আব্দুর রশিদ মানিক:
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় গত ১৮ ঘণ্টায় চার শিশুসহ আটজনকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণকারীরা অপহৃতদের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে অপহরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় টেকনাফের পাহাড়ি এলাকার লোকজন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
বুধবার (২৭ মার্চ) সকালে টেকনাফের হোয়াইক্যং রৈক্ষ্যং বাদিবন্যা পাহাড়ি এলাকায় জঙ্গল কাটতে ও গরু চরাতে গিয়ে ছয়জনকে অপহরণ করা হয় এবং মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একই ইউনিয়নের কম্বনিয়া পাহাড়ি এলাকা থেকে দুই রাখালকে অপহরণ করা হয়।
অপহৃতরা হলেন, টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের করাচি পাড়া এলাকার বেলালের দুই ছেলে জুনাইদ (১২) ও মোহাম্মদ নুর (১০), একই এলাকার লেদুর ছেলে শাকিল (১৫), শহর আলীর ছেলে ফরিদ আলম (৩৫), নুরুল ইসলামের ছেলে আকতার (২৫), নাজির হোসেনেন ছেলে ইসমাইল (২৪)।
টেকনাফের হোয়াইক্যং রৈক্ষ্যং বাদিবন্যা পাহাড়ি এলাকায় জঙ্গল কাটতে ও গরু চরাতে গিয়ে ওই ছয় কৃষককে অপহরণ করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহাজালাল।
তিনি বলেন, “আমি এলাকার লোকজনের কাছ থেকে অপহরণের কথা শুনেছি। কীভাবে তাদের অপহরণ করা হয়েছে আমরা বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি।”
অপহৃত শাকিলের বাবা লেদু মিয়া বলেন, প্রতিদিনের মতো আমার ছেলে শাকিল পাহাড়ি এলাকায় গরু চরাতে যায়। দুপুরে অপহরণকারী আমাকে ফোন করে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ না দিলে অপহরণকারীরা আমার ছেলেকে হত্যার হুমকি দেয়। তাদের সাথে আমার ভাই ফরিদ আলমও আছে। আমি কিভাবে তাদের টাকা দিব! যেহেতু আমি একজন দিনমজুর এবং আমার কোনো সঞ্চয় নেই। আমার ছেলে ও ভাইকে জীবিত উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, বুধবারও আমার এলাকা থেকে ছয়জনকে ধরে নিয়ে গেছে। অপহরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর আগে আমাদের এলাকা থেকে দুজন রাখালকেও অপহরণ করা হয়েছিল এবং তাদের এখনও উদ্ধার করতে পারেনি।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কম্বোনিয়া পাহাড়ি এলাকায় গরু চরাতে গিয়ে হোয়াইক্যংয়ের ঘোনা এলাকার ফিরুজের ছেলে আলী আহমেদ (৩২) ও নূর মোহাম্মদ (১৭) অপহরণ হয়।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গণি জানান, অপহরণের এসব ঘটনায় তাদের কাছে কোনো অভিযোগ নেই। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আমরা হোয়াইকংয়ে এসে তদন্ত শুরু করেছি।
গত সোমবার পর্যন্ত টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পানখালী এলাকায় ২১ মার্চ ফসলি ক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে অপহরণ হওয়া পাঁচ কৃষক প্রায় ৬ লাখ ২২ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে মুক্তি পেয়েছেন।
এদিকে সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, গত এক বছরে টেকনাফের পাহাড়ি এলাকা থেকে ৫২ জন স্থানীয় বাসিন্দা ও ৫১ জন রোহিঙ্গাসহ ১০৩ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তির জন্য তাদের বেশিরভাগকেই মুক্তিপণ দিতে হয়েছে।