়েছে খরচ।
মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দরকে কক্সবাজারের সঙ্গে যুক্ত করতে ২৭ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়ক তৈরি করা হচ্ছে। যার ২৬ কিলোমিটারই হবে ২ লেনের। তবে, কিলোমিটার প্রতি ব্যয়ের পরিমাণ পৌনে ৫০০ কোটি টাকার বেশি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জমি অধিগ্রহণে বড় অঙ্কের খরচ না হলেও, সড়কটির নির্মাণ ব্যয় ঢাকা-ভাঙ্গা ৪ লেনের এক্সপ্রেসওয়ের চেয়ে আড়াইগুণ। দেশের অন্যান্য মহাসড়কের তুলনায় প্রতিকিলোমিটারে ব্যয় বেশি ৪-৫ গুণ।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এম শামসুল হক বলেন, ‘এটাতো এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে না। কোনো একটা অংশ ২৬ কিলোমিটারে দুই লেনেরই থাকছে। হতে পারে ক্রস ড্রেনে স্ট্যাকচার ফ্রিকোয়েন্সি বেশি সে কারণে কিন্তু এক্সাভেটিংলি এ পরিমাণ খরচটা আসা উচিত না।’
দু’দফা সময়ের সঙ্গে প্রকল্পে ব্যয় বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। যার ৯ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকাই জাপানী সংস্থা-জাইকার ঋণ। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জিটুজি ঋণ সহজ শর্তের মোড়কে এক রকম ফাঁদ। তাদের মতে, সরকারি ক্রয় নীতিমালা অনুযায়ী জাইকার প্রকল্পে পুনরায় নিলামের সুযোগ থাকে না। অংশ নেয় কেবল জাপানের ঠিকাদার, পরামর্শক সিন্ডিকেট।
এম শামসুল হক বলেন, ‘যদি ১৫ শতাংশের বেশি চলে আসে তাহলে কিন্তু পিপিআরের গাইডলাইনের আওতায় আমরা কিন্তু পুনরায় নিলামে চলে যায়, যৌক্তিকীকরণের জন্য। জাইকা প্রকল্পে তাও করা যায় না। যার কারণে নিলাম পর্যায়ে খরচটা বেড়ে যায়। যেহেতু রিট্রেন্ডার করা যাচ্ছে না, পুনরায় নিলাম করা যাচ্ছে না, পাশাপাশি এর ওভারহেডগুলি অনেক বেশি।’
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘সহজ শর্তে ঋণ পেতে গেলে কিছু বোঝা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। আমরা যদি বলি নেব না, আমাদের নিজেদেরই আছে, তাহলে বলে প্রজেক্টা নিও না।’
ভবিষ্যতে যৌক্তিক খরচে বড় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দ্বিপাক্ষিক ঋণের পরবির্তে এডিবি, বিশ্বব্যাংকের মত বহুপাক্ষিক সংস্থার ঋণ এবং পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপকে উৎসাহিত করছেন বিশেষজ্ঞরা।