কক্সবাজারের সবচেয়ে পুরোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৫০ বছর পার করতে যাচ্ছে। ১৮৭৪ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার নথিপত্র পাওয়া গেলেও ঠিক কোন তারিখ, সেটা জানা এখনো সম্ভব হয়নি।
এদিকে বিদ্যালয়ের দেড়শো বছর উপলক্ষে বছর ব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে প্রাক্তন ছাত্রদের সংগঠন কসউবি প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ।
পরিষদের আহবায়ক ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাসের সাথে মিশে আছে ১৮৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অনন্য ভূমিকা। এ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্ররা দেশে-বিদেশে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং চব্বিশে জুলাইয়ের ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানে এ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের অসাধারণ অবদান আমাদের গর্বিত করে।
প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের মূখ্য সংগঠক মুহিব্বুল মুক্তাদির তানিম জানান, ২০১৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর প্রথম পুনর্মিলনী আয়োজনের মাধ্যমে কসউবিয়ানদের সংহতির নতুন অধ্যায় শুরু হয়, যা প্রেক্ষিতে ২৫ ডিসেম্বরকে ‘কসউবিয়ান দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে কসউবি প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালু রয়েছে, যার গঠনপ্রক্রিয়া অব্যাহত।
বছর ব্যাপী কর্মসূচি প্রসঙ্গে প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের সংগঠক শেখ আসিকুজ্জামান বলেন, চলতি বছর বিদ্যালয়ের ১৫০ বছর পূর্ণ হলেও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী বছর বৃহৎ পরিসরে সার্ধশতবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিক উদযাপন করা হবে। এ মাসের ৩১ তারিখ সার্ধশতবার্ষিকীর দ্বার উন্মোচন করা হবে একটি বিশেষ গ্রাফিতি অঙ্কন ও শীতার্তদের মাঝে ১৫০টি শীতবস্ত্র বিতরণের মাধ্যমে।
পরিষদের অন্যতম সংগঠক সাঈদ বিন জেবর বলেন, ২০২৫ সালে একটি গ্র্যান্ড প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমরা কসউবি ১৫০ বছরের গৌরবময় ঐতিহ্য উদযাপন করব, যা বিদ্যালয়ের ইতিহাস ও কৃতিত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
আগামী একবছর ধরে ধারাবাহিক সামাজিক, শিক্ষামূলক এবং মানবিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে সার্ধশতবার্ষিকী উদযাপন অব্যাহত থাকবে বলে জানান প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের সংগঠকরা।
বিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
কখন, কীভাবে এবং কোন তারিখে এই প্রতিষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল তার সঠিক দিন-তারিখ পাওয়া যায় না। সময়ের আবর্তনে প্রাচীন সব নথিপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। তবে একথা সর্বজন স্বীকৃত যে, ১৮৭৪ সালে এখানে প্রতিষ্ঠানটির সূচনা হয়েছিল। বিদ্যালয়ের রেকর্ডপত্রে এ সালটি পাওয়া যায়। প্রাচীন ব্যক্তিবর্গের জবানী এবং বিদ্যালয়ের পরিদর্শন বুকের পরিদর্শকের মন্তব্য থেকে জানা যায় যে, সূচনালগ্নে এটি মাদ্রাসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রায় ৩০ বছরাধিক মাদ্রাসা শিক্ষাঙ্গন থাকার পর ক্রমে ইংরেজ শাসনের প্রভাব ও বাংলা চর্চার অগ্রগতি হলে স্থানীয়ভাবেও রেনেসাঁর প্রভাব পড়ে। ক্রমে জনগণ বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষার দিকে আগ্রহী হন। তাই স্থানীয় জনগনের আগ্রহে ও তৎকালীন সরকারি প্রভাবে মাদ্রাসার নাম পরিবর্তন করে ১৯০৮ সালের দিকে Middle English School নামকরণ করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হয়। মিডল ইংরেজি বিদ্যালয়ে প্রাইমারি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফারসি, পালি, সংস্কৃত ইত্যাদি বিষয়ের উপরও শিক্ষাদান করা হত।
ক্রমে শিক্ষা-দীক্ষার প্রসার ও আধুনিক শিক্ষার ছোঁয়াইয়ে বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিদ্যালয়ের সার্বিক অবকাঠামোর উন্নয়ন হতে থাকে। তাই মডেল ইংরেজি বিদ্যালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ উচ্চবিদ্যালয়ে রূপদানের জন্য স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ এবং কমিটির সদস্যবৃন্দ সক্রিয় হন। ক্রমে দাবী সরকারের নিকট পৌঁছালে ১৯২৩ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর তৎকালীন বিদ্যালয় পরিদর্শক জনাব আহসান উল্লাহ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন। বিদ্যালয়ের Visitor’s Book’-এর ৯ পৃষ্ঠায় তাঁর দীর্ঘ মন্তব্য রয়েছে। তাঁর রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তীতে M.E.স্কুলকে H.E স্কুল হিসেবে স্বীকৃতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক Matriculation পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি পাওয়া যায়।
Higher English School প্রতিষ্ঠা: উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯২৩ সালের ৪ঠা জানুয়ারি। তৎকালীন S.D.O.Mv. A.WHarris স্কুলের দ্বারোদঘাটন করেছিলেন। সেদিন থেকে M.E স্কুলের নাম পরিবর্তন হয়ে H.E স্কুলে পরিণত হয়। Visitor’s Book-এর ২য় পৃষ্ঠায় এ সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে।