তানভীর শিপু
৮ দিন পেরিয়ে গেলেও রহস্যের জট খুলেনি কক্সবাজার শহরের আলোচিত গৃহবধূ রিনা আক্তার হত্যাকান্ডের। গেলো মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণ রুমালিয়ার ছড়ার চেয়ারম্যান ঘাটার নিজ বাড়ি থেকে জবাই করা মরদেহ উদ্ধার করা হয় রিনা আক্তারের। এ হত্যাকান্ড নিয়ে অনুসন্ধান করেছে টিটিএন।
ঘটনার অনুসন্ধানে নেমে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছিলো টিটিএন। তবে সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সেসব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি এখন অব্দি। বরং টিটিএনের অনুসন্ধান করা সেসব প্রশ্নের উত্তরই খু্জছেন প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে সপ্তাহ পর রিনা আক্তারের প্রাথমিক ময়না তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে তদন্ত কর্মকর্তা। প্রতিবেদনে উঠে আসে ভয়ংকর এক হত্যার তথ্য। যেখানে হত্যাকান্ডের ধরন দেখেই বুঝা যায় এটি ছিলো একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ময়না তদন্ত রিপোর্ট বলছে, গলায় দেড় ইঞ্চি গভীরে ১১ ইঞ্চি লম্বা কাটা ক্ষত ছিলো। অর্থাৎ গরুর মতো জবাই করা হয় রিনা আক্তারকে। ডাকাতি বা স্বর্ণলুটের ইচ্ছে থাকলে মৃত্যু নিশ্চিত করতেই কেন এমনভাবে জবাই করা হয়েছে রিনা আক্তারকে। হত্যার এই ধরন দেখে তদন্ত সংশ্লিষ্টরাও মনে করছেন এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।
এখন প্রশ্ন হলো কে বা কারা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রিনা আক্তারের এক প্রতিবেশী জানান, ইতিপূর্বে তাদের সাথে কারো শত্রুতা ছিলো না। মাঝে মাঝে রিনা আক্তার ও তার স্বামী আবু নাসেরের মধ্যে প্রায় সময় কথা-কাটাকাটি হতো যা কখনও কখনও হাতাহাতিতে রুপ নিতো।
পারিবারিক সূত্র বলছে, হত্যাকান্ডের দিন বিকেলে স্বামী আবু নাসের ইফতার দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। প্রতিদিন ইফতার করলেও সেদিন আর ইফতার করতে আসেনি আবু নাসের। হত্যাকান্ডের পর স্বামী আবু নাসের অনেকটা স্বাভাবিক ছিলেন। সেইসাথে বাসার ২য় তলার পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া রোহিঙ্গা নারী রুবি আক্তার ও তার স্বামী এতো বড়ো হত্যাকান্ড ঘটার পরও ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল এবং ৮ হাজার টাকা ভাড়ার এ ফ্ল্যাটটি রোহিঙ্গা রুবি আক্তারকে দেয়া হয়েছিলো অর্ধেক টাকায়। এর আগে এই রুবি আক্তার স্বামী নিয়ে থাকতো আবু নাসেরের ঝুপড়ি ভাড়া বাসায়। কেন তাকে একমাস আগে নিজ বিল্ডিংয়ের পাশাপাশি ফ্ল্যাটে নাম মাত্র মূল্যে ভাড়ায় নিয়ে আসেন নিহত রিনা আক্তারের স্বামী আবু নাসের, এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকেরই।
এছাড়াও হত্যাকান্ডে নিজের বাসার দা ব্যবহার সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে। এই দা’র ব্যবহারই ইঙ্গিত দিচ্ছে পরিচিত কেউই এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। এছাড়াও ডাকাতি বা লুটের ঘটনা হলেও দরজা ভাঙ্গার কোনো চিহ্ন পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে এ হত্যার রহস্য জট নিয়ে রহস্যজনক উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে জনমনে।
সবমিলিয়ে ধারণা করা হচ্ছে নিকটস্থ কেউ ঠান্ডা মাথায় এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে । যদিওবা নিহতের স্বামী আবু নাসের দাবী করেছেন টাকা ও স্বর্ণ লুটের জন্য এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। তবে আলমারি খোলা থাকলেও টাকা ও স্বর্ণ লুটের সন্ধান পায়নি পুলিশ। এমনকি হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় টাকা ও স্বর্ণ লুটের কথা উল্লেখও করা হয়নি বলে জানান মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা মিল্টন দে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিল্টন দে আরও জানান, শুধু তিনি নন জেলা পুলিশ এই হত্যাকান্ড নিয়ে কাজ করছে।
অনুসন্ধান বলছে, এ ঘটনায় সন্দেহের তীর নিহতের স্বামী আবু নাসেরের দিকে। সামগ্রিক বিষয়ে আবু নাসেরের বক্তব্যের জন্য নানানভাবে চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তবে তার বড় সন্তান ফয়সাল ওসমানী মুঠোফোনে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নয় তিনিই একমাত্র খুঁজে বের করতে পারবেন তার মায়ের খুনিকে।
রিনা আক্তার হত্যা মামলার বাদী হলেন তার ছেলে ফয়সাল ওসমানী। টিটিএনকে মুঠোফোনে মামলার বাদী জানান, তিনিও চায় তার মায়ের হত্যার বিচার হোক।
একটি সূত্র বলছে প্রথমে এই হত্যা মামলায় নিহতের স্বামী বাদী হতে চেয়েছিলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে পুলিশ স্বামীকে নয় সন্তানকে বাদী করে মামলার এজাহার নেয়। নিহতের সন্তান ও মামলার বাদী ফয়সাল ওসমানীর কাছে জানতে চাওয়া হয় এ হত্যার ঘটনায় তার বাবাকে সন্দেহ করার বিষয়ে। তিনি কাউকে সন্দেহ করছেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে ওসমানী জানান, অনেক সময় মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ হয়, আপাতত এ বিষয়ে কথা বলতে চান না তিনি।
তবে কি রিনা আক্তারের সন্তান এ বিষয়ে মুখ না খুলে মা হারানোর পর বাবার আশ্রয় হারাতে চান না? না কি অন্যকিছু রয়েছে এ ঘটনায়? অন্যদিকে এভাবে মুখ না খুললে প্রকৃত হত্যাকারী আড়ালেই চলে যাবে? এমন প্রশ্ন জনমনে।