টিটিএন ডেস্ক :
বর্তমানে ইভটিজিং একটি সমাজিক ব্যাধি।
কখনো কখনো ইভটিজিংয়ে শিকার হয়ে লজ্জা-অপমানে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। তাই এই ব্যাধি প্রতিরোধে প্রতি বছরের ১৩ জুন ইভটিজিং প্রতিরোধ দিবস পালন করা হয় ।
মূলত নারীরা বেশিরভাগ সময়ে ইভটিজিংয়ের শিকার হন। তাই নারীর সুরক্ষা নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৩ জুনকে ইভটিজিং প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে প্রতি বছর দিবসটি জাতীয়ভাবে পালিত হয়ে আসছে।
নারীদের প্রতিনিয়ত রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রেও ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হয়। ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়া এসব নারীর অনেক মেয়ে ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে, মানসিক অবসাদে ভোগে। আবার কেউ কেউ বেছে নেয় আত্মহননের পথ।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত উত্ত্যক্তের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন চারজন নারী। এ সময় উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় দুজনকে প্রাণ দিতে হয়েছে। ৫৪ জন নারী, তরুণী ও কিশোরী উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন। আর উত্ত্যক্তকারীর হাতে আহত হয়েছেন ৫০ জন।
সমাজে ইভটিজিং বন্ধ না হওয়ার মূল কারণ হিসেবে গবেষকরা মনে করেন, ইভটিজাররা অপরাধ করেও বারবার পার পেয়ে যাওয়ার কারণে আবারও ইভটিজিংয়ে জড়িয়ে পড়ে। এ জন্য আমাদের সামাজিক অব্যবস্থাও অনেকাংশে দায়ী।
এই ব্যাধিকে সমাজ থেকে প্রতিহত করতে সুশীল পারিবারিক শিক্ষার ওপরই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি নৈতিকতা বোধের চর্চাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া আইনের কঠোর প্রয়োগ ও সর্বস্তরে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিই এই ব্যাধি থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইভটিজিং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজন্য তণ্ডবিধিতে অপরাধীদে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। চলুর জেনে নিই আইন কী বলছে?
১। দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ২৯৪ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি প্রকাশ্যে অশ্লীল কার্য করে বা অশ্লীল শব্দ উচ্চারণ করে তবে তার ৩ মাস কারাদণ্ড অথবা আর্থিক জরিমানা হতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে কেউ উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।
২। একই সালের দণ্ডবিধি আইনের ৩৫৪ ধারায় বলা হয়েছে, নারীর শালীনতা নষ্ট করার উদ্দেশ্য বা সে চেষ্টায় বলপ্রয়োগ করতে চাইলে অপরাধী ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
৩। একই সালের দণ্ডবিধি আইনের ৫০৯ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি নারীকে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে অশ্লীল কথা বলে কিংবা অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে তবে সে ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
৪। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশে ২টি আইন রয়েছে। এর ৭৫ ধারায় বলা হয়েছে, সমাজে অশালীন বা উচ্ছৃঙ্খল আচরণের শাস্তি হিসেবে ৩ মাস মেয়াদ পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে এবং ৭৬ ধারায় বলা হয়েছে, নারীকে উত্যক্ত কিংবা অপমান করে এমন কাজ করলে তিনি ১ বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদণ্ড অথবা ২ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
৫। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৯ ধারা অনুযায়ী, কোনো নারী বা শিশুর শালীনতা নষ্ট করতে চাইলে অপরাধীর ৫ থেকে ১০ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হতে পারেন। আর যদি কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করা হয় তবে সে অপরাধী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ধর্ষণ-পরবর্তী নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটলে যাবজ্জীবন সশ্রম করাদণ্ডের সঙ্গে অতিরিক্ত অন্যূন ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ডেরও বিধান রয়েছে।