কক্সবাজারের কৃতি সন্তান, সবুক্তগীন আহমেদ জেংগী সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সরকার প্রদত্ত মর্যাদাপূর্ণ চেভেনিং স্কলারশিপ অর্জন করেছেন। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত চেভেনিং স্কলারশিপ আজ বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানিত ফুল-ফান্ডেড বৃত্তি প্রোগ্রামের মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নেত্রিত্ত গুনাবলির জন্য বাছাই করা বিশিষ্ট উদীয়মান তরুণদের যুক্তরাজ্যে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করার সুযোগ প্রদান করে।।
যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (FCDO) এবং অংশীদার সংস্থাগুলোর তহবিল দ্বারা পরিচালিত এই প্রোগ্রামটি ১৬০টি দেশে ৫৫,০০০-এরও বেশি অ্যালামনাই নিয়ে একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে বিশ্ব নেত্রিত্ত পর্যায়ের ব্যবসায়ি, উদ্ভাবক, বিজ্ঞানি, প্রকৌশলী , চিকিৎসক, ও সমাজবিদ । এই বছর বাংলাদেশ থেকে ২২ জন এই প্রখ্যাত বৃত্তি অর্জন করেছেন। তাদের মধ্যে, সবুক্তগীন ই দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে একমাত্র প্রাপক, যা এই অর্জনকে কক্সবাজার জেলারজন্য বিশেষ গৌরব বয়ে এনেছে।
শৈশব থেকেই সবুক্তগীন, যিনি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ জেংগীর বড় ছেলে এবং প্রয়াত আবুল আহমেদ মাস্টারের নাতি (মাস্টারপাড়া, ইউনিয়ন: হারবাং, উপজেলা: চকরিয়া, কক্সবাজার), দায়িত্বের গভীর বোধ নিয়ে বড় হয়েছেন। তিনি কক্সবাজার সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এস এস সি, ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি সম্পন্ন করেন এবং পরে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (CUET) থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০১৫ সাল থেকে, সবুক্তগীন নিজেকে মিয়ানমারের সহিংসতা থেকে পালিয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া নির্যাতিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সেবায় উৎসর্গ করেছেন। তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন UNHCR-এর সঙ্গে Shelter ও WASH সুবিধা ডিজাইন করে, পরে আরও বিস্তৃত ভূমিকা নেন—যেমন অর্থ সংস্থান, বহিঃ সংযোগ, অংশিদার সমন্বয়সহ সরকারি যোগাযোগ সমন্বয় ইত্যাদি। সম্প্রতি, তিনি ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (ISCG)-এর সঙ্গে কাজ করছেন, যা বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সাড়া কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছে। এখানে তিনি মানবিক প্রবেশাধিকার, সমষ্টিগত কার্যক্রম পরিচালনা, সরকারি অংশীদার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছেন।
দীর্ঘ টানা দশ বছরেরও বেশি মানবিক সেবায় পেশাগত জীবনঅতিবাহিত করার পর, চেভেনিং বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ বাথ এ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন, সংঘাত ও মানবিক কার্যক্রমেউচ্চতর পড়াশোনার জন্য সবুক্তগীন এখন পেশাগত জীবন থেকেসাময়িক বিরতি নিচ্ছেন। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ বাথশিক্ষাগত উৎকর্ষ এবং গবেষণার জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, যা তার পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত সম্পর্কে তিনি বলেন: “চেভেনিং কেবল একটি একাডেমিক বৃত্তি নয় — এটি সেই সবমানুষের মধ্যে বিনিয়োগ, যারা দেশ ও বিশ্বে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। কক্সবাজার থেকে চেভেনিং স্কলার হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বৈশ্বিক মঞ্চে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়ে আমি সত্যিই অত্যন্ত গর্বিত ও কৃতজ্ঞ। পড়াশোনা শেষে বাংলাদেশে ফিরেএসে আমার অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অর্থবহ পরিবর্তন আনতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—বিশেষ করে কক্সবাজারের মানুষসহ দেশের মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে”