আব্দুর রশিদ মানিক
নারীরা এখন সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিচরণ করছে। তবে পুরুষের তুলনায় সে সংখ্যা নগণ্য। সমাজ, দেশকে এগিয়ে নিতে নারীদের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। নারী কারো মা, কারো বোন, কারো স্ত্রী আর কারো বা সহকর্মী। নারীদের অস্বীকা করে সমাজ বা জাতি তথা কোন রাষ্ট্রই হয় না। সংসারের হাল ধরতে পুরুষকে যেমন নারী সহযোগিতা করছে তেমনি পুরুষের অবর্তমানে সংসার চালাতে নারীরাও ঘামঝরা পরিশ্রম করছে। অনেক নারীই ছোট থেকে শুরু করে নিজেদের টিকে থাকার সংগ্রামের স্বাক্ষর রাখছে গ্রামে গঞ্জে, শহরে। হচ্ছে আত্মনির্ভরশীল। কক্সবাজার শহরের এমনই এক নারী মিনু দাশ। বিক্রি করছেন পূজার উপকরণ। স্বামী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। স্বামীকে তাই ঘরে রেখেই সংসারের হাল ধরেতে পূজার উপকরণ বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।
যুগে যুগে সম্পর্কের মধ্য দিয়ে নারী পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। পুরুষপ্রধান দেশে যেখানে সংসারের ঘানি থাকে পুরুষদের হাতে ঠিক সেখানে পুরুষের দুর্দিনে বা তার অবর্তমানে নারীকেই হাল ধরতে হয়েছে। স্বামীর অবর্তমানে এমনই এক সংসারের হাল ধরা নারী খুরশিদা বেগম। ৪৮ বছর বয়সে ছোট একটি টেবিলে বাত-ব্যাথা ও চর্মরোগের ঔষধ বিক্রি করছেন। সংসারের তিন কন্যা ও নিজে থাকেন কুতুবদিয়া পাড়ার ভাড়া বাসায়। ২০০১ সালে স্বামী হারানোর পর থেকে খুরশিদা বেগমই চালাচ্ছেন সংসার।
সরেজমিন গিয়ে কক্সবাজার পৌরসভার সামনে দেখা যায়, ছোট টেবিলে অল্প বাত ব্যাথার ঔষধ। কথা হলে তিনি জানান, তাঁর আয় প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। তা দিয়েই পরিবারের খরচ জোগানোর পাশাপাশি তিন কন্যার পড়াশোনার খরচ যোগাতে হয়। প্রায় ৮ বছর ধরে এই ঔষধ বিক্রির ব্যবসা করছেন তিনি। কেউ কখনো সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি। কারও প্রতি তার অভিযোগও নেই।
শুধু মিনু দাশ বা খুরশিদা বেগম নয় আরো ৪০-৫০ জন নারী পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে কাজ করছেন কক্সবাজার শহরে। এছাড়াও অসংখ্য নারী কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পান বিক্রি, পেয়ারাসহ নানা জাতের ফল বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। তাদেরও কারো স্বামী নেই, কারো সংসার ভেঙেছে এমন অসংখ্য নারী সন্তানদের পড়াশোনার খরচ যোগাতে, নিজেদের সংসারকে টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।
যাদের পরিচ্ছন্নতায় শহরের অলিগলি থাকে পরিপাটি, সেসব পরিচ্ছন্নকর্মী নারীরাও তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা জানান। একদিন কাজে না গেলে ৫ হাজার টাকা বেতনের ২০০-৩০০ টাকা কেটে নেয়। রোগ শোকে ভুগলেও তাই কাজ করে যেতে হয় নিজেদের বেঁচে থাকতে। সংগ্রাম করে যেতে হয় নিজেদের টিকে থাকার লড়াইয়ে।