Thursday, May 16, 2024

মাহাবুবই হচ্ছেন কক্সবাজারের পৌর পিতা!

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সোমবার ( ১২ জুন ) কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন। সুষ্ঠু, শান্তির্পূণ পরিবেশ নির্বাচন গ্রহনের সকল প্রস্তুুতি সম্পন্ন করেছেন নির্বাচন কমিশন। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন সহ মোট ৭৭ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনা রয়েছে কে হচ্ছেন কক্সবাজার পৌরসভার পর্ববর্তী মেয়র। সাধারন ভোটার ও বিশ্লেষকদের মতে নানা কারনেই মেয়র হওয়ার দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী।

নির্বাচন কমিশন কক্সবাজার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ সোমবার (১২ জুন)। এদিন সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে। ইভিএ এবার ভোট প্রদান করবে ভোটার ৯৪ হাজার ৮০২ জন ভোটার। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৯ হাজার ৮৭৯ জন ও নারী ভোটার ৪৪ হাজার ৯২৩ জন। নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন পাঁচ জন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৬ জন ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৫৬জন।

সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ১২টি ওয়ার্ডে ৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ দায়িত্বে থাকবে ১৫ ম্যাজিস্ট্রেট, ৭ প্লাটুন বিজিবি, ১২টি র‌্যাব টিম ও ৭৯০ জন পুলিশ।

৪৩টি কেন্দ্রে ২৪৫টি কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্র ও কক্ষ সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকবে।

ভোটারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, মেয়র পদে এবারের নির্বাচনের ৫ প্রার্থী নাম থাকলেও মাঠের লড়াইয়ে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী ও আওয়ামী লীগ থেকে বৃহিষ্কৃত নাগরিক কমিটি মনোনীত প্রার্থী মাশেদুল হক রাশেদ কে।

সূত্র জানায়, শুরু থেকে মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বিপাকে ছিলো আওয়ামী লীগ। বিদ্রোহী প্রার্থীর পারিবারিক, রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে প্রকাশ্যে তাঁর পক্ষে অবস্থান নেন অনেক নেতা-কর্মী। ফলে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে উঠে ক্ষমতাসিন দলের নেতা-কর্মীরা। এরপরে কৌশলগত অবস্থান পরিবর্তন করে মাঠে নামে আওয়ামীলীগ সহ অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং আওয়ামীলীগের প্রার্থীর নিজের সমর্থিত নানা পেশাজীবীরা।

ওর্য়াকাস পার্টির কক্সবাজার জেলা সাধারন সম্পাদক মাঈন উদ্দিন হাসান শাহেদ বলেন, শুরুর দিকে আওয়ামী লীগ র্প্রাথী একটু বেকায়দায় থাকলেও আমাদের ১৪ দলীয় নেতা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ৫ জুন মাহাবুবুল আলম হানিফ কক্সবাজার সফরের পরই দৃশ্যপট প্লাটাতে শুরু করে। ১৪ দল একযোগ হয়ে মাঠে কাজ শুরু করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে পিছিয়ে থেকে অগোছালো প্রচারণা দিয়ে শুরু করলেও শেষ মূর্হুতে দলীয় লোকজন, ব্যবসায়ী, হিন্দু, বৌদ্ধ সহ সংখ্যালঘু সম্প্রাদয় সাংবাদিক, আইনজীবি ও নানা পেশাজীবি এবং সামাজিক সংগঠন মাঠে নামায় দ্রুতই নৌকার গণজোয়ার শুরু হয়।

এবিষয়ে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা আইনজীবি রনজিত দাশ বলেন, সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষের জন্য মাহাবুবুর রহমান নিরাপদ। একারণে আমরা হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রাদয়ের লোকজন এক্যবদ্ধভাবে নৌকার জয়ের জন্য কাজ করেছি। আশা করছি সংখ্যালঘু সম্প্রাদয়ে ৮০ ভাগ ভোট মাহাবু পাবে।

অপরদিকে বাবার জনপ্রিয়তা এবং ৫ ভাইবোনের আওয়ামীলীগের ক্ষমতা ও টাকার প্রভাবে নির্বাচণের শুরুর দিকে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন নাগরিক কমিটির ব্যানারে নারিকেল গাছ প্রতীকের আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ। তবে দল থেকে সব ভাই বোনদের বহিষ্কার ও পদত্যাগ এবং জেলার প্রবীণ নেতাদের নিয়ে কটুক্তি ও কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বিষেদাগার সহ নানা দাম্ভিকতা পূর্ণ বক্তব্যের কারণে শেষ মুহুর্তে এসে পিছিয়ে পড়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী।

এ বিষয়ে কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক মুজিবুল ইসলাম বলেন, রাশেদের পরিবারের লোকজন দাম্ভিক। তাদের আচরণের কারণে কক্সবাজার পৌরসভার স্বনামধন্য পরিবারগুলো তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। একারণে শুরুতে এগিয়ে থাকলে চুড়ান্ত মুহুর্তে রাশেদ পিছিয়ে পড়েছে।

এদিকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী পক্ষে রয়েছে কক্সবাজার পৌরসভার সকল ব্যবসায়ীরা জানিয়ে কক্সবাজার দোকান মালিক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, মাহাবুবের পক্ষে ব্যবসায়ীরা ১২ ওয়ার্ডে ১২ টি প্রচারণা চালিয়েছে। মাহাবুব ব্যবসায়ীদের জন্য নিরাপদ। একারণে আমরা ব্যবসায়ীরা আমাদের নিরাপত্তার স্বার্থে নৌকার সাথে রয়েছি। আশা করছি নৌকা বিপুল ভোটে জয়ী হবে। এছাড়া নারিকেল মার্কার সমর্থক ও প্রার্থীরা সাতকানিয়া বাসীকে হেয় করে নানা কথাবার্তা বলায় তাঁরা নৌকার জন্য মাঠে নেমেছেন।

একই সঙ্গে নৌকার অবস্থান আরও সুবিধা জনক হওয়ার কারণ হিসেবে কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়াম্যান আবছার বলেন,বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বোচনী প্রচারণার শুরুতে স্থানীয়-বহিরাগত একটি ইসু মাঠে এনেছেন। পৌরসভার ৯০ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে শহরে এসেছেন। এখানে স্থায়ী বলতে কিছু সংখ্যক রাখাইন ছিল। এতে ভোটারদের মধ্যে প্রভাব পড়েছে। এছাড়া নারিকেলের প্রার্থীর পক্ষ থেকে জেলার প্রথিতযশা কয়েকজন ব্যক্তি যারা ইতিমধ্যে মারা গেছেন তাদের নিয়ে বিরূপ আচরণ করা হয়েছে। এটার প্রভাবও পড়েছে।

পৌর নির্বাচনের অংশ নেওয়ার কারণে রাশেদ হারিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ, তার ছোট ভাই সোহেলকে বহিষ্কার করা হয়েছে জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পদক পদ থেকে, অপর ভাই কায়সারুল হক জুয়েলকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সচিব ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার এবং তার একমাত্র বোন তাহমিন্ াচৌধুরী জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এত কিছুর পরে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী রাশেদ।

বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে বহিষ্কৃত কক্সবাজার শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, নারিকেল গাছের প্রার্থী আমাদের এলাকার । এলাকার স্বার্থে আমরা দল থেকে বহিষ্কার হয়েও রাশেদের পক্ষে রয়েছি।
.
তিনি আরো বলেন, কক্সবাজার পৌরসভায় রাশেদকে মানুষ কখনও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মনে করেন না। দলের নেতারা তাকেই মেয়র করতে মাঠে রয়েছেন। একই সঙ্গে প্রার্থী পিতা ও ভাই সকলেই জনপ্রিয় মানুষ। ১২ জুন ভোটে নারকেল গাছ প্রতীকের বিজয় হবে।

মাসেদুল হক রাশেদ জানান, সার্বিক পরিস্থিতিতে আওয়ামীলীগ ছাড়াও অন্যান্য দলের নেতা-কর্মী, সাধারণ ভোটাররা তাকে ভোট দিতে আগ্রহী। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু থাকলে তার বিজয় হবে।

মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী জানান, জনগন জানে বুঝে কার কাছে তারা নিরাপদ। আমাকে নিরাপদ মনে করেই জনগন এবার আমার পাশে রয়েছে। সাধারণ ভোটাররা নিরাপদ থাকতে, উন্নয়নের ধারাবাহিতা রক্ষায় নৌকার পক্ষে রায় প্রদানে সম্মত রয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটানিং কর্মকর্তা এসএম শাহাদাত হোসেন জানান, ‘অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি শেষ করে আমরা প্রতিটি কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠিয়েছি। যেহেতু ইভিএমে ভোটগ্রহণ চলবে তাই প্রতিটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারদের বলা আছে নির্বাচন শেষ হলে কেন্দ্রেই যেন ফলাফল প্রকাশ করা হয়। বিগত দিনেও কক্সবাজারে ইভিএমে সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন হয়েছে এবারও একটি সুষ্ঠু, সুন্দর এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারবো বলে মনে করি।’

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

You cannot copy content of this page