নিজস্ব প্রতিবেদক :
কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র উপকূল দিয়ে মিয়ানমারে অবাধে পাচার হচ্ছে জ্বালানি তেল ও খাদ্য সামগ্রী। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জ্বালানি তেল অকটেন, ডিজেল, সয়াবিন তেল পাচার বেড়েছে। এছাড়া বাদ যাচ্ছে না পিঁয়াজ, রসুন, চাল, ডাল, ডিম, পান ও মরিচ সহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে মেরিন ড্রাইভ ও নাফনদী সংলগ্ন অন্তত ২০টি পয়েন্ট। মূল পয়েন্ট গুলো হচ্ছে, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বরইতলী, কেরুণতলী, মৌলভী পাড়া, রাজার ছড়া, হাবিব ছড়া, মিঠাপানির ছড়া, তুলাতুলি, মহেশখালীয়া পাড়া, পৌরসভার জালিয়াপাড়া, কায়ুকখালী খাল, নাইট্যংপাড়া, সাবরাং ইউনিয়নের মুন্ডার ডেইল, কচুবনিয়া, কাটাবনিয়া, শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিম পাড়া ঘাট, দক্ষিণ পাড়া ঘাট, মিস্ত্রি পাড়া ঘাট। উল্লেখিত ঘাট গুলো থেকে চোরাপথে অবৈধভাবে পণ্য পাচারের সহযোগিতায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে দালাল চক্র।
নিত্যপণ্য পাচার বেড়ে যাওয়ায় অনুসন্ধানে নামে টিটিএন। টিটিএনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ২৭ দালালের নাম। তাদের একজন হলো বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর ওরফে দালাল গফুর। সে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমের ঘাট থেকে মিয়ানমারে খাদ্য ও জ্বালানি তেল পাচারে জড়িত।
স্থানীয় আব্দুর রহিম (ছদ্মনাম) বলেন, সে দীর্ঘদিন ধরে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, এছাড়াও মাদক ও চোরাচালান ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। তার রয়েছে দশ সদস্যের একটি ঘাট কন্ট্রোল গ্যাং। ওই গ্যাং ম্যানেজ করে শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিম ঘাটে মাদকের বড় চালান খালাস হয় এবং মায়ানমারে জ্বালানি তেল ও খাদ্য পাচার হয়। দালাল গফুরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে এ দ্বীপে মাদক ও চোরাচালান কর্মকাণ্ড কমবে।
গ্যাং এর সদস্যরা হলেন, গফুরের ছেলে ফারুক, মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে হামিদ, মকবুল মাঝির ছেলে হাফিজ উল্লাহ ও জাহেদ উল্লাহ, নুরুল আমিন মেম্বারের ছেলে হেলাল, নুরুল আমিনের ছেলে এনায়েত, জয়নাল, হুন্ডি হেলাল, ডাংগর পাড়ার আবদুল আমিন, জহির আহমদ প্রকাশ ঝামেলা, ডাংগর পাড়ার মৃত সৈয়দ আহমদের ছেলে আবদুল করিম, মৃত্যু কালা মিয়ার ছেলে শুক্কুর প্রকাশ সোর্স, মাঝের পাড়ার মতলব এর দুই ছেলে নুরুল আলম, রাজুর ছেলে করিম উল্লাহ হিরু, মোক্তার আহমেদ এর ছেলে নুর মোহাম্মদ প্রকাশ মধু, মীর কাশেম, ফয়েজ উল্লাহ ও আবদুল্লাহ।
শাহপরীর দ্বীপের অভিযুক্ত প্রধান গফুর প্রকাশ দালাল গফুরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়গুলো অস্বীকার করেন।
অনুসন্ধানে উঠে আসে মিয়ানমারে পণ্য পাচারের আরো একটি সিন্ডিকেট। যে সিন্ডিকেট টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মহেশখালীয়া পাড়া, তুলাতুলী, দরগাহ ছাড়া, হাবিব ছড়া ঘাট দিয়ে পাচার কাজ চাকায়। ওই সিন্ডিকেটে রয়েছে মৃত আবদুল হাসেম এর দুই ছেলে মাহমুদুল হক ও আজিজুল হক আরজু, বশির আহমদের দুই ছেলে আনোয়ার, বোটের মাঝি ইমান হোছেন, আহম্মদ হোছেনের ছেলে আবছার, মৃত আশুজ্জা এর দুই ছেলে নুরুল ইসলাম, মোঃ ইসলাম ও নুরুল আজিম এর ছেলে মোঃ মুফিজ।
মহেশখালীয়া পাড়া সিন্ডিকেটের প্রধান মাহমুদুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘পূর্বে এই অপরাধ কর্মকাণ্ডের সাথে ছিলাম, এখন নেই।’ তার ভাই আজিজুল হক আরজুর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ফোন কেটে বন্ধ করে দেওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
চোরাকারবারীরা হাতে অবৈধ অস্ত্র ও দা কিরিচ নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন মুদির দোকান ও তেলের পেট্রোল পাম্প হতে ডাম্পার, নোহা, মাইক্রো, সিএনজি, অটোরিকশাযোগে খাদ্যপণ্য ও মালামাল বহন করে অবৈধ অস্ত্রের পাহারায় তাদের গন্তব্যে নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে তাদের নিজস্ব ট্রলারযোগে মিয়ানমারে পাচার করেন বলে জানান স্থানীয়রা।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া)
মোঃ আবু সালাম চৌধুরী বলেন, যে সমস্ত পাচারকারীরা আছে তাদেরকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যখনই সংবাদ পাচ্ছি তখনই তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।