টিটিএন ডেস্ক:
ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আজ মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তর থেকে গোলাবারুদ পড়া, বাংলাদেশি নিহত হওয়ায় ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত।
হাছান মাহমুদ বলেন, ভারত সফরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী, নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ রয়েছে। মিয়ানমার দুই দেশের প্রতিবেশী, তাই এ ইস্যুতে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত মোট ২২৯ জন বিজিপি বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের নিয়ে যাওয়ার জন্য আলোচনা চালাচ্ছে।
সম্প্রতি মিয়ানমারের বিভিন্ন রাজ্যে বিদ্রোহীদের আক্রমণে ক্রমাগত চাপের মুখে রয়েছে দেশটির জান্তা সরকার। বিদ্রোহীদের কাছে উত্তর-পশ্চিমের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে মিন অং হ্লাইংয়ের জান্তা বাহিনী। পশ্চিম সীমান্তে আরাকান আর্মির (এএ) হামলায় পিছু হটছে তারা। এরই মধ্যে একে একে সেখানকার সব সামরিক ঘাঁটি চলে যাচ্ছে আরাকান আর্মির দখলে।
বেসরকারি সংবাদ পরিষেবা সংস্থা রেডিও ফ্রি এশিয়া বলছে, রোববার বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমার বর্ডার গার্ড ফোর্সের আরও একটি ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায় আরাকান আর্মি। মিয়ানমারের পশ্চিম সীমান্তের এই ঘাঁটিতে পূর্ণ সামরিক শক্তি নিয়ে চালানো হয় এই হামলা।
হামলার পর পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে দৌঁড়ে পালায় বিজিপি সদস্যরা। এরই মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমারের ২২৯ জন বিজিপি।
মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। এর বড় অংশ পড়েছে বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায়। কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধ জোরাল করেছে আরাকান আর্মিসহ বিদ্রোহী কয়েকটি গোষ্ঠী। সংঘাত বাড়ার পর সবচেয়ে বেশি গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের উলুবনিয়া, তুলাতুলি, কাঞ্জরপাড়া, উখিয়ার পালংখালির আনজুমান পাড়া এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্তে। এতে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে আবার দেখা দিয়েছে উত্তেজনা, বেড়েছে অনুপ্রবেশের শঙ্কা।
এ সংঘাতের কারণে সীমান্ত এলাকায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি। এর মধ্যে গতকাল সোমবার মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া একটি গোলার আঘাতে ঘুমধুম সীমান্তে একজন বাংলাদেশি ও একজন রোহিঙ্গা নিহত হন।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সুচির সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। নির্মমভাবে দমন করা হয় বিক্ষোভকারীদের। জবাবে হাতে অস্ত্র তুলে নেয় গণতন্ত্রকামীরা। বিভিন্ন জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয় তারা। পাশাপাশি আরাকান আর্মি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স আর্মি ও ট্যাঙ্গ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি নিয়ে গঠিত থ্রি ব্রাদারহুড এলায়েন্স সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। গত তিন বছরের গৃহযুদ্ধে ৩ শর বেশি সেনা চৌকি এবং ২০টি শহর দখল করে নিয়েছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো।
২০২২ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরেও মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের প্রভাব পড়েছিল বাংলাদেশ সীমান্তে। তখনও কিছু গোলা এসে পড়ার ঘটনাও ঘটে।