কক্সবাজারের খুরুশকুল মাঝির ঘাট এলাকায় আল্লাওয়ালা হ্যাচারিতে আলী আকবর নামক যুবক খুনের ঘটনায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে সাড়ে ১০টায় কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস খান মামলার এজাহার গ্রহণের বিষয়টি জানিয়েছেন। নিহত আলী আকবরের স্ত্রী এলমুন্নাহার বাদী হয়ে এই এজাহার দায়ের করেছেন।
ওসি ইলিয়াস খান বলেন, “আমরা এজাহার হাতে পেয়েছি, তার পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। বলা যায় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।”
“কারা আসামী সেটা মামলা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর জানানো যাবে”, বলেন ওসি।
মামলা প্রক্রিয়াধীন থাকার বিষয়টি নিহত আলী আকবরের ভাই মো. আনিসও জানিয়েছেন। তিনি মুঠোফোনে বলেন, “আমার ভাবি থানায় গেছেন মামলা করার জন্য।”
এর আগে দুপুরে এ ঘটনায় পুলিশ হেফাজতে থাকা হ্যাচারির পরিচালক রাইয়ান কাসেমকে ফৌজদারি কার্য বিধির ৫৪ ধারায় আদালতে সোপর্দ করা হয়। কক্সবাজার সদর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আখতার জাভেদের আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করে।
ওসি ইলিয়াস খান জানান, মিজান ও হোসাইন নামের আরো দুজনকে সোমবার একইভাবে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে রাইয়ানকে আদালতে তোলা হলে মঙ্গলবার তার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন, কক্সবাজার জেলা বারের সভাপতি এড. সৈয়দ আলম, সাধারণ সম্পাদক এড. তাওহিদুল আনোয়ার, সাবেক সভাপতি এড. শাহজালাল চৌধুরী, সাবেক সভাপতি এড. আবুল কালাম সিদ্দীকী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. গোলাম ফারুক খান কায়সার।
এড. গোলাম ফারুক খান কায়সার জানান, তারা এ ঘটনায় রাইয়ানের সম্পৃক্ততা না থাকার বিষয়ে নানান যুক্তি তুলে ধরেছেন। কিন্তু আদালত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্ধিগ্ধ (সন্দেহভাজন) হিসেবে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।
গোলাম ফারুক খান বলেন, “আদালত রাইয়ানকে সুচিকিৎসার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।”
এ ঘটনায় কারাগারে থাকা রাইয়ান কাসেম জুলাই অভ্যুত্থানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক। সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপিরও সংগঠক হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
এদিকে তার মুক্তির দাবীতে মঙ্গলবার সন্ধায় কক্সবাজারে মশাল মিছিল ও বিক্ষোভ করেছে জুলাই আন্দোলনে তার সহযোদ্ধারা। শহরের কালুর দোকান থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে এসে বিক্ষোভে মিলিত হয়। এসময় তারা প্রায় দুই ঘন্টা অবস্থান করে। সেখানে পুলিশের সাথে উত্তেজনাকর মুহুর্তও তৈরি হতে দেখা যায়।
এসময় ছাত্র সংগঠকরা দাবী করেন, জুলাই বিপ্লবের সম্মুখ সারির যোদ্ধা রাইয়ান কাশেমের উপর বর্বরোচিত হামলা হয়েছে এবং তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
রাইয়ান কাশেমের মুক্তির আগ পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে ছাত্র সংগঠক রবিউল বলেন, “আল্লাহওয়ালা হ্যাচারিতে যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে আমরা এর জন্য শোকাহত। তবে নির্দোষ রাইয়ানের জামিন আবেদনের পরও তা নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তাই আমাদের এই অবস্থান কর্মসূচি।”
রাইয়ান কাশেমের মুক্তির দাবি জানিয়ে আরেক সংগঠক শাহেদ বলেন, “অনতিবিলম্বে রাইয়ান কাশেমকে জামিন দিয়ে নির্দোষ প্রমাণিত না করলে মব কি প্রশাসনকে আমরা তা বুঝিয়ে দেব।”
এসময় বিক্ষুব্ধরা প্রশাসনের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, “এ শহরে মোনাফ এর মত মানুষেরা প্রকাশ্যে মিছিল করতে পারে, তাদেরকে গ্রেফতার করা হয় না। তবে রাইয়ান কাশেমের মতো বিপ্লবীদের কেন বিনা অপরাধে গ্রেফতার করা হবে?”
রোববার (৫ মে) রাত ১০ টার দিকে খুরুশকুলের মাঝির ঘাটের ‘আল্লাওয়ালা হ্যাচারি’ নামের একটি মৎস্য ঘেরে আলি আকবর নামের ওই যুবক নিহতের ঘটনা ঘটে।
ওসি ইলিয়াস খান জানান, নিহত আলি আকবর খুরুশকুলের কুলিয়াপাড়ার মৃত দানু মিয়ার পুত্র।
ঘটনার পর হ্যাচারির পরিচালক রাইয়ান কাশেম গণমাধ্যমের কাছে দাবী করেছিলেন, নিহত যুবক তাদের ঘেরে মাছ চুরি করতে এসে ধরা পড়ে। এসময় ওই যুবক নৈশ প্রহরীকে দা দিয়ে আঘাত করলে আত্মরক্ষার্থে পালটা লাঠির আঘাত করে৷ এতে আকবর নিহত হয়।
তবে এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবারের অভিযোগ করেন, আকবর’কে বাড়ি থেকে ডেকে এনে চুরির অপবাদ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ঘটনার সময় যুবকের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার স্থান ‘আল্লাহওয়ালা হ্যাচারি’তে এলাকাবাসী ভাঙচুর চালিয়েছিলেন। একপর্যায়ে তারা হ্যাচারির পরিচালক রাইয়ান কাসেমের উপরও হামলা করে। এতে রাইয়ান আহত হওয়ার তথ্য দিয়েছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সোহেল।
পরে পুলিশ রাইয়াকে উদ্ধার করে হেফাজতে নেয় এবং মঙ্গলবার সকালে তাদের তত্ত্বাবধানে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম নিয়ে যায়।
নিহত আলী আকবরকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় সোমবার দুপুরের পর।
ময়নাতদন্তের বিষয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাবুক্তগীন মাহমুদ শহেল জানান, নিহত যুবকের মাথায় ও চোখে গুরুতর জখমের চিহ্ন রয়েছে। হাত পেছনে বাঁধা ছিলো। কিভাবে কি কারণে মৃত্যু হয়েছে তা বিস্তারিত ময়না প্রতিবেদনে উঠে আসবে।