Tuesday, May 7, 2024

লবণ আমদানির চক্রান্তের অভিযোগ চাষীদের

প্রধান প্রতিবেদক:

লবণ চাষের মৌসুম শুরু হওয়ার আগ মুহুর্তে আমদানির চক্রান্তের অভিযোগ তুলছে চাষীরা।

তাদের দাবী, সরকারকে ভুল বুঝিয়ে মিল মালিকদের একটি চক্র লবণ আমদানির পাঁয়তারা শুরু করেছে। এই চক্রান্তে সিন্ডিকেটটি সফল হলে লবণ শিল্পে বড় ধরণের ধ্বস নামবে বলে দাবী চাষীদের।সম্প্রতি লবণ আমদানির তৎপরতা বন্ধের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করে কক্সবাজার লবণ চাষী ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদ।

সংগঠনের নেতারা দাবী করেন, যে পরিমাণ লবণ বর্তমানে মজুদ রয়েছে সেগুলো দিয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত অনায়াসে চলবে দেশ। নভেম্বর থেকে উৎপাদন শুরু হলে ডিসেম্বরে গিয়ে চাহিদা খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ যোগান যাবে নতুন লবণের।গত কয়েকবছর ধরে আশানুরূপ দাম পাওয়ায় লবণচাষীরা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কিন্তু কিছু অসাধু মিল মালিক চক্রান্ত করে লবণ শিল্পকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে বলে দাবী সাধারণ কৃষকদের।

কক্সবাজার লবণ চাষী ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, মিল মালিকরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে আমদানির পাঁয়তারা করছে। পরিতোষ বাবু ও চট্টগ্রামের নুরুল কবির নামে দুই ব্যক্তি এই চক্রান্তের নেপথ্যের কারিগর।

জানা গেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আগস্টে টানা একমাস মাঠ থেকে লবণ সরবরাহ বন্ধ ছিলো। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে লবণ আমদানির অজুহাত তুলছে মিল মালিকরা।

যেসব মিল মালিক আমদানির ষড়যন্ত্র করছে তারা মাঠের বাস্তব পরিস্থিতি জানেনা বলে দাবী করে শহিদুল্লাহ বলেন, ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ছনুয়া এবং টেকনাফে মাঠে নামতে শুরু করেছে চাষীরা। নভেম্বরের শুরুতেই উৎপাদন পুরোদমে শুরু হবে বলে দাবী করেন তিনি।

চাষের মৌসুম শুরু হওয়ার আগ মুহুর্তে এসে লবণ আমদানির প্রক্রিয়াকে চাষীদের নিরুৎসাহিত করে লবণশিল্পকে ধ্বংস করার পায়তারা দাবী করে শহিদুল্লাহ আমদানি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) তথ্য বলছে, লবণ দেশের একমাত্র উৎপাদিত পণ্য যা দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ পুরো দেশ। এটি দেশের দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর কিছু জায়গায় এবং বাকিটা কক্সবাজারে উৎপাদন হয়।

বিসিকের তথ্য বলছে, লবণের দাম বাড়ার সাথে সাথে গত কয়েক বছর ধরে চাষাবাদও বাড়ছে। গেল মৌসুমে দেশে লবণের চাষ হয়েছে ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে। এতে উৎপাদন হয় ২২ লক্ষ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন লবণ।

দেশে প্রতিমাসে ২ লাখ মেট্রিক টন লবণের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে মাঠে মজুদ রয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন আর মিলগুলোতে মজুদ রয়েছে দেড় লাখ মেট্রিক টন লবণ।

মজুদের হিসাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘাটতি না পড়ার কথা না থাকলেও গত বছরের মতো এবার ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোপুরি উৎপাদন শুরু হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছে সরকার। কারণ চলতি বছর আবহাওয়ার চরিত্র বুঝে উঠতে পারছে না বিসিক। এখনো থেমে থেমে বৃষ্টি উঁকি দেওয়ায় নভেম্বরে চাষীদের মাঠে নামা নিয়ে শংকা রয়েছে।গেলো বছর আগেভাগে নেমেও ডিসেম্বরে উৎপাদন হয়েছিল মাত্র দেড় লাখ মেট্রিক টন লবণ। ফলে এবার আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিবেচনায় উৎপাদন নিয়ে শংকা থাকায় সীমিত আকারে লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নিচ্ছে শিল্প মন্ত্রণালয়।

তবে আমদানির খবরে বিচলিত না হয়ে চাষীদের দ্রুত মাঠে নামার পরামর্শ বিসিকের লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের উপ মহাব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল ভুঁইয়া।

তিনি বলেন, খুব বেশি প্রয়োজন পড়লে সরকার চাহিদা মতো লবণ আমদানি করবে। এতে করে লবণের দাম পড়ে যাওয়ার কোন আশঙ্কা নেই।তবে দ্রুত উৎপাদন নিয়ে আশঙ্কা থাকায় নির্বাচনের আগে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না সরকার। কারণ লবণ নিয়ে কোন সিন্ডিকেট অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করলে তার সরাসরি প্রভাব পড়বে ভোটের বাক্সে। তাই সীমিত আকারে হোক বা যেভাবেই হোক লবণের ঘাটতি হতে দিবে না সরকার।

স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিকও বললেন, কোন সিন্ডিকেট যাতে সরবরাহ আটকে রেখে লবণের বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে সেজন্য বাজার নিয়ন্ত্রণ কৌশল হিসেবে আমদানির কথা ভাবছে সরকার। এতে চাষীদের স্বার্থ বিন্দু পরিমাণও ক্ষুন্ন হবেনা।

সারাদেশে একমাত্র লবণ উৎপাদন হয় দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা ও কক্সবাজার জেলায়। নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত লবণ চাষের মৌসুম ধরা হয়। গেলো অর্থবছরে প্রায় ৬৩ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ করেছিলো প্রায় ৪০ হাজার চাষী। বর্তমানে লবণের দাম রয়েছে ৫৫০ টাকা। লবণের বাজার ঠিক থাকায় এবার চাষের জমি এবং চাষীও বাড়তে পারে বলে আশা বিসিকের।

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

You cannot copy content of this page