বর্ষা মৌসুমের আগেই রূপ বদল নিতে শুরু করেছে সমুদ্র সৈকত সহ কক্সবাজারের প্রকৃতি। বলতে গেলে যৌবনরূপ নিয়েছে সাগর ও সৈকতের প্রকৃতি। সাগরের বিরাট গর্জনের সাথে সৈকতে আঁচড়ে পড়ছে বড় বড় ঢেউ। এতে সাগরপাড়ের প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য মেলে ধরেছে ভিন্নরূপে। যা এবার উপভোগ করা যাবে ঈদুল আজহা’র লম্বা ছুটিতে।
আর ছুটির দিনগুলোতে মুখরিত হয়ে উঠবে সমুদ্র সৈকত সহ জেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলো। সমাগম ঘটবে লাখো পর্যটকের।
এদিকে গত ১৫ দিনের বেশী সময় বৈরী আবহাওয়া আর অব্যাহত ভারী বর্ষণে কক্সবাজারে তেমনটা পর্যটক সমাগম ঘটেনি। পর্যটন মৌসুম না হলেও এতে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত সাগরপাড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা। তাদের আশা, ঈদের লম্বা ছুটিতে সমাগম ঘটবে কাঙ্খিত সংখ্যক পর্যটক।
সৈকত পাড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, রমজানের ঈদের ছুটির পর আর তেমন ব্যবসা হয়নি। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে টানা ১০ দিনের ছুটিতে ভালো ব্যবসা হবে বলে আশা করছি।
ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটক আসবে, তাই আগেভাগেই প্রস্তুত সাগরপাড়ের হোটেলগুলো। এরইমধ্যে তারকামানের সহ হোটেল-মোটেলগুলোর ৫০ শতাংশ আগাম বুকিং হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতি। তারা বলছে, সামনের দিলগুলোতে আরও কক্ষ বুকিংয়ের আশা করছি।
এছাড়াও পর্যটক আকর্ষণে হোটেল কক্ষের ভাড়ায় এবং খাবার রেঁস্তোরাগুলোতে বিশেষ ছাড়ের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি মো. কাশেম সিকদার বলেন, “ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশ হোটেল কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। ঈদের দুইদিন পর থেকেই পর্যটকের ভীড় বাড়বে। ৮-১২ জুন ৪ দিন প্রতিদিন লক্ষাধিক পর্যটকের অবস্থান থাকবে কক্সবাজারে। অতিরিক্ত পর্যটকের চাপ সামলাতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৪ জনের রুমে ৫/৬ জন থাকার ব্যবস্থা করা হবে।”
হোটেল দ্যা কক্স টুডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপক আবু তালেব বলেন, হোটেল মোটেলে ছাড়ের পাশাপাশি এবার ঈদকে ঘিরে ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কক্স কার্নিভালে কিডস জোন চালু করা হয়েছে।যেখানে ছোট শিশুদের জন্য রয়েছে বিনোদনের ব্যবস্থা।সন্ধ্যায় কার্নিভালে এসে কিডস জোনে এসে খেলতে পারবে শিশুরা। একই ছাদের নিচে ফুড আউটলেটের সাথে মিউজিকও আছে, পাশাপাশি কিডস জোনও আছে।”
বর্ষা মৌসুমে সাগর বছরের অন্য সময়ের চাইতে বেশী উত্তাল থাকে। এতে সমুদ্রও ভয়ংকর রূপ নেয়। তাই সমুদ্রস্নানে পর্যটকদের বাড়তি নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুতি নিয়েছে লাইফ গার্ড কর্মিরা।
সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মী মোহাম্মদ সিফাত জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পর্যটক শূণ্য ছিল কক্সবাজার। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে, তাই পর্যটকদের ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে তাদের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এদিকে প্রশাসনের সংস্লিষ্টরা বলছেন, আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা ও হয়রানি রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইন শৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মাঠে থাকবে ভ্রাম্যমান আদালত।
পর্যটকদের নিরাপত্তায় বহুবিধ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মো: সালাউদ্দীন বলেন, “জেলা পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র্যাবের নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের অধীনে থাকা বীচ কর্মীরাও পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিতে কাজ করবে”
ঈদুল আজহার টানা ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য প্রস্তুত হিমছড়ির, ইনানী, পাটুয়ারটেক, মেরিন ড্রাইভ ও রামুর বৌদ্ধ বিহারগুলো সহ জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো। আর আগত পর্যটকরা উপভোগ করার সুযোগ পাবেন বর্ষায় যৌবনরূপ নেওয়া পাহাড়, সমুদ্র ও মেরিন ড্রাইভের অপরূপ সৌন্দর্য্য।