Thursday, May 16, 2024

শালিক রেস্তোরাঁর মালিক নাছিরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

মোহাম্মদ আয়াছুল আলম  :

কক্সবাজারের কলাতলী এলাকার শালিক রেস্টুরেন্টের মালিক নাছির উদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে নারী কর্মচারীদের যৌন নিপীড়ন ও স্টাফ কোয়ার্টারে অস্ত্রধারীদের পাহারায় রেখে কর্মচারীদের নির্যাতনের অভিযোগে সদর থানায় পৃথক দুটি মামলার এজাহার দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) রাতে একজন নারী কর্মচারী ও একজন পুরুষ কর্মকচারী পৃথকভাবে মামলা দুটির এজাহার দায়ের করেছেন।

কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, একজন নারী ও একজন পুরুষ কর্মচারী পৃথকভাবে দুটি এজাহার দিয়েছেন। একই ঘটনা হওয়ায় একটি এজাহারের ভিত্তিতে তদন্ত চালানো হচ্ছে। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নির্যাতনের শিকার দুই কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শালিক রেস্টুরেন্টে ২১ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীকে নিয়োগ দিয়েছেন মালিক নাছির উদ্দিন বাচ্চু। সব নারীই বয়সে তরুণী। চাকরির শর্তে তাদের স্টাফ কোয়ার্টারে রাত্রি যাপন বাধ্যতামূলক করা হয়। আর কোয়ার্টারেই প্রতিনিয়ত যৌন নিপীড়নের পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতন চালান বাচ্চু।

মামলার এজাহারে তরুণী উল্লেখ করেছেন, গত ৬ মাস ধরে তিনি ওই রেস্টুরেন্টে কাজ করেন। যেখানে প্রতিনিয়ত যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

কক্সবাজার সদর থানায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঘটনার বর্ণনাও দিয়েছেন তিনি। বলেন, গত ১১ অক্টোবর ও ১২ অক্টোবর টানা নির্যাতনে শিকার হওয়ার পর ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। পুলিশের পরামর্শেই তিনি থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেছেন।

এজাহারে তরুণী বলেন, ১১ তারিখে অসুস্থতাজনিত কারণে আমি ছুটি নিয়ে স্টাফ কোয়ার্টারে চলে যাই। পরে ঔষুধ কেনার জন্য বের হলে রেস্টুরেন্টের কর্মচারী খালেক ও আবদুল্লাহর সাথে দেখা হয়। অসুস্থতার কথা জেনে তারা দুজন ফার্মেসিতে গিয়ে ওষুধ কেনেন। এর মধ্যে মালিক বাচ্চু তাদের ফোন করে রেস্টুরেন্টে নিয়ে মারধর করে। মারধর করতে করতে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় স্টাফ কোয়ার্টারে। যেখানেও চালানো হয় নির্যাতন। একই সঙ্গে যৌন নিপীড়ন শুরু করেন বাচ্চু। যার এক পর্যায়ে কৌশলে পালিয়ে যান আবদুল্লাহ। সশস্ত্র পাহারার কারণে তিনি এবং খালেক পালাতে ব্যর্থ হন। পরে পুলিশের সহায়তা উদ্ধার হন।

খালেক শুক্রবার রাত থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবদুল্লাহও একই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, শালিকের মালিক কৌশলগত কারণে উপজাতি তরুণীদের কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেন। এসব নারীদের স্টাফ কোয়ার্টার নামের বন্দিশালায় নিয়ে গিয়ে প্রায়শ চালানো হয় যৌন নিপীড়ন। একই সঙ্গে বিভিন্ন হোটেলে পাঠিয়ে যৌনবৃত্তি করতে চাপ প্রয়োগও করা হয়। মূলত তার এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করার জের ধরে তাকে এবং আবদুল্লাহকে মারধর করা হয়।

তিনি জানান, উপজাতী তরুণীকে প্রথমে নির্যাতন করা হয়েছে যৌনবৃত্তিতে বাধ্য করার জন্য। এতে অসুস্থ হয়ে সে ঔষুধ কিনতে গেলে তাদের সাথে দেখা হয়। এটা জেনে মালিক মনে করেছেন সে কৌশলে পালিয়ে যাচ্ছে। আর তাকে সহযোগিতা করছে তারা দুজন। মূলত এর জের ধরেই তাদের নির্যাতন করা হয়েছে। পরে জানা গেছে, সেই চাকমা তরুনী অজ্ঞাত কারনে এজাহার প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে কক্সবাজার হোটেল রেস্তোরাঁ শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা। এতে শালিকের কর্মচারীরও অংশ নেন।

মানববন্ধনে দ্রুত সময়ের বাচ্চুকে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানে জিন্মি থাকা শ্রমিকদের নিরাপত্তা প্রদানের দাবি জানানো হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত শালিক রেস্টুরেন্টের মালিক নাছির উদ্দিন বাচ্চুর ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। একাধিক ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর মেলেনি।

তবে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি নাইমুল হক চৌধুরী টুটুল।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় আহতদের হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। শরীরে আঘাতের যে চিহ্ন দেখেছি তা অমানবিক। আহত ও অন্যান্য কর্মচারীদের সাথে সমিতির পক্ষে আলাপও করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

You cannot copy content of this page