টিটিএন রিপোর্ট :
চট্টগ্রাম বিভাগে বর্তমানে ৮টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যার মধ্যে চট্টগ্রাম জেলাতেই অবস্থান তিনটির। তবে, দক্ষিণ চট্টগ্রামে নানা উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও পটিয়া থেকে শুরু করে সুদূর টেকনাফ পর্যন্ত সুবিশাল এলাকায় নেই কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়! ফলে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে পোহাতে নয় নানা ঝক্কি-ঝামেলার। এবার দক্ষিণ চট্টগ্রামের এই অভাব দূর হতে যাচ্ছে শিগগিরই। এখন শুধু অপেক্ষা সময়ের। কক্সবাজারেই হবে বিশ্ববিদ্যালয়টি—এমনটাই বলেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
বর্তমান সরকারের টানা ১০ বছরের উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কর্ণফুলী টানেলসহ শিল্প ও পর্যটন খাতের উন্নয়নে দ্রুত বদলে যাচ্ছে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রাম। চায়না ইকোনমিক জোন, এলএনজি টার্মিনাল, পারকি সৈকতে পর্যটন কমপ্লেক্স, কেইপিজেডে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন, বাঁশখালীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, কর্ণফুলী ও আনোয়ারার বিভিন্ন এলাকায় বড় গ্রুপের শিল্প বিনিয়োগে এই অঞ্চলটি হয়ে উঠছে জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।
কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে যোগাযোগ, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখ করার মতো অগ্রগতি হলেও শিক্ষা খাতে এখনও পিছিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রাম। দেশের অন্যতম প্রধান দুই বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অবস্থান উত্তর চট্টগ্রামে। কিন্তু দক্ষিণ চট্টগ্রামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেলার সাক্ষরতার হার ৮০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ৪১ ওয়ার্ডের একটি সিটি করপোরেশন, ১৫টি উপজেলা, ৩২টি থানা (উপজেলায় ১৬টি ও ১৬টি মেট্রোপলিটন থানা), ১৪টি পৌরসভা, ১৯০টি ইউনিয়ন, ৮৯০টি মৌজা, ১ হাজার ২৬৭টি গ্রাম ও ১৬টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত। এর জন্য তিনটি মাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
সূত্র বলছে, দক্ষিণ চট্টগ্রামে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আইন প্রণয়ণের কাজ। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ‘সবুজ সংকেতের’ পর বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের প্রস্তাবনা উঠবে জাতীয় সংসদে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি নির্মিত হবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মাঝামাঝি অবস্থানে। এক্ষেত্রে প্রধানত বিবেচনা করা হবে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ার সুবিধা-অসুবিধা। যেহেতু দক্ষিণের ৩ জেলার মধ্যে কক্সবাজারের অবস্থান মাঝামাঝি, সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা নির্ধারণ হতে পারে কক্সবাজার জেলাতেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘কক্সবাজার জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। জায়গার নির্ধারণের বিষয় এখন নয়। এ বিষয়ে আইন প্রণয়নের কাজ চলছে, আগে হবে আইন। প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার জেলার নামে বিশ্ববিদ্যালয় করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা আপাতত সেটাকে মাথায় রেখেই এগোচ্ছি।’
অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে আমাদের কাছে আসার পরে আমরা সেটা ক্যাবিনেটে পাঠাবো। ক্যাবিনেট থেকে পাস হয়ে আসলে সংসদে আসবে। তবে, বলাটা মুশকিল এই মেয়াদে সংসদে পাস হবে কিনা। তবে আমরা যদি ক্যাবিনেটে পাস করিয়ে ফেলতে পারি তাহলে পরবর্তী কার্যক্রমগুলো যথাসময়ের মধ্যেই হয়ে যাবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর জোর দেয়া হচ্ছে কিনা—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আমাদের যে প্রস্তাবনা দিয়েছে, সেখানে আসলে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই বলা হয়েছে। যেখানে সর্বসাধারণের ভর্তি সুযোগ থাকবে। তবে, মাথায় রাখা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি দক্ষিণ চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী এমন কোনো জায়গায় হয় যেন যেখানে পুরো ৩টি জেলা অর্থাৎ দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান এবং কক্সবাজার থেকে আমাদের শিক্ষার্থীরা আসতে পারে।’
পাহাড়ের পন্ডিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনর্স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি আসলে আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগ নয়। তাই এই মুহুর্তে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। সেটা হয়তো হতে পারে পরবর্তীতে। তবে, প্রাথমিকভাবে আসলে কক্সবাজারে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।’