Tuesday, May 14, 2024

একদিকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উপহার অন্যদিকে ভিসায় নিষেধাজ্ঞা

লেখক:শেখ জাহাঙ্গীর হাছান মানিক

নভেম্বর ২০, ১৬২০ সাল, ব্রিটেনের ১০২ জন অভিযাত্রী, যারা নিজেদেরকে তীর্থ যাত্রী হিসেবে ৩০ জনের নাবিক নিয়ে মে ফ্লাওয়ার জাহাজ যোগে ‘নতুন পৃথিবী’ যা আজকের আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস এ নোঙর করে উপনিবেশ স্থাপনের মাধ্যমে ‘দাপটে’ যুক্তরাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে। আবার সেই তারায় ৩৫১ বছর ৫ মাস ২৮ দিন পর, মে ১৮, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে ‘নোঙ্গর’ করে কূটনৈতিক সম্পর্কের আড়ালে।‌ সেই থেকে আজ অব্দি গনতন্ত্রের সবক শেখাতে শেখাতে আমারা দেশপ্রেম ভুলে আজ গনতন্ত্র প্রেমিক হয়ে গেলাম।

ইদানিং সংবাদ পত্র খুললেই চোখে পড়ে অমুক আমদানির বিপরীতে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য আটক। ঠিক একই ভাবে, গনতন্ত্রের সবকের আড়ালে আমেরিকা তাদের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। এখন প্রশ্ন হলো এজেন্ডায় যেখানে বুঝি না, বাস্তবায়ন কিভাবে বুঝবো। এজেন্ডা কি হতে পারে? শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা, খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায় আসীন করা। আসলে এই গুলো একটাও না। এখন ভাবছেন বুঝছি ইউনূস কে ক্ষমতায় বসানো! না, ইউনূস সাহেব হচ্ছে তাদের কাছে মিডিয়াকে প্রতিদিন চাঙ্গা রাখার খোরাক। দিন ব্যাপি অনুষ্ঠানে আয়োজক যেমনটি চাই দর্শক গণকে সারাদিন ধরে অনুষ্ঠানের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা, তেমনি ইউনুস সাহেব আমেরিকার কাছে ঐ রকম একটা উৎসবের উপাদান বা পুতুল। তাহলে আমেরিকা কি চাই? হা, আমেরিকা এখন ঐতিহ্যবাহী দেশে পরিনত হয়েছে। যার নাম আছে, ডাক আছে কিন্তু ভান্ডার শুন্য। তারা এখন টেক্স চাই যেমনটি বাংলাদেশ সরকার তার দেশের জনগণ থেকে টেক্স নেই, ঠিক তেমনি আমেরিকা বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে টেক্স নিতে চাই জিডিপির থেকে শতকরা হিসেবে।

ভাবুন তো, আপনার ভীষণ খুদা পেয়েছে কিন্তু খাবার নেই, আপনি নিশ্চয়ই বসে বসে অলৌকিক কিছু আশা করবেন না। আপনি যদি একা হোন তবে মুখ বুজে সহ্য করতেও পারেন তবে যদি সন্তান সন্ততি থাকে তবে প্রয়োজনে চুরি করবেন এটাই স্বাভাবিক নয় কি? আমেরিকার বিসাল খরচ মহাশূন্য থেকে মহাবিশ্ব পর্যন্ত। আসুন দেখি কি করছে আমেরিকা? কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড পিস সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত বৈশ্বিক মার্কিন সামরিক স্থাপনার তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৫৯ টি দেশে প্রায় ১,৭৩,০০০ সেনা মোতায়েন ছিল। ন্যাটো (উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা) এপ্রিল ৪, ১৯৪৯ সালে একটি আন্তর্জাতিক সামরিক জোট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার ৩১ টি সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে এটিতে। এই সংস্থার সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী হচ্ছে আমেরিকা। এবার বলুন তো তাদের এই অবস্থা আছে এখন! এই সাম্রাজ্য ধরে রাখার। বাঘের হুংকার ও শক্তি একসময় শূণ্য হয়ে যায়।

আপনাদের বাড়ির আসে পাশে একটু চোখ বন্ধ করে দেখলে দেখবেন আপনার এই জীবদ্দশায় কত পরিবর্তন হয়েছে। কত ঐতিহ্যবাহী পরিবার নিঃশেষ হয়ে গেছে। আবার একেবারেই নিঃশেষে থাকা অনেক পরিবার গুলো অনেকটাই অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এটাই বাস্তবতা। আপনি যখন দেখবেন আপনার বন্ধু মহলের বা আপনার নিকট আত্মীয় একজন হঠাৎ করে আপনার সাথে চলাফেরা করার সময় আপনার সমস্ত খরচ বহন করছে, আপনি নিশ্চিত থাকুন সে আপনার থেকে একদিন টাকা ধার চাইবে। এমন ভাবে চাইবে আপনি না করতে পারবেন না এবং লজ্জায় আপনি বাসায় গিয়ে সারাজীবনের সঞ্চয় বিক্রি করে আপনি তাকে টাকা ধার দিবেন এবং মনে রাখবেন ঐ টাই আপনার সাথে তার শেষ বন্ধুত্ব। টাকাও পাবেন না এবং আগের সেই বন্ধুত্বের যে বন্ধন সেটাও আর পাবেন না। আমেরিকারও হয়েছে একি দশা। ঐ তথাকথিত ভদ্র দানবীর বন্ধুর মতো। বাংলাদেশে আমেরিকার কোন সরকারি কর্মকর্তা অথবা রাজনীতিবিদ আসলেই দেখবেন শুধু দান আর দানই করে যাই।

ম্যাকিয়াভেলির মতে একজন শাসককে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, যা কিছু সাফল্য এনে দেয় তা ক্ষমতার কারণে। রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনের জন্য তিনি যে কোনো উপায় অবলম্বন করতে পারেন। তিনি বলেন, রাজনীতি হচ্ছে ক্ষমতার জন্য নিরন্তর লড়াই। সব রাজনীতিই ক্ষমতার রাজনীতি। জননেত্রী শেখ হাসিনাকেও ক্ষমতায় থাকার জন্য যে কোন উপায় অবলম্বন করতে হবে, লড়াই করতে হবে, এবং ভয় পেতে হবে, কারণ ম্যাকিয়াভেলির ভাষায়, “ভালোবাসার চেয়ে ভয় পাওয়া ভালো”।

 

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

You cannot copy content of this page