আশরাফুল হাসান রিশাদ:
ভোরের আলো ফুটতেই শুরু যাপিত জীবনের ব্যস্ততা। এ দুনিয়াকে এগিয়ে নিতে পুরুষের সাথে সাথে সাত সকালে ঘর ছাড়ে শতকোটি নারী।
সেই নারীদেরই প্রতিনিধি শাহনারা বেগম। গেলো আট বছর একাই টানছেন সংসারের হাল। সাত মাস আগে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকা স্বামীকে হারিয়ে তিন সন্তানের এ জননী-দিনমজুরের কাজ নেন নাজিরারটেকের শুটকি মহালে। সকাল থেকে সন্ধ্যা কাজ করে কোনোদিন হাতে পান ২০০ কোনোদিন ৩০০ টাকা। একই পরিশ্রমে তাঁর পুরুষ সহকর্মী পান পাঁচ থেকে ছয়শো টাকা।
তিনি বলেন, সাত মাস আগে আমার স্বামী মারা গেছে। আমার আর কিছুই করার নেই। সারাদিন শুটকি মহালে কাজ করি। কিন্তু টাকাতো খুবই কম। সবকিছু জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। কিন্তু কি আর করব নুনেভাতে সংসার চলছে কোনরকম।
বেতনের এতো বৈষম্য কেন? এমন প্রশ্নে তেমন কেউ কথা বলতে না চাইলেও মহালে কাজ করা নারী শ্রমিক আছিয়া খাতুন জানান, এই বৈষম্যই এখানকার অবধারিত নিয়ম। এর বাইরে কেউ কথা বললে রুটিরুজি হারানোর সাথে চলে নির্যাতনও। আমরা নারীদের এভাবেই সহ্য করে যেতে হবে। আমরাও একই কাজ করি। টাকা কেন অর্ধেক আমাদের!
কক্সবাজার নাজিরারটেক শুটকি মহালের ৪৩৫টি মাছ খোলায় প্রায় ১২ হাজার নারী কাজ করেন দিনমজুর হিসেবে। তবে বিষয়টি নিয়ে শুটকি মহাল গুলোর কোনো মালিকই মুখ খোলেননি। পাওয়া যায়নি কারো বক্তব্য।
কক্সবাজার পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর শাহানা আক্তার পাখি বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে বারবার বলে যাচ্ছি কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বাস্তবায়ন তো হতে হবে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের সহযোগিতা চাই। কেন একই কাজে নারীদেরকে অর্ধেক বেতন দেওয়া হবে। পুরুষদের চেয়ে তো কোন অংশে আমরা কম না। সম মর্যাদা আদায়ের জন্য আমরা কাজ করে যাব।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা মহিলা অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুব্রত বিশ্বাস বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের তেমন কিছু করার নেই। যদি কোন নারী বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দেয় তাহলে আমরা হয়তো কথা বলতে পারি। কিন্তু আমাদের শ্রম নিয়ে কিছুই করার নেই। শ্রম মন্ত্রণালয়ের শ্রম নিয়ে কাজ করে এনাদের করার এখতিয়ার আছে হয়তো।
এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। ভোর থেকে রাত খেটে যাবে নারী। হাজার বছর ধরে বৈষম্য ভাঙতেই শেষ হয় যেনো ঈশ্বরের দেয়া সমস্ত আয়ু। এমন নিষ্পেষিত যাপনে এসব নারী শ্রমিকদের যেনো কোথাও যাওয়ার নেই, কিচ্ছু করার নেই…