মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা বাড়ার মধ্য দিয়ে প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র। তারা দাবি করেন মিয়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি-র (এএ) নির্যাতন থেকে বাঁচতেই রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে।
রোহিঙ্গা সূত্র জানায় রাখাইনে তারা হত্যাকাণ্ড গুম নির্যাতন এবং বিদ্রোহীদের মানবঢাল হিসেবে নিয়োগ ও শ্রমিক হিসেবে ব্যবহারসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো মিজানুর রহমান বলেন বর্তমানে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই এসেছে গত জুন মাসের পর।
তিনি বলেন পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা আরাকান আর্মির নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। তারা যে বাড়িঘর ছেড়ে এসেছে সেসব স্থানে অন্য সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করছে বলেও জানিয়েছে। তবে এসব তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
সরকারি সূত্র জানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে আসা ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর)।
নতুন এ আগমনসহ বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ১৩ লাখ।
নতুন রোহিঙ্গাদের আবাসনের জন্য ইউএনএইচসিআর শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বলে জানান মিজানুর।
তিনি বলেন ইউএনএইচসিআর এক লাখের বেশি রোহিঙ্গার আবাসনের ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু আমাদের পক্ষে এত বড় পরিসরে ঘর নির্মাণ করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন নতুন আশ্রয়ন প্রকল্প রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে আরও কঠিন করে তুলবে কারণ এটি রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসতে উৎসাহিত করবে।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মো জুবায়ের বলেন রাখাইনে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। তাদের শ্রমিক হিসেবে কাজে বাধ্য করছে এবং বাহিনীতে নিয়োগ দিচ্ছে। অনেকে নিখোঁজ এবং কেউ কেউ নিহত হয়েছে। অনেক ইসলামি বিদ্বান নিখোঁজ হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন সম্প্রতি আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে বাংলাদেশ নেপাল ও ভারত থেকে আসা রাখাইন (মগ) জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসন করছে।
এই কারণেই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি রাখাইনের পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেন এবং আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ ও তদন্ত দাবি করেন।
২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
তারা দাবি করে ওই সময় রাখাইন জনগোষ্ঠীও সেনাবাহিনীর সাথে মিলে নির্যাতনে অংশ নিয়েছে।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে রাখাইন জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী আরাকান আর্মি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে এবং ১৭টির মধ্যে ১৪টি টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ৮০ শতাংশ রাখাইন রাজ্যে বিজয়ী হওয়ার দাবি জানায়।
এরপর ২৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশ-রাখাইন সীমান্ত পুরোপুরি আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
এএ এবং সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের মধ্যে উভয়পক্ষের হামলা নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়ে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
পরবর্তীতে রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর আরাকান আর্মির হাতে আরও বেশি নির্যাতন হত্যা ও গুমের শিকার হয়েছে রোহিঙ্গারা বলে অভিযোগ।