শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, ঈদগাঁও :
লাইলি মজনু, শিরি -ফরহাদ, সম্রাট শাহজাহান-মমতাজ কিংবা রোমিও – জুলিয়েট, সেলিম -আনার কলির, ত্রিস্তান-ইসলেদ, অরফিয়াস এবং ইউরিভাইস, নেপালয়ান-জোসেফাইন,মার্ক এন্টেনি-ক্লিওপার্টের প্রেমের অমর কাহিনি কম বেশি সবাই জানে। তাদের অমর প্রেমের আত্মকাহিনীর মতো আরো একটি ইতিহাস করলো কক্সবাজারে। মোঃ সায়মন তাসনোভা তাহরিন নোহার প্রেমের কাহিনি স্থানীয়রা ওয়াকিবহাল থাকলেও তাদের জীবনে কি ঘটেছে তা অজানা রয়ে গেছে । তাদের মাত্র ২ বছরের সম্পর্ক এতো এতো কঠিন হয়ে উঠে যা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। কিন্তু একজন অপরজনকে ছেড়ে যায়নি এক সেকেন্ডের জন্যও৷
কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের মোঃ সায়মনের সঙ্গে একই এলাকার মৌলভী নজিবুল ইসলামের অপ্রাপ্ত বয়সী মেয়ে তাসনোভা তাহরিন নোহার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের সম্পর্ককে বাস্তবে রূপ নিতে দু’জনই পালিয়ে যায় ঢাকা কামরাঙ্গিচরে। সেখানে ভাড়া বাসা নিয়ে মৌলানার মাধ্যমে আকদ সম্পন্ন করে ৮ মাস সুখের সংসার শুরু করে তারা।তৎসময়ে ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নোহা ভবিষ্যত চিন্তায় সায়মুনকে ছেড়ে যায়নি।
কিন্তু তাদের এ বিয়ে মেনে নেয়নি নোহার পিতা মৌলভী নজিবুল ইসলাম। নিজের মেয়েকে অপহরণ করছে অভিযোগ এনে সায়মুনসহ তার মা ভাইদের আসামী করে ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা করে। মামলার সুত্র ধরে ভিকটিম উদ্ধারে মাঠে নামে পুলিশ। প্রথমে আটক করা হয় সায়মুনের মামা রাশেদুল ইসলামকে, দীর্ঘদিন কারাভোগের পর জামিন পান মামা। পরে ডিবি পুলিশের প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় এজাহার নামীয় প্রধান আসামী মোঃ সায়মনকে আটক এবং ভিকটিম তাসনোভা তাহরিন নোহাকে উদ্ধার করে। পরে তাদের আদালতে সোপর্দ করলে সায়মুনকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেওয়া হয়৷ একই সাথে ভিকটিমের ২২ ধারার জবানবন্দি গ্রহণ করে আদালত। আদালতে জবানবন্দি প্রদান করার সময় নোহা অপ্রাপ্ত মেয়ে ছিল।
নোহা অভিযোগ করেন, তৎকালীন কক্সবাজার ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তার মানসিক নিপীড়ন ও ভয়ভীতিতে আদালতে পিতার পক্ষে ২২ ধারার জবানবন্দি প্রদান করেন। সে থেকে মামলাটি বিজ্ঞ আদালতে চলমান ছিল। বাদী -আসামী নিয়মিত মামলা তদারকিও করে আসছিল। এরই মধ্যে তাসনোভা তাহরিন নোহার প্রাপ্ত বয়স হলে নিকাহনামা রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে ইসলামিয়া শরীয়া মোতাবেক ২০ লক্ষ টাকার কাবিন ও আনুষঙ্গিক জিনিস পত্র দিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
সু দীর্ঘ ৭ বছর সংসারে তাদের ১ মেয়ে ওয়াফা (৫) ও ওয়াসিফ দেড় বছর বয়সী এক ছেলে সন্তান রয়েছে । সায়মুনের আত্মীয় স্বজনরা জানান, তাদের উদ্ধারের সময় প্রথম কন্যা সন্তান ওয়াফার বয়স হয়েছিল ৬ মাস, ঐ সময় আদালতের নির্দেশে নবজাতক শিশুটি নানা নজিবুল ইসলামের হেফাজতে রাখতে বলেন। কৌশলী ও সুচতুর মৌলভী নজিবুল ইসলাম তার নাতি ওয়াফাকে নরসিংদির এক নারীর কাছে দত্তক দিয়ে দেন। পরে বিষয়টি জানতে পেরে নোহা দারস্থ হন আদালতে। আদালতের মাধ্যমে বাচ্চা উদ্ধার করে মায়ের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন আদালত।
সূত্রে জানা যায়, তাসনোভা তাহরিন নোহা মোঃ সায়মুমের প্রেমের সম্পর্ক স্থায়ীত্ব করতে বিয়ে করে দু’জনই সুখের সংসার করে আসছিল। মাঝপথে এসে ঘটে বিপত্তি। নোহার বাবার দায়ের করা অপহরণ ও ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় স্বামী মোঃ সায়মুনের। সে এখন কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছে। গত ১১ জুলাই কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১ এ এ রায় প্রদান করেন বিজ্ঞ আদালতের বিচারক। ঐ সময় মামলার অপরাপর আসামীদের খালাসও দেওয়া হয়। এদিকে মামলার রায়ে মোঃ সায়মুনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ায় সর্বত্রে অসন্তোষ বিরাজ করছে। স্থানীয় আবছার, শাহাজাহান, সাদেক, শারমিন আক্তারসহ শত শত নারী পুরুষ জানান, সায়মুন অত্যান্ত ভালো ছেলে। তারা দুইজন ভালোবেসে পালিয়ে গেছিল।
পরবর্তীতে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক বিয়ে করে সংসার করে আসছে। তাদের দাম্পত্য জীবনে দুইটি সন্তান রয়েছে। দুই সন্তান নিয়ে চরম বিপাকে পড়ছে সায়মুনের স্ত্রী তাসনোভা তাহরিন নোহা। দুই অবুঝ সন্তান এখনো জানে না তাদের বাবা কোথায়। প্রিয়তমা স্ত্রী নোহা সবকিছু হারিয়ে এখন বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে। মানবিক বিবেচনায় তার সাজা মওকুফ করে দুই সন্তানের আদর স্নেহ, প্রিয়তমা স্ত্রীর ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে সরকারের উচ্চ মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।
সায়মুনের মা জানান, তারা ন্যায় বিচার পাননি,তাই উচ্চ আদালতে লড়বেন। সায়মুনের ভাই আহমেদ সিদ্দিকী জায়মন বলেন, তার ভাই মজলুম, ৭ বছর ধরে নির্যাতনের শিকার। প্রিয় মানুষটাকে আপন করে নিয়েও শান্তিতে নেই। তার দুইটি সন্তানের দিকে থাকালে কান্না চলে আসে। অবুঝ দুই শিশু পিতার আদর, স্নেহ মায়া -মমতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মানবিক বিবেচনা করে তার ভাইয়ের মুক্তি চান ছোট ভাই জায়মন৷
স্ত্রী তাসনোভা তাহরিন নোহা বলেন, ভালোবেসে বিয়ে করায় তার বাবা সেটি মেনে নেয়নি৷ বাবার সম্মানের দিকে চেয়ে বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলাম।সে সময় মনে করছিলাম সবকিছু মেনে নিয়ে সামাজিক ভাবে বিয়ে দিবে, স্বামীকে মেনে নিয়ে মেয়ের জামাইর মর্যাদা দিবে। কিন্ত সেটি না করে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে আসছে বাবা মৌলভী নজিবুল ইসলাম। নোহা তার স্বামী মোঃ সায়মুনের মুক্তি চায়।